ছাত্রদের ভালোবাসায় সিক্ত রাবি হবিবুর হলের বিদায়ী প্রাধ্যক্ষ জাহিদুল
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২২, ১২:৪০ PM , আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২২, ১২:৪০ PM
ছাত্রদের ভালোবাসায় সিক্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের বিদায়ী প্রাধ্যক্ষ ড. জাহিদুল ইসলাম। দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে হলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও ছাত্র-শিক্ষকের সু-সম্পর্ক স্থাপনের অনন্য দৃষ্টান্ত রাখায় প্রশংসিত হয়েছে এ প্রাধ্যক্ষ। বিদায়কালে আবেগ-ঘন অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যমে এ প্রশংসা ব্যক্ত করেন ছাত্ররা।
হবিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, সৎ, সাহসী, দায়িত্ববান ও ছাত্র-বান্ধব এক শিক্ষকের বিদায়। আপনার বিদায়ে শুধু এটুকুই বলতে চাই, এক পরম অভিভাবক হারালাম।
ছাত্র আকরাম হোসেন বলেছেন, সংক্ষিপ্ত জীবনে আমি যে কয়েকজন বড় মানুষের সাহচার্য পেয়েছি। তাদের মধ্যে স্যার অন্যতম। সদা হাস্যজ্বল এ মানুষটির বিচরণ ছিল সমগ্র হল জুড়ে। নরম স্বরে সকলের খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানার চেষ্টা করতেন। হলে তেমন কোন ছাত্রের সাথে ধমক কিংবা কর্কশ কণ্ঠে কথা বলেননি। এমনকি আর্থিক সংকটে থাকা ছাত্রের ভাড়া মওকুফ করার পাশাপাশি দুশ্চিন্তা না করে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনার পরামর্শ দিতেন। তাঁর এ প্রতিদান সকলে চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করবে।
এছাড়াও প্রাধ্যক্ষের বিদায়কালে অশ্রুসিক্ত নয়নে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি দায়িত্ব পালনকালে তাঁর বিভিন্ন স্মরণীয় ঘটনা ও শিক্ষার্থী-বান্ধব কর্মকাণ্ড শ্রদ্ধাভরে স্বর্ণ করেছেন হলের আবাসিক ছাত্ররা।
জানা গেছে, দায়িত্ব পালনের ৩ বছরে হলে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কাজ করার পাশাপাশি দরিদ্র-অসহায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকমের সহায়তা করেছেন প্রাধ্যক্ষ ড. জাহিদুল ইসলাম। হলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সু-ব্যবস্থার লক্ষ্যে রিডিং রুম, বিনোদনের জন্য টিভিরুম ও দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ রুম সংস্কারের পাশাপাশি ডাইনিং, ক্যান্টিন, বাথরুম ও বিভিন্ন ব্লকের বারান্দার সংস্কারেন কাজ করেছেন তিনি। এছাড়াও হলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের পাশাপাশি ছাত্রদের খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা করেছেন এ প্রাধ্যক্ষ।
এমনকি হলে স্থাপন করেছেন একটি সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু কর্ণার। যেখানে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া তার আমলেই মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে দেশের জন্য আত্মত্যাগকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী হবিবুর রহমানের জীবনী লিখিতভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। করোনা-কালীন সময়ে শতাধিক দরিদ্র শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: প্রক্সিকাণ্ডের মূলহোতা রাবি ছাত্রলীগ নেতা তন্ময় বহিষ্কার
দায়িত্ব পালনকালে এ হলে অগ্রাধিকার পেয়েছে দরিদ্র, মেধাবী ও উপজাতি বহু শিক্ষার্থী। এছাড়া তার সময়ে হলের দাপ্তরিক ব্যবস্থাও ছিল চমৎকার। শিক্ষার্থীরা তেমন কোন ভোগান্তি ছাড়াই প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। হলে সিট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক আবাসিক হল আলোচনায় আসলেও তেমন কোন সমস্যা ছিলনা হবিবুর রহমান হলে। নিরলসভাবে দায়িত্ব পালনের শেষ সময়েও শিক্ষার্থীদের নামাজের সুবিধার্থে হল মসজিদের কিছু অংশ বর্ধিত করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রেখে গেছেন বিদায়ী প্রাধ্যক্ষ ড. জাহিদুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের এমন ভালোবাসা পেয়ে অভিভূত সদ্য বিদায়ী প্রধ্যক্ষ ড. জাহিদুল ইসলাম বলেন, দায়িত্বে থাকাকালীন সর্বাদ চেষ্টা করেছি নিষ্ঠার সাথে তা পালন করার। হলের পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি ছাত্রদের যেকোন প্রয়োজনে এগিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। কতোটুকু পেরেছি জানি না, তবে দায়িত্ব শেষে ছাত্রদের যে ভালোবাসা পেয়েছি তা পরম পাওয়া বলে উল্লেখ্য করেন সাবেক এ প্রাধ্যক্ষ।
ড. জাহিদুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ২০০৮ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে পড়াশোনা শেষ করে ২০১০ সালে দর্শন বিভাগে হিসেবে যোগ দেন এবং একই বছর নবাব আব্দুল লতিফ হলে গৃহশিক্ষক হিসেবে যোদ দেন। ২০১৩ সহকারী অধ্যাপকে উন্নীত হন। ২০১৭ সালে সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই বছরে সহকারী প্রক্টর হিসেবে যোগ দিয়ে ২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হন তিনি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে শহীদ হবিবুর রহমান হলে যোগদান করে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট সফলভাবে ৩ বছর পালিত দায়িত্বের ইতি টানেন সাবেক এ প্রাধ্যক্ষ ড. জাহিদুল ইসলাম।