ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে বাংলাদেশে এত উন্মাদনা কেন?

  © সংগৃহীত

ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে যেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। বিশ্বের অন্য কোন দেশে কি এমনটা দেখা যায়? চার বছরপর বিশ্বকাপ এলেই ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬০ বর্গ কিলোমিটারের দেশটিকে খুব সহজেই আলাদা করে ফেলা যায়।

যার এক অংশ ব্রাজিল, আরেকটি আবার ভেসে উঠে আর্জেন্টিনার সমর্থনের জোয়ারে। বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের সেই উন্মাদনার খবরই তুলে ধরা হয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে।

ঢাকা থেকে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওর দূরত্ব ৯ হাজার ৬৯৯ মাইল (১৫ হাজার ২৮৮ কিলোমিটার)। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেস এর থেকেও প্রায় এক হাজার মাইল দূরে (১০ হাজার ৩৯ মাইল)। তারপরও বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সম্পর্কটা যেন আত্মার। আর আত্মার সম্পর্ক দুরত্ব দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। সেই দেশটিতে কিনা ক্রিকেট আবার ফুটবলের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়।  

যদিও ফুটবল বিশ্বকাপের সময় ক্রিকেট পাত্তাই পায় না বলা যায়।  যেখানেই চোখ যাবে সেখানেই বাড়ির ছাদ বা বারান্দায় টানানো থাকবে প্রিয় দলের পতাকা। শুধু তা-ই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার প্রতিদ্বন্দ্বীতা নিয়ে তর্ক থেকে শুরু করে মারামারিতে পর্যন্ত চলে যান। যেমন ২০১৪ বিশ্বকাপের সময় দুই দলের সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত হন ১১ জন।  

বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে এক ব্রাজিল সমর্থক দাবি করেন ১৯৮৬ বিশ্বকাপে দিয়েগো ম্যারাডোনার 'হ্যান্ড অব গোল' ছিল বেআইনি। ব্যস্ত তাতেই তর্কের শুরু এবং  পরে হাতাহাতিতে লিপ্ত হন তারা।  

শুধু তা-ই নয়, পুলিশের বাধার মুখে পড়ে ২০২১ কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল বড় পর্দায় দেখতে পারেননি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেকেই। কারণ সেমিফাইনালে ব্রাজিল ম্যাচের পর সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এমন খবরও তুলে আনে ওয়াশিংটন পোস্ট।

ঢাকায় বসবাস করা আকিদ কাদের চৌধুরী ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, 'যদি এক শব্দে এর (ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার উন্মাদনা) ব্যাখ্যা করি। তাহলে বলবো এটা স্রেফ পাগলামি। ১৯৯০ বিশ্বকাপে আমার বাবা তার বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনসহ প্রায় ৫০ জনকে নিয়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচটি উপভোগ করেন। তখন আমার বয়স ১০। হাজারো মাইল দূরের দুটি দেশ আমাদের পরিবারে এমন প্রভাব ফেলবে তা হজম করতে বেশ কঠিন লাগছিল আমার। আনন্দ, উচ্ছ্বাস, কান্না সবকিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম তখন। '

কাদের নিজেও একজন ব্রাজিল সমর্থক। কিন্তু তার মা আতিয়া এর বিপরীত। শেষ ষোলোর সেই ম্যাচে ম্যারাডোনার দুর্দান্ত গোলে ব্রাজিলকে হারানোর পর আতিয়ার উন্মাদনা কে দেখে। কাদের বলেন, '৩২ বছর আগের ঘটনা আমার মনে রাখা উচিত নয়। কিন্তু সেই স্মৃতি আমার হৃদয়ে বেশ গভীরভাবে গাঁথা। কারণ ১০ বছর বয়সে, এই দুই দলের জন্য আংকেল-আন্টিদের লাফালাফি করতে দেখি এবং এর কোনোটাই তাদের নিজের দেশ নয়। ' 

আর্জেন্টিনা সমর্থক নোফেল ওয়াহিদ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, 'জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ একটি বড় দেশ। ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশকে আপনি সহজেই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সমর্থকদের ভিত্তিতে আলাদা করতে পারবেন। মজার বিষয় তাই না? আজগুবি মনে হচ্ছে? এশিয়ার একটি দেশ যারা কিনা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত, তারা কেন এই প্রতিদ্বন্দ্বীতা নিয়ে এতটা মেতে উঠবে? এটা বোঝানো বেশ কঠিন। '

ওয়াহিদের মতো, অন্যান্যদেরও হয়তো একই মত। এটা স্রেফ অনুধাবন করা যায়। আশির দশকে শুরু হওয়া সেই উন্মাদনা এখন ছড়িয়ে পড়ছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বকাপের পর বিশ্বকাপে। কিন্তু এই উন্মাদনার মাঝেই অবশ্য সুপ্তভাবে লুকিয়ে আছে হাহাকার। কেননা ফুটবলের প্রতি এত আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব ফুটবল র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২তম। 


সর্বশেষ সংবাদ