‘ব্যাকডেট’ দিয়ে শেষবেলায় গণহারে পদ দিচ্ছে ছাত্রলীগ

  © টিডিসি ফটো

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার)। এদিন সকাল ১০টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের এই জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন।

এদিকে, জয়-লেখক কমিটির মেয়াদের একদম শেষ সময়ে এসে কোনো তালিকা ছাড়াই গণহারে পদ দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে। গত এক সপ্তাহ ধরে জাতীয় সম্মেলনের আগের দিন আজ (সোমবার) পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন করে পদ দেওয়া হয়েছে কয়েকশ নেতাকে। এর আগেও দুই দফায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে গণহারে পদ দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে গণহারে পদ দেওয়া শুরু হয়। সেসময় সমালোচনার মুখে নতুন করে পদ দেওয়া বন্ধ রেখেছিল ছাত্রলীগ।

এদিকে, ৩০তম জাতীয় সম্মেলননের আগে গত সপ্তাহ থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন করে পদ দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে পদ পাওয়া নেতারা সংগঠনের সভাপতি/সম্পাদকের স্বাক্ষরিত প্যাড সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশ করে নিজেদের জাহির করছেন। অনেকে আবার তাদের ‘অভিনন্দন’ জানিয়ে পোস্ট করছেন।

শেষ মূহুর্তে এভাবে গণহারে পদ দেওয়ায় ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতা। তাদের মতে, যেই ছেলে মাঠ পর্যায়ে নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। তাকে সরাসরি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদায়ন করা হচ্ছে। এভাবে গণহারে পদ দেওয়া হলে ভিন্নমতের লোকেরা সংগঠনের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করতে পারে।

গত এক সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে কতজনকে নতুন করে পদায়ন করা হয়েছে, সে হিসেব কেন্দ্রীয় দপ্তর সেল দিতে পারেনি। এ বিষয়ে দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি বলেন, এ সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা নেই এবং কোনো মন্তব্য নেই। সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেন।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

পদ পাওয়া একাধিক নেতা জানান, সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে দপ্তর সেল থেকে ছাত্রলীগের প্যাডে এসব পদ দেওয়া হচ্ছে। তবে সব প্যাডে ‘ব্যাকডেট’ (৩১-০৭-২০২২ইং) দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সংগঠনের সভাপতি/সম্পাদকের স্বাক্ষরিত প্যাড দপ্তর সেলে জমা দেওয়া হয়। সেখান থেকে পদ পাওয়া নেতার নাম বসিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিতরণ করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মূল প্যাড দপ্তর সেলে জমা রেখে ফটোকপি বিতরণ করা হচ্ছে। জয়-লেখক নিজেদের সেফ রাখার জন্য ‘ব্যাকডেট’ দিয়ে এসব পদ দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

গণহারে পদ দেওয়া বিষয়ে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ জানান, এটা তো গঠনতন্ত্র বহির্ভূত ও আদর্শের পরিপন্থী কাজ। এভাবে নিঃসন্দেহে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। যেই ছেলে মাঠ পর্যায়ে নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না তাকে সরাসরি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদায়ন করা হচ্ছে। এভাবে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটে এবং ভিন্নমতের লোকেরা ভিতরে ঢুকে ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করে।

তিনি আরও জানান, আমি মনে করি ছাত্রলীগের ওয়েবসাইটে কেন্দ্রীয় কমিটির সবার ডাটা থাকা দরকার। কিন্তু দেখা গেছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কাদেরকে নেতা বানালাম সেই তথ্য আমাদের কাছে নাই। এটি কী কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? ছাত্রলীগে কতজন পদায়ন হয়েছে, সে তথ্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জানে না, দপ্তর সম্পাদক জানে না। এদিকে আমরা কেন্দ্রীয় নির্বাহীর কেউ জানি না। এটা ছাত্রলীগের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক এবং সংগঠনের ভাবমূর্তি ম্লান করে।


সর্বশেষ সংবাদ