উচ্চশিক্ষায় অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যেমন প্রস্তুতি দরকার
- আফরিন সুলতানা শোভা
- প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০৩ PM , আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৬ PM
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া। দেশটিতে বৃত্তির নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। জীবনযাত্রার মান কিংবা শিক্ষাব্যবস্থার মান, যাই বলা হোক না কেন বিশ্বের সেরা দশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অবশ্যই জায়গা পাবে। সরকারি-বেসরকারি এসব শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন।
দেশটির ক্যানবেরা, মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড, পার্থ শহরে রয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পড়াশোনার মধ্য কাজের সুযোগসহ নানা সুবিধার কারণে দেশটিতে বৃত্তি নিয়ে অনেকেই পড়তে যেতে চান। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়ার ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ।
পাশাপাশি দেশটিতে পড়াশোনার সঙ্গে আছে খণ্ডকালীন (পার্ট টাইম) কাজের সুযোগ। তাইতো বিশ্বজুড়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বর্গ বলা যেতে পারে অস্ট্রেলিয়াকে। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা এবং জীবন যাত্রা উচ্চ মানের জন্য অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় এখানকার উচ্চশিক্ষা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হলেও এখানে পড়াশোনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের স্কলারশিপ।
অন্যান্য দেশের মতোই অস্ট্রেলিয়াতে আপনি কোথায় পড়তে চান, কোন বিশ্ববিদ্যালয় আপনার জন্য উপযুক্ত হবে, তা আগে ঠিক করতে হবে। বিভিন্ন কোর্সে বা বিষয়ে পড়ার জন্য আলাদা শর্ত থাকে। তবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সার্টিফিকেট অবশ্যই থাকতে হবে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে স্নাতক পর্যায়ে একটি ডিগ্রি থাকতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ বা চ্যালেঞ্জগুলো কী? অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রশ্নের উত্তর মিলবে এখানে।
* যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে চান, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ভর্তিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও খরচ তারাই সরবরাহ করবে। সব নিয়ম মেনে আবেদন করা হলে সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। আপনি ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটি লেটার অব অফার এবং একটি অ্যাক্সেপটেন্স ফর্ম দেবে। এর পরবর্তী ধাপ হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করা।
* অস্ট্রেলিয়াতে শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদনের জন্য আপনার অবশ্যই বৈধ কনফার্মেশন অব এনরোলমেন্ট বা ভর্তির নিশ্চয়তাসম্বলিত নথি থাকতে হবে। আপনার কোর্স শুরু হওয়ার অন্তত আট সপ্তাহ আগে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। অনলাইনে ভিসা আবেদন করতে হবে।
* শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সার্টিফিকেট দরকার হবে। সেগুলো ইংরেজি না হলে অনুবাদ করে নোটারি করে নিতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে অনুবাদ করা অনুলিপির সঙ্গে আসল সার্টিফিকেটের অনুলিপিও দিতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের পয়লা অক্টোবর থেকে শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদনের সময় যে পরিমাণ তহবিল দেখাতে হয়, তা বাড়বে।
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ সুবিধা
১. স্নাতকের জন্য কি অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করা যায়?
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েই অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের জন্য আবেদন করা যায়। অস্ট্রেলিয়ার সব বিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতকের সুযোগ আছে, তবে সব বিষয়ে পড়ার সুযোগ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ভর্তির সব তথ্য পাওয়া যাবে। উচ্চমাধ্যমিকে ৬৫ শতাংশ নম্বর, আইইএলটিএস স্কোর অন্তত ৬ দশমিক ৫ নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে পারছেন।
২. বৃত্তির সুযোগ কেমন আছে?
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে বৃত্তির নানা সুযোগ আছে। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে কীটতত্ত্বে পিএইচডি করছেন শোভন সরকার। তিনি বলেন, মাস্টার্স ও পিএইচডিতে বৃত্তির সুযোগ আছে অনেক। স্নাতক ও মাস্টার্সের ক্ষেত্রে টিউশন ফির ওপর ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃত্তি পাওয়া যায়। ভর্তি ও বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোর ও প্রাতিষ্ঠানিক ফল বিশেষ গুরুত্ব পায়। স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস দেয় সে দেশের সরকার। এ বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থী আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া, পড়াশোনার যাবতীয় খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচসহ গবেষণা এবং বইপত্রের জন্য অর্থ পান। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক তহবিল দেয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপসহ বিভিন্ন সরকারি বৃত্তির মাধ্যমেও পড়ার সুযোগ আছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় উচ্চতর শিক্ষায় ফেলোশিপ দেওয়ার জন্য আবেদন আহ্বান করে। বিস্তারিত: pmfellowship.pmo.gov.bd
৩. সরকারি বৃত্তির জন্য কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?
অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডসের জন্য কাজের অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বগুণ ও বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রার্থীর সম্ভাব্য ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজের অভিজ্ঞতায় কিছুটা রকমফের হচ্ছে। প্রতিবছর অনলাইনে এই বৃত্তির আবেদন গ্রহণ করা হয়। আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যাবে australiaawardsbangladesh.org ওয়েবসাইট থেকে। আইইএলটিএস স্কোরসহ সিভি, নিজের পড়াশোনা ও গবেষণার পরিকল্পনা ও সুপারিশপত্র জমা দিতে হবে আবেদনের সময়।
৪. আর কী কী বৃত্তি আছে?
বৃত্তির মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সুযোগ অস্ট্রেলিয়ায় অনেক বেশি। আরটিপির বৃত্তি পেতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অ্যাকাডেমিক সিজিপিএ, গবেষণার অভিজ্ঞতা ও জার্নাল পেপার, আইইএলটিএস স্কোর, কাজের অভিজ্ঞতা গুরুত্ব পায়। এছাড়া আবেদন করার সময় স্টেটমেন্ট অব পারপাস, নিজের সম্পর্কে লেখা ও আবেদনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর যত ভালোভাবে লেখা যাবে, ততই বাড়বে বৃত্তি ও ভর্তির সুযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব তহবিল পেতেও এসব বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ফুল ফান্ডসহ ভর্তির সুযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ইমেইল করে এসব বৃত্তির খোঁজ নেওয়া যাবে।
৫. আইইএলটিএস স্কোর কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য আইইএলটিএস স্কোর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোর অন্তত ৬ দশমিক ৫ প্রয়োজন। আইইএলটিএসের চারটি ভাগে এককভাবে ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ থাকলে বৃত্তি ও ভর্তির সুযোগ-সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ার সবাই ইংরেজিতে কথা বলে, যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরির ক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।
৬. জীবনযাত্রার মান ও ব্যয় কেমন?
যাঁরা বিদেশে পড়তে চান, তাঁদের জন্য অস্ট্রেলিয়া দারুণ এক গন্তব্য। অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসাসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা অনেক ভালো। বৈষম্যহীন পরিবেশ ও মেধাভিত্তিক কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। জোবায়ের হোসাইনের মতে, অস্ট্রেলিয়া উন্নত জীবন ও পড়াশোনার নিশ্চয়তা দেয়। সর্বশেষ টাইমস হায়ার এডুকেশন ও কিউএস র্যাঙ্কিং অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গ্লোবাল র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ এক শর মধ্যে আছে। উচ্চতর পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে এ মুহূর্তে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পরই তৃতীয় জনপ্রিয় গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া। উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে শুধু দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের কাছেই নয়, ইউরোপের অনেক দেশের শিক্ষার্থীর কাছেও অস্ট্রেলিয়া জনপ্রিয়।
তবে জীবনযাত্রার মান অন্যান্য পশ্চিমা দেশের মতোই ব্যয়বহুল। বিশেষ করে বাসাভাড়া আর নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় কম বলা যাবে না কোনোভাবেই। নিজ খরচে পড়তে এলে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হবে। উল্টো দিকে, বৃত্তিসহ পড়তে এলে আপনার তেমন কষ্ট হবে না। এখানে সব নাগরিক সুবিধা হাতের কাছেই পাবেন। জীবনযাপন সহজ, সুন্দর ও সাবলীল।
৭. বৃত্তি ছাড়া পড়তে চাইলে খরচ কেমন?
বৃত্তি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি করার সুযোগ আছে। ব্যাচেলর পর্যায়ে বছরে ১৫ হাজার ডলার থেকে ৩০ হাজার ডলারের মতো খরচ পড়বে। মাস্টার্স পর্যায়ে বছরে ২০ হাজার ডলার থেকে ৩৭ হাজার ডলার। এ ছাড়া পিএইচডি পর্যায়ে খরচ ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার ডলারে মতো।
৮. পড়াশোনার মান ও পরিবেশ কেমন?
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠক্রমও গবেষণাকেন্দ্রিক। শুধু পিএইচডি নয়, মাস্টার্সেও শিক্ষার্থীদের গবেষণাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ করতে হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়ের সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকে। এ কারণে ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক—দুই বিষয়েই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে হয়।
অস্ট্রেলিয়ার পড়াশোনার মান নিঃসন্দেহে উন্নত। সবার জন্য শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ এখানে অনেক বেশি। নারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিসহ পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখস্থ বা বইনির্ভর পড়ার চেয়ে আলোচনা ও গবেষণাকে গুরুত্ব দেয় বেশি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বার্ষিক বা সেমিস্টার সমাপনী পরীক্ষা হতো না। নানা অ্যাসাইনমেন্ট আর ক্লাসওয়ার্কের মাধ্যমে মেধা যাচাই করা হতো।
৯. পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ আছে কি?
অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি কাজের সুযোগ আছে। শিক্ষার্থীরা নানা প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পান। অস্ট্রেলিয়া আসার আগে অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আসা উচিত। বাংলাদেশি লাইসেন্স দিয়ে শিক্ষার্থী অবস্থায়ই এখানে গাড়ি চালানো যায়। ঘণ্টায় গড়ে ২২-২৮ ডলার আয় করা সম্ভব। এ ছাড়া সুপারশপ, পেট্রলপাম্প, রেস্তোরাঁসহ নানা প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ আছে। সাব্বির আহমেদ বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় যাঁরা পড়তে আসেন, ভিসা অনুসারে সপ্তাহে গড়ে ২০ ঘণ্টা করে কাজের সুযোগ তাঁদের থাকে।
১০. পড়ালেখা করে চাকরির সুযোগ কেমন?
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ, কোন বিষয়ে পড়ছেন বা কী গবেষণা করছেন, তার ওপর নির্ভর করে। ভালো ফল ও গবেষণায় যুক্ত থাকলে চাকরির সুযোগ-সম্ভাবনা বাড়ে। বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন রকমের কাজের সুযোগ। পিএইচডি গবেষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা, পিএইচডি শেষ করার পর, বিশেষত আন্তর্জাতিকভাবে গবেষণার ক্ষেত্রে যাঁরা অবদান রাখছেন, তাঁদের জন্য গ্লোবাল ট্যালেন্ট স্কিম নামের একটা সুযোগ আছে। এর মাধ্যমে অনেক গবেষক ও শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় থাকার পাশাপাশি কাজের সুযোগ পান। বেতনকাঠামো যুক্তরাজ্যের চেয়ে অনেক ভালো।
অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানবো।
(১) এনডেভার পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ
আবেদনের সময়: জুলাই/আগস্ট থেকে নভেম্বর
(২) মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ
সরকারি-বেসরকারি এসব শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তেমনি একটি স্কলারশিপ হচ্ছে ‘গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ’।
বিস্তারিত তথ্যর জন্য এখানে ক্লিক করুন
(৩) ডেকিন ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ
ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু ১৯৭৪ সালে। দেশটির ভিক্টোরিয়া শহরে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান সরকার ও বিভিন্ন কোম্পানিতে পার্টনারশিপে কাজ করে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণা ও কাজের সুযোগ পান। ৪০০টি বৃত্তি দেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়। উপবৃত্তি, সম্পূর্ণ টিউশন মুক্ত, চিকিৎসা তহবিল (অসুস্থ ছুটির বেতন দেওয়া), বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা ও বিমান ভাড়া মিলবে এ বৃত্তি পেলে।
বৃত্তির বিস্তারিত তথ্যর জন্য এখানে ক্লিক করুন
(৪) ইউনিভার্সিটি অব সিডনি ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ স্কলারশিপ
আবেদনের সময়: সারা বছরই খোলা থাকে তবে ভিন্ন ভিন্ন ডেডলাইন ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়
(৫) আরটিপি স্কলারশিপ
আবেদনের সময়: সারা বছরই খোলা থাকে তবে ভিন্ন ভিন্ন ডেডলাইন ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।
(৬) অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বৃত্তি
দেশটির অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয় অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। প্রতিবছর স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে স্কলারশিপ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। ৩১ অক্টোবরের মধ্য আবেদন করতে হবে। প্রতি বছরে ৩৪ হাজার ডলার করে দেওয়া হবে এ বৃত্তির প্রাইজমানি। সাড়ে তিন বছর দেওয়া হবে এ বৃত্তি। তবে কতজনকে এ বৃত্তি দেওয়া হবে তা ওয়েবসাইটে উল্লেখ নেই।
এ বৃত্তির বিস্তারিত তথ্যর জন্য এখানে ক্লিক করুন
(৭) বন্ড ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ
বন্ড বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। বছরের দুইবার এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে এ স্কলারশিপের জন্য।
বিস্তারিত তথ্যর জন্য এখানে ক্লিক করুন
(৮) ফ্লিনন্ডার্স ইউনিভার্সিটির আরটিপি স্কলারশিপ
রিসার্চ ট্রেনিং প্রোগ্রাম (আরটিপি নামে পরিচিত) অস্ট্রেলিয়ান সরকারের একটি উদ্যোগ। প্রতিবছর স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে বিভিন্ন ডিগ্রির জন্য এ স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত মাস্টার্সের জন্য তিন বছর ও পিএইচডির জন্য ২ বছরের আরটিপি স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। এর আওতায় সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ, থাকার খরচ, মাসিক হাতখরচ, গবেষণামূলক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ-সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ৩৩ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেওয়া হয়।
এ বৃত্তির বিস্তারিত তথ্যর জন্য এখানে ক্লিক করুন
(৯) জন অলরাইট ফেলোশিপ
আবেদনের সময়: ফেব্রুয়ারি থেকে জুন
(১০)অস্ট্রেলিয়া সরকারের বৃত্তি
অস্ট্রেলিয়া সরকারের ডেস্টিনেশন অস্ট্রেলিয়া বৃত্তি পাবেন ৫৫১ জন। প্রতি বছরে একজন শিক্ষার্থী পাবেন ১৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
এ বৃত্তির বিস্তারিত তথ্যর জন্য এখানে ক্লিক করুন
সুবিধা সমূহ:-
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব স্কলারশিপগুলোর মধ্যে বেশ বৈচিত্র্য আছে। এগুলোতে প্রায় সরকারি অনুদানগুলোর কাছাকাছি সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোর্সগুলোর ভিত্তিতে প্রতি মাসে বা বছরে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে থাকা-খাওয়ার খরচসহ নগদ অর্থের পরিমাণ কম-বেশি হয়। টিউশন ফি মওকুফ করা হয় শতকরা ১০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত। গবেষণা কার্যক্রম শুরু করার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সার্বিক ভ্রমণ ভাতা এবং থিসিস ভাতা প্রদান করে থাকে। এছাড়া রয়েছে নির্ভরশীল শিশুর ভাতাসহ চিকিৎসা ভাতা, ম্যাটারনিটি এবং প্যাটারনিটি লিভ।
অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস-এ বলতে গেলে প্রায় সবকিছুই বিনা মূল্যে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। এর মধ্যে রয়েছে দেশটিতে যাওয়ার জন্য বিমান ভাড়া ও ফিরতি টিকেট, পড়াশোনার সামগ্রিক খরচ, আবাসন ও খাওয়ার খরচসহ মাসিক নগদ অর্থ। এছাড়া নারী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে বিশেষ সুবিধা।
আবেদন প্রক্রিয়া:-
অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পরেও শিক্ষার্থীকে স্টুডেন্ট ভিসায় আলাদা করে আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার জন্যই যে অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়া হচ্ছে তা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এর পরেই আসে অস্ট্রেলিয়ায় যেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও থাকা-খাওয়ার খরচ বহনের আর্থিক সচ্ছলতার ব্যাপারটা।
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অথবা স্কলারশিপের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনেই আবেদন করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে দেয়া নীতিমালা খুঁটিনাটি স্পষ্টভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রতিটি আবেদনের জন্য ব্যক্তিগত প্রোফাইল বা সিভি, স্টেটমেন্ট অফ পারপাস, রিকমেন্ডেশন লেটার গুরুত্বপূর্ণ নথি। এগুলোর নমুনা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই স্কলারশিপের বিজ্ঞপ্তি চলাকালীন আবেদন ফর্মের সাথেই সরবরাহ করা থাকে।
আবেদনপত্রের অংশে যাবার আগে কোন কোন ক্ষেত্রে আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটারের স্ক্রিনে আসা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে। সতর্কতার সঙ্গে সেগুলোর যথাযথ উত্তর প্রদানের মাধ্যমে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। অতঃপর প্রয়োজনীয় সকল নথির আপলোড করে অনলাইনের আবেদনের সার্বিক কাজ সম্পাদন করা যাবে।
আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সাথে সাথে আবেদনের সময় প্রদত্ত শিক্ষার্থীর ইমেইলে তা জানিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা পাঠানো হবে।
উন্নত শিক্ষা গ্রহণের আশায় অনেক শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া। ভালো মানের পড়াশোনার পাশাপাশি দেশটিতে সরকারি বৃত্তির এমন সুযোগও রয়েছে যাতে পড়াশোনা তো বিনা মূল্যেই, বরং সরকার উল্টো টাকা দেবে মাসে মাসে। এসব শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন।