এসএসসির প্রশ্নফাঁস: আতঙ্কে পৌনে ২ লাখ শিক্ষার্থী

এসএসসি পরীক্ষার্থী
এসএসসি পরীক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

দিনাজপুর বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে প্রায় পৌনে ২ লাখ শিক্ষার্থী। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় তাদের পরীক্ষার সূচিতে বিঘ্ন ঘটেছে। এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছে উত্তরের আট জেলার শিক্ষার্থীরা। চলমান মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ছয় বিষয়ের প্রশ্নফাঁস হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়েই তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। সেই সঙ্গে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরাও।

তবে এক জেলায় প্রশ্নফাঁস হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন সব শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা। থানার লকার থেকে প্রশ্ন বিতরণে বিশেষ ক্যাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রশ্ন বিতরণ ও কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে কেন্দ্র সচিব চাইলেও পরীক্ষার আগে কোনোভাবে ফয়েল পেপারে মোড়ানো প্রশ্নের প্যাকেট খুলতে পারবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও জোরদার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

তবে বোর্ডভেদে আলাদা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয় বলে দেশের অন্য বোর্ডের পরীক্ষা যথাসময়ে হচ্ছে। তবে অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীদের ওপরও প্রশ্নফাঁসের প্রভাব পড়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁও শেরেবাংলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মুসফিকান সামিহা মুরচ্ছনা বলে, নিয়মিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও কখন প্রশ্নফাঁস হয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে। প্রশ্নফাঁসের কারণে পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। নতুন করে আবার প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে করে ভালো রেজাল্ট করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন এই পরীক্ষার্থী।

তিনি বলে, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে প্রশ্নফাঁস হওয়ায় আমাদের গণিত পরীক্ষার প্রশ্নের সেট পরিবর্তন করা হয়। নতুন সেটের প্রশ্ন সমাধান করতে অনেক সময় লেগেছে। অনেকে ভালো প্রস্তুতি নিয়েও ভালো পরীক্ষা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ করে এই শিক্ষার্থী।

মিরপুর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী হাবিবা ফারাহা বলে, প্রশ্নফাঁস হলে সিলেবাস পরিবর্তন করা হয়। কলেজ ভর্তিও পিছিয়ে যাবে। এতে করে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হবে। সিলেবাস পরিবর্তন হলে নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হয়, সে কারণে ভালো ফলাফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাে কথাও জানায় হাবিবা।

মোহাম্মদপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোকারম হোসেন বলেন, শিক্ষাকতা পেশায় এখন মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসছেন না। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে হাফ-ফুল টাইম শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। মেধাবীরা এ অর্থ দিয়ে এ পেশায় আসতে চান না। অযোগ্যরা অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পেয়ে কোচিং বাণিজ্যের প্রতি বেশি মনোযোগী হচ্ছেন।

তিনি বলেন, এক শ্রেণির শিক্ষার্থী-অভিভাবক আছেন যারা শিক্ষকের কাছে পড়ার চাইতে সংশ্লিপ্ত সিলেবাস ও সাজেশন নিতে চান। তাই যে শিক্ষক যতভালো সাজেশন ও মডেল প্রশ্ন তৈরি করে কমন ফেলতে পারবেন, তারা ততবেশি সুনাম অর্জন করে থাকেন। এ কারণে শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট জানান, দেশে ২০১৯ সালের আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠা একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। ওই সময় কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যার মধ্যে ছিল পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে প্রশ্নপত্রের ‘সেট’ (যে প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে) জানানো, দায়িত্বপ্রাপ্তদের মুঠোফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, ইন্টারনেটের গতি কমানো ইত্যাদি।

শিক্ষা প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানোর পর সবাই নড়েচড়ে বসে। একপর্যায়ে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলাম, বোর্ড সচিব মো. জহির উদ্দিন কুড়িগ্রামে যান। তারা কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলামকে নিয়ে ভূরুঙ্গামারী গিয়ে থানায় রাখা প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের সংখ্যা যাচাই করে জানতে পারেন সেখানে পরবর্তী পরীক্ষার কিছু প্রশ্ন নেই।

এ বছর সাধারণ নয়টি ও কারিগরি-মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারাদেশে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। সরকারি মুদ্রণালয় (বিজি প্রেস) থেকে প্রশ্নপত্র ছাপানোর পর তা জেলায় পাঠানো হয়। সেগুলো থাকে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে (ট্রেজারিতে)। সাধারণত পরীক্ষা শুরুর তিনদিন আগে জেলা সদরের প্রশ্নপত্রগুলো জেলা প্রশাসনের কাছে রেখে বাকিগুলো সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। উপজেলায় প্রশ্নপত্র সংরক্ষণ করা হয় সাধারণত থানায়। এরপর নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রওয়ারি প্রশ্নপত্রগুলো ঠিকমতো এলো কি না, তা একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে কেন্দ্রসচিব ও একজন পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই (সর্টিং) করা হয়। বাছাইয়ের পর আবার প্যাকেটে (মোড়ক) ভরে প্রশ্নপত্র সেখানেই রাখা হয়।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এবার সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসিত সিলেবাসে ৩ ঘণ্টার পরিবর্তে ২ ঘণ্টা পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে তত্ত্বীয় পরীক্ষা। এরপর ১০-১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষার আয়োজন করা হবে।

প্রতি বছর সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা হয়। কিন্তু করোনার কারণে পেছানো হয় পরীক্ষা। এরপর ১৯ জুন পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও সিলেটসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কারণে তা আবারও পিছিয়ে যায়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence