এসএসসিতে অকৃতকার্যদের নিয়ে ঢাকায় ‘চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী সম্মেলন’

চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী সম্মেলন
চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী সম্মেলন  © টিডিসি ফটো

গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজনে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিনব্যাপী ‘চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১১ জুন) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সকালের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপার্সন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। 

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক সচিব এন আই খান, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ড. জাফর ইকবাল, বিশিষ্ট সংস্কৃতিজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও যুবসংগঠন)।

এছাড়াও বক্তব্য শেষে বাঁশি বাজিয়ে এবং সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেছেন সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী ও সহ-সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা মল্লিক।

মধ্যাহ্নভোজের পর দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, এম এ মান্নান এমপি, আরমা দত্ত এমপি। বক্তব্য শেষে শিক্ষার্থীদের এভারেস্ট বিজয়ের সাফল্য ও ব্যর্থতার গল্প শোনান এভারেস্ট বিজয়ী এম এ মুহিত এবং অনুপ্রেরণাদায়ক সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী নকীব খান ও ফাহমিদা নবী। দ্বিতীয় অধিবেশনে সহ-সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট উপস্থাপিকা শাকিলা মতিন মৃদুলা। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে ৪২টি জেলা থেকে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও এনজিও কর্মী অংশগ্রহণ করেন।

এই সম্মেলনে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নতুনহাট শফিউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিপ্রা রানী সম্মেলনের প্রস্তাবিত সুপারিশ উপস্থাপন করে। সুপারিশগুলো হলো-পরীক্ষার পূর্বে প্রস্তুতিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; ফলাফল প্রকাশের পরপরই অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ভিত্তিক অনুপ্রেরণামূলক কাউন্সেলিং সভা আয়োজন করা; অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা/প্রশিক্ষণের সাথে যুক্ত হওয়ার পরিবেশ সুযোগ সৃষ্টি করা; শিক্ষাব্যয় কমিয়ে এনে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা চালু ও শিক্ষায় সাম্যতা প্রতিষ্ঠা করা; বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা। কোনো পদ খালি না রাখা। এজন্য নিয়োগযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রস্তুত করা; এনটিআরসিএ-এর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান/ত্বরান্বিত করা। সকল শিক্ষকদের চাকুরি সরকারীকরণ করা; মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী/আদিবাসী জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ করা; শতভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি প্রদান করতে হবে। ন্যূনতম ৫০০ টাকা পর্যায়ক্রমে ১০০০ টাকা হওয়া উচিত; সকল বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি বেশি মনোযোগ ও গুরুত্ব দিতে হবে; সকল বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা; বিদ্যালয় মনিটরিং শক্তিশালী করতে হবে; বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নতুনত্ব ও শক্তিশালী করতে হবে; অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ট্রেডভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। তাদের আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রমের আওতায় আনা প্রয়োজন; অকৃতকার্যরা যাতে ঝরে না পড়ে বিশেষ করে শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহ রোধে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে।

সভায় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। ১০ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে (কারিগরি বাদে) তিন লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এসএসসিতে অকৃতকার্য হয়েছে, ৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীও উত্তীর্ণ হতে পারেনি। দুঃখজনকভাবে ফল প্রকাশের পর ৮ জন আত্মহননের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত অথবা সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের সন্তান। এদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাও কম নয়। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থীকেই পরিবার ও সমাজের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। তারা প্রায়শ হীনমন্যতায় ভোগে ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়ে থাকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মহননের পথও বেছে নেয়। নিঃসন্দেহে এ পরিস্থিতি দুর্ভাগ্যজনক এবং কোনো সচেতন নাগরিকের পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টকর।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার এসএসসি ফল প্রকাশের সময় বলেছেন, ‘যারা ফেল করেছে, তাদের বকাঝকা করা যাবে না। জীবনে এমন সময় একবার আসতেই পারে। তাদের সমস্যা খুঁজে বের করে পড়াশোনায় মনোযোগী করতে হবে। পড়ার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতি সম্মান জানিয়েই আমাদের এই আয়োজন। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থীকেই পরিবার ও সমাজের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। তারা প্রায়শ হীন্মন্যতায় ভোগে ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়ে থাকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মহননের পথও বেছে নেয়। এ পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক এবং কোনো সচেতন নাগরিকের পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টকর।”

সভায় বক্তারা আরও বলেন, পরীক্ষার ফলাফল শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বা প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে না।এজন্য পরিবার, সমাজ, বিদ্যালয়, বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা, ব্যবস্থাপনাও দায়ী। শিক্ষা পরিবারের কর্মী হিসেবে আমরাও এ দায় এড়াতে পারি না। তবে সম্প্রতি অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের এইচএসসিতে ভর্তির সুযোগ রাখার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence