৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ছাত্রলীগ নেতা

ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায়
ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায়  © সংগৃহীত

কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায় (৩০)। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে থানায় ডজনখানেক অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভুগীরা। এসব অভিযোগে শান্ত রায় ছাড়াও তার বাবা নির্মল রায়কে আসামি করা হয়েছে।

জানা যায়, শান্ত কুমার রায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায়ের ছেলে। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক। এর পাশাপাশি তিনি রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও। ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি ইসকনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন শান্ত। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পলাতক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শান্ত কুমার রায়ের বাবা নির্মল কুমার রায় পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করেন। কিন্তু শান্ত কুমার গ্রামের বাড়ি জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দিতে বসবাস করতেন। তিনি সবাইকে জানিয়েছেন, তার বাবা সোনার ব্যবসা করেন। আর নিজেকে পরিচয় দিতেন সিগারেট, সোনা ও জমির ব্যবসায়ী। তাই তার ব্যবসায় লগ্নির প্রস্তাব দিয়ে প্রথম দিকে পরিচিত ব্যবসায়ীদের আস্তা অর্জন করতে অল্প টাকায় অধিক মুনাফা দিতে শুরু করেন।

আরও পড়ুন : ‘তোরা তো ঠিকঠাক রেপও করতে পারিস না’, র‌্যাগিংয়ের সময় ছাত্রলীগ নেতা

কেউ এক লাখ টাকা দিলে তাকে সপ্তাহে ১০ হাজার টাকাসহ ফেরত দিয়েছেন। আবার কেউ ১০ লাখ টাকা দিলে এক লাখ টাকা লভ্যাংশসহ ফেরত দিয়েছেন। ব্যাংক থেকে অধিক লাভ পাওয়ায় অনেকেই লোভে পড়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ তাকে দিয়েছেন। শর্ত ছিল কাউকে এ লাভের কথা বলা যাবে না। কিন্তু ১৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে শান্ত রায়ের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বের হয়ে আসে একে একে অনেক পাওনাদার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শান্ত কুমার রায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। সেখান থেকে এ লাফে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে পেয়ে যান ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক জয়-লেখকের কমিটির উপ-সম্পাদক পদ।

ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতারা জানান, মন্ত্রী, এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে নিজেকে জাহির করতেন শান্ত। ফলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির বদলে এক লাফে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন তিনি।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ হারুত বলেন, ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি প্রার্থী ছিল শান্ত। কিন্তু তার তো কোনো কর্মীই ছিল না যারা তার সঙ্গে মিছিল-মিটিংয়ে যাবে। ফেসবুকে দেখেছি সে আওয়ামী লীগের, ছাত্রলীগের বড় বড় নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলে পোস্ট দিতো। তার পুঁজি ছিল ফেসবুক। এসবের কারণে সে এক লাফে জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদ পেয়েছে। এখন শুনি সে টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়েছে।

আরও পড়ুন: ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরলে তোমাকে হট লাগে: কলেজছাত্রীকে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, জেলা কমিটির পদ পাওয়ার আগে শান্তর সঙ্গে পরিচয় আমাদের ছিল না। তার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জেনেছি। তবে আমাদের কেউ এ বিষয়ে জানায়নি।

তিনি বলেন, কারও অপকর্মের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। তবে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নবীনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল আহমেদ বলেন, এ পর্যন্ত ১২ জন শান্তর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা অভিযোগগুলো তদন্ত করছি। পাশাপাশি তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।


সর্বশেষ সংবাদ