হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হাতছানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইমরানের

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন ঢাবি ছাত্র ইমরান
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন ঢাবি ছাত্র ইমরান  © সংগৃহীত

আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য অ্যাস্পায়ার লিডারস প্রোগ্রামের (The Aspire Leaders Program) ২০২৪ সালের তৃতীয় কোহর্টে নির্বাচিত হয়েছেন উপকূলের কয়রা উপজেলার জলবায়ু কর্মী ইমরান হোসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যায়নরত আছেন।

ইমরান হোসেনের বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলার কাটমারচর গ্রামে। তার বাবা শেখ আমিরুল ইসলাম এবং মাতার নাম লুৎফুন্নেছা। তিনি কয়রার বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুল থেকে জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে এসএসসি এবং জিপিএ ৫.০০ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন ইমরান। 

উপকূলের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসার পরেও তিনি নিজের কমিউনিটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় উপকূলের নারী ও তরুণ তরুণীদের সক্ষমতা গড়ে তুলতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

এছাড়াও উপকূলে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও শিশু শিক্ষার প্রসারে তিনি কাজ করছেন। ইতোমধ্যে ইমরান হোসেন কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-সিডিও নামের একটি স্বেচ্ছাসেবা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। উপকূলে শিশুদের জন্য হাজত খালি শিশু নিকেতন নামের একটি স্কুলও পরিচালনা করে যাচ্ছেন।

এছাড়া তিনি ব্র্যাক, ইউএসএইড, ইউনিসেফসহ কয়েকটি সংস্থায় তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অ্যাথলেট হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে।

দ্য অ্যাস্পায়ার লিডারস প্রোগ্রামটি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের অধ্যাপকদের একটি প্রোগ্রাম যা বিশ্বব্যাপী সুবিধাবঞ্চিত যুবকদের জীবন পরিবর্তন ও তাঁদের সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করতে সক্ষম। 

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ অর্থায়ন করা নেতৃত্বের এ প্রোগ্রামটি ১৪ সপ্তাহের। প্রোগ্রামটির নীতিমালা অনুযায়ী, ইমরান হোসেন সম্পূর্ণ অনলাইনে এস্পায়ার গ্রাজুয়েট হতে পারবেন। এছাড়াও প্রোগ্রামটির অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে, বিশ্বের অন্য অ্যাস্পায়ার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযোগ তৈরির সুযোগ।

বিশ্বমানের একাডেমিক ও ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগ, হার্ভার্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাস, উচ্চশিক্ষার জন্য আর্থিক অনুদান, বিশ্বজুড়ে মেধাবী তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ, আইডিয়া বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন, ব্যবহারিক দক্ষতা-নির্মাণ কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ ইত্যাদি। 

ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমার জীবনের একটাই স্বপ্ন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্বকে একজন তরুণ হিসেবে আমার পক্ষ থেকে সেরাটা দিতে চাই। এজন্য তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তোলা আমার অন্যতম প্রচেষ্টার জায়গা। আমি মনে করি আমাদের মতো তরুণরা এগিয়ে আসলে খুব শীঘ্রই আমাদের বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ হয়ে উঠবে।’ 

যারা এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘এ প্রোগ্রামটি মূলত যেসব তরুণ তাদের নিজ সম্প্রদায়ের অগ্রগতিতে কাজ করছেন, তাদের উন্নয়নের জন্য ডিজাইন করা। আমার পরিবারের চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা থাকা সত্ত্বেও আমার চারপাশের মানুষদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি ভাবতাম। শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, বরং সমাধান মুখী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। এ প্লাটফর্ম থেকে তরুণরা বৈশ্বিক নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে নিজেদের অনেক বেশি আলোকিত করার সুযোগ পায়। পরবর্তীতে তারা আরো ইফেক্টিভ উপায়ে নিজের সম্প্রদায়ের জন্য অবদান রাখতে পারে।’

‘তরুণদের তাদের কমিউনিটির জন্য বেশি বেশি কাজ করার নিয়ত থাকতে হবে। এছাড়া এসপায়ার্স লিডার্স প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে মাঝে মাঝে খোঁজ রাখতে হবে প্রোগ্রামগুলো সম্পর্কে ও কখন সার্কুলার দেয় এই বিষয়ে। তাছাড়া এই প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে আগে থেকেই ইন্টারেস্ট ফর্ম পূরণ করলে তারাই সার্কুলেশন ফর্মটি পাঠিয়ে দেয়। এজন্য আগ্রহীরা ইন্টারেস্ট ফরম পূরণ করতে পারেন।’, যোগ করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ