পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার দোকানও সামলান নবম শ্রেণির তানজিলা

বাবার দোকানে ফুচকা তৈরিতে ব্যস্ত তানজিলা সাথী
বাবার দোকানে ফুচকা তৈরিতে ব্যস্ত তানজিলা সাথী  © টিডিসি ফটো

ভোলার লালমোহন কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তানজিলা সাথী। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি মেজো। বড় বোনের বিয়ে হওয়ায় শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। ছোট দুই ভাই-বোনকে নিয়ে বাব-মায়ের সঙ্গে থাকেন তিনি। তার বাবার ছোট একটি চটপটি-ফুচকার দোকানের আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার। তাই ৭ বছর বয়স থেকেই ফুচকা-চটপটির দোকানে বাবাকে সহযোগিতা করে আসছেন তিনি। বাবা অসুস্থ থাকলে তানজিলা একাই সামলান দোকান।

গত বেশ কয়েক বছর ধরেই পড়াশোনার পাশাপাশি এভাবেই বাবার কাজে সহযোগিতা করছেন ভোলার লালমোহন পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের চরছকিনা এলাকার খজ্জু হাওলাদার বাড়ীর মো. আবুল কালামের মেয়ে তানজিলা সাথী। ৩ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তানজিলা মেজো। তার বাবার ফুচকার দোকান লালমোহন সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল পার্কের মধ্যে। তার ছোট দুই ভাই-বোন মায়ের সঙ্গে বাড়িতেই থাকে।

স্কুল শিক্ষার্থী তানজিলা বলেন, গত সাত বছর ধরে বাবার দোকানে সহযোগিতা করার পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন সকালে এসে দোকান খুলি। সকাল ৯টার দিকে স্কুলে চলে যাই। দুপুর ২টায় স্কুল ছুটি হওয়ার পর বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে আবার দোকানে চলে আসি। এসেই কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, নুডলস তৈরি করি। এ ছাড়া দোকানের যাবতীয় কাজ আমি একাই সামলাই।

তানজিলা জানান, যখন পার্কে কোনো অনুষ্ঠান হয় তখন কাস্টমারের অনেক ভীর থাকে। বেচাকেনাও ভালো হয়। অন্য দিনগুলোতে বেচাকেনা কম হয়। দোকান থেকে যে আয় হয়, তা থেকেই চলে তানজিলার লেখাপড়া ও তাদের সংসারের খরচ।

দোকানে যখন কাস্টমার না থাকলে সেই ফাঁকা সময়টুকু কাজে লাগান তানজিলা। বসে না থেকে সে সময় করেন পড়াশোনা। তানজিলা বলেন, পড়ালেখা শেষে একটি ভালো চাকরি করে বাব-মায়ের দুঃখ মোচন করবো।

তানজিলার বাবা মো. আবুল কালাম বলেন, ছোট থেকেই তানজিলা আমার ফুচকার দোকানে আমাকে সহযোগিতা করছেন। দোকানে কর্মচারী রাখতে পারছি না বলে মেয়েকে দিয়েই দোকান পরিচালনা করছি। পাশাপাশি মেয়ে পড়ালেখা করছে। এই বছর সে লালমোহন কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছে। আগামী বছর দশম শ্রেণিতে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, আমার ৩ মেয়ে ১ ছেলে। সবার ছোট ছেলে। এই দোকানের আয় দিয়েই আমার পুরো সংসার চলে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। আমি এখন অনেক অসুস্থ। টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারছি না। মাঝেমধ্যে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে মেয়ে একাই দোকান পরিচালনা করে। আমি পার্কের ফুটপাতে দোকান করছি। আমার স্থায়ী একটি দোকান হলে ভালো হতো।

ফুচকা খেতে আসা ঝরণা, আমেনা, মিমি, আরজু, ইকবালসহ কয়েকজন জানান, তানজিলার হাতের ফুচকা অনেক ভালো। তারা পার্কে আসলেই সাথীর হাতের ফুচকা খান। পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার দোকানেও কাজ করে পরিবারকে সহযোগিতা করছে এটা অনেকের জন্য অনুপ্রেরণার। আমরা সাথীর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনামিকা নজরুল বলেন, ওই শিক্ষার্থীর পড়ালেখার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষার্থী সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হোক।


সর্বশেষ সংবাদ