ডাকসু ভবনে হামলার ৩ বছর, বিচার চেয়ে ঢাবিতে প্রতিবাদ সভা

প্রতিবাদ সভা
প্রতিবাদ সভা  © টিডিসি ফটো

ডাকসু ভবনে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) হামলার ৩ বছর পূর্ণ হলেও বিচার না পাওয়ায় প্রতিবাদ সভা করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। কর্মসূচি থেকে সেই হামলায় সম্পৃক্ত ছাত্রলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সবাইকে আইন অনুযায়ী শাস্তির দাবি জানানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়েররাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

প্রতিবাদ সভায় অধিকার পরিষদের বক্তারা বলেন, ২০১৯ সালের এইদিনে ডাকসু ভবনে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ আমাদের নেতাকর্মীদের উপর নির্মমভাবে হামলা করে। এতে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরুসহ ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে ২ জন আইসিইউতে ছিল। তখন আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। মামলার হলে পুলিশ বলে ঐ সময় হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল। অথচ বিষয়টি সারা বাংলাদেশের মানুষ জানে। বিভিন্ন মিডিয়াতে এখনও ফুটেজগুলো আছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই নির্মম হামলার তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। অথচ এই হামলার এখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি।

বক্তারা আরও বলেন, আমরা যেই মামলাটা করেছিলাম। সেই মামলার কোনো অগ্রগতি নাই। এই যে বিচারহীনতা সংস্কৃতি এটা ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। গত মাসের ৭ তারিখ আবরার ফাহাদের হত্যার প্রতিবাদে এখানে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম। তখন আমাদের উপর নির্মমভাবে হামলা করে। আমরা ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার পর সেখানে আবার আরেকদফা হামলা করে। সেখানে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ছাত্রলীগ উঠিয়ে নিয়ে পুলিশের কাছে দেয়। আজকে ৩২ দিন জেলখানায় থাকার পর আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি।

ছাত্র অধিকারের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আমরা বিচারহীনতার সমাজে বাস করছি। তারই দৃষ্টান্ত উদাহরণ ২০১৯ সালে সাধারণ ছাত্রদের উপর বর্বরোচিত হামলা। ১৯৫২ সালে যেমন ছাত্র ছাত্রীরা জেগেছিলো, এদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষা ফিরিয়ে আনতে, সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে, সবার অধিকার ফিরিয়ে আনতে ছাত্রছাত্রীদের  আবার জেগে উঠতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাবিতে ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ক্যাম্পাসে লাইটিং পর্যাপ্ত নেই। তারা নাকি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে একরুমে ৩০/৪০ জন ছাত্র রেখে তারা কিভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে!  এদেশ স্বাধীন হয়েছে মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, অথচ মেহনতি মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার পাচ্ছে না। প্রশাসন দাবি করে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ অথচ এদেশের প্রতিটি মানুষের গড় ঋণ ৯৬ হাজার টাকা। এভাবে কোনো দেশ স্মার্ট হয় না। মানুষকে কথা  বলার অধিকার, রাজনীতি চর্চার অধিকার দিতে হবে। হলগুলোকে দখলমুক্ত রাখতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়া সম্ভব হবে।

হামলার ব্যাপারে তিনি  বলেন, ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে। যাকে শাস্তি না দিয়ে বরং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। প্রশাসনের উচিত এর সঠিক তদন্ত করে অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। এসময় তিনি সকল ছাত্রসংগঠনগুলোকে একত্রিত হয়ে একটি ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগঠন করে দল মত নির্বিশেষে সকল মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের চেষ্টার আহবান জানান।

ডাকসু হামলায় ভুক্তভোগী নাজমুল হাসান বলেন, আজ ২২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কলঙ্কময় দিন। সেদিন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ বর্বরোচিত হামলা করে। সেই হামলায় ৪০ জন গুরুতর আহত হয়। তাদের মধ্যে আমি একজন। সেদিন আমার মাথায় ১৩টি সেলাই লেগেছিল, আমার মেরুদণ্ডের হাড় বাকা হয়ে গিয়েছিল। ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের কিডনি ড্যামেজ হয়েছিল। 

তিনি আরও বলেন,আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে দেখেছি হামলাকারীদের এই প্রশাসন গ্রেফতার করেনি। আমরা দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলাম। তারপর উল্টো আমাদের ওপর মামলা দিয়েছে। আমরা এক বিচারহীন বাংলাদেশে বাস করছি। আমরা দাবি জানাচ্ছি হামলায় সম্পৃক্ত ছাত্রলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সকলকে আইন অনুযায়ী শাস্তির সম্মুখীন করা হোক।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্তমান ক্ষমতাসীন ছাত্রনেতাদের দ্বারা সাবেক ছাত্রনেতা ডাকসু ভিপি নূরের উপর হামলা করা হয়। হামলায় ছাত্র নেতা তুহিন ফারাবি লাইফ সাপোর্টে থাকাসহ প্রায় ৪০ জন ছাত্রছাত্রী আহত হন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence