সার্বিয়ার বিপক্ষে সতর্ক ব্রাজিল, যে কৌশলে খেলতে চান নেইমাররা
- টিডিসি স্পোর্টস
- প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৩:০৪ PM , আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৩:০৪ PM
কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। হতাশার চাদর সরিয়ে আরও একবার নেইমারের হাতে স্বপ্নের মশাল তুলে দিয়ে কাতার বিশ্বকাপে পরম আরাধ্য ‘হেক্সা’ (ষষ্ঠ শিরোপা) জয়ের অভিযাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ব্রাজিল। ফিফা র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকলেও সার্বিয়াকে নিয়ে সতর্ক ব্রাজিল। ফর্ম ও স্কোয়াডের গভীরতার কারণে ব্রাজিলকে এবার শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার ভাবা হচ্ছে। অঘটনের আশায় প্রথম ম্যাচে রক্ষণাত্মক কৌশল বেছে নিতে পারে সার্বিয়া।
দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় সার্বিয়ার মুখোমুখি হবে রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
হেক্সা মিশনের স্বপ্নে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে মিডফিল্ড এবং ডিফেন্সের দূর্বলতা। ফ্রেড, ফ্যাবিনহোদের নিয়ে সাজানো ব্রাজিলের মিড এবং দানি আলভেজ, ব্রেমারদের নিয়ে সাজানো ডিফেন্সে কাউন্টার এ্যাটাকে গোল খাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
এবারের ইউরোপীয়ান জুজুতে আটকা পরার একটা ভয় কাজ করতে থাকে ব্রাজিলিয়ানদের মনে। এবারের বিশ্বকাপে বড় বড় দলগুলোর অঘটন দেখেও ব্রাজিল ভক্তদের কপালে চিন্তার ভাজ পরতে পারে।
ব্রাজিলের আ্যাটাকিং লাইন নিয়ে কোচ তিতেকে অবশ্য খুব বেশি ভাবতে হচ্ছে না। হেক্সা মিশনে আসা এবারের ব্রাজিল দল যে দারুণভাবে তারকাসমৃদ্ধ। দলে আছেন নেইমার, রাফিনহা, রিচার্লিসন, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রদ্রিগো, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লি, এন্টনি ও পেদ্রো-র মতো পরিচিত মুখ।
সংবাদ সম্মেলনে আসা রাফিনিয়াও বললেন, আক্রমণই হবে তাদের শেষ কথা, ‘ডিএনএ’র কারণেই আমরা আক্রমণাত্মক দল। আক্রমণভাগে যত বেশি খেলোয়াড় থাকে, ততই ভালো।
তবে সবকিছুই দূর করা সম্ভব ব্রাজিলের এ্যাটাকিং লাইনআপ ভালো করলে। আর সবচেয়ে বড় দায়িত্বটা থাকবে নেইমার জুনিয়রের কাঁধে। এই সিজনে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন নেইমার। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই বছর করেছেন ১৫ গোল এবং ১২ এসিস্ট। এছাড়া আরেকটা দারুণ রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছে নেইমারকে। আর মাত্র দু’গোল করলেই ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলের ৭৭ গোলের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন নেইমার। ব্রাজিলের হয়ে নেইমারের বর্তমান গোল ৭৫টি।
আরও পড়ুন: আজ মাঠে নামবেন নেইমার-রোনালদো-সুয়ারেজরা
আরো দু’জন অ্যাটাকার রিচার্লিসন এবং ভিনিসিয়াস জুনিয়রও আছেন দারুণ ছন্দে। তিনজন একসাথে জ্বলে উঠতে পারলে যেকোনো দলের জন্যই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন তারা।
ইউরোপীয়ান আসরের কৃতিত্ব এখন বৈশ্বিক সর্বোচ্চ মঞ্চে প্রমান করাই স্টোকোভিচের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ। এর আগে কখনই ব্রাজিলের মত টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট দলের বিপক্ষে বিশ্বকাপ শুরু করেনি সার্বিয়া। যে কারনে ম্যাচের আগে মানসিক ভাবে চাঙ্গা থাকাটাও দলের জন্য এই মুহূর্তে খুবই জরুরী।
সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে শেষ ৯টি ম্যাচের সাতটিতেই পরাজিত হয়েছে সার্বিয়া। ইউরোপের কোন দেশ হিসেবে এটাই সর্বোচ্চ পরাজয়। এবারের বিশ্বকাপে খেলতে আসা দলগুলোর মধ্যে আট পরাজয়ে একমাত্র অস্ট্রেলিয়া তাদের থেকে এগিয়ে আছে।
এবারের বিশ্বকাপকে অঘটনের বিশ্বকাপ বললেও ভুল হবে না। সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার ও জাপানের কাছে জার্মানির হারের পর ভক্তদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ম্যাচটি।
ব্রাজিল সমর্থকেরা যেমন দলের জয় চাইছে, তেমনি আর্জেন্টিনা ও জার্মানির সমর্থকরাও মনে-প্রাণে ব্রাজিলের পরাজয় কামনা করছেন। এই লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা যেমন হেরেছিল, তেমনি ব্রাজিলের পরাজয় চাইছেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি আর্জেন্টাইন ভক্ত।
তাছাড়া ইতিহাস, ঐতিহ্য, পরিসংখ্যান, শক্তিমত্তা বিচারে স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে ব্রাজিল। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় দু’দলই রয়েছে দারুণ অবস্থানে। সার্বিয়া সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের একটিতে ড্র করলেও ব্রাজিল অপরাজিত আছে সবগুলো ম্যাচেই, কোনো ম্যাচে ড্র-ও করেনি। র্যাঙ্কিংয়েও সার্বিয়া রয়েছে ২১তম অবস্থানে, অন্যদিকে ব্রাজিল ফিফা র্যাঙ্কিং-এর শীর্ষে থেকেই বিশ্বকাপে এসেছে!
এর আগে দু’বার মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল ও সার্বিয়া। দু’বারই জিতেছে ব্রাজিল। তবে ফুটবলে কথা ইতিহাস বলে না, কথা বলে মাঠের খেলা। আগের রেকর্ড ভেঙে সার্বিয়া নতুন ইতিহাস গড়তে পারে কি না, এখন সেটিই দেখার বিষয়।