ঢাকা কলেজ বন্ধ, নিউমার্কেট খোলা

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে  © সংগৃহীত

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে টানা দুদিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে নিউমার্কেটের বেশিরভাগ দোকানপাট। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে বেচাকেনায়। নিউমার্কেটের বেচা-বিক্রি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও বন্ধই রয়েছে ঢাকা কলেজ। প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত ১৯ এপ্রিল থেকে কলেজের ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছেন।

গত সোমবার দিবাগত রাতে নিউমার্কেটের দুটি খাবারের দোকানের কর্মীদের বিরোধের থেকে এ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিন রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রুপ ন্যায় পুরো নিউমার্কেট এলাকা। সারারাত থেমে থেমে সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার সকালেও শুরু হয় উত্তেজনা। ব্যাপক উত্তজেনার মধ্যে ঢাকা কলেজের সব আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করে বিকালের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কলেজ প্রশাসন।

উত্তেজনার মধ্যে কলেজ প্রশানের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে যেকোন মূল্যে আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসে অবস্থানের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার বিকালে চাঁদপুর সার্কিট হাউসে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রীও এদিন থেকে ঢাকা কলেজের ঈদের ছুটির ঘোষণা দেন।

তিনি বলেছেন, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০ এপ্রিল থেকে ঈদের ছুটি শুরু হলেও ঢাকা কলেজে যেহেতু ক্লাসের পরিবেশ নেই, তাই আজ থেকে এই কলেজে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যাবে। আগামী ৫ মে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা কলেজও খোলা হবে।

ঈদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির বিষয়ে এর আগে গত ৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল ‘‘রমজান মাসে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস খোলা থাকবে। এরপর থেকে মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি কার্যকর হবে।’’

আরও পড়ুন: নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: মামলা করেছেন নিহত নাহিদের বাবা

এদিকে, নির্দিষ্ট দিনের আগেই ঢাকা কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেলেও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা আজ থেকে স্বাভাবিক হয়েছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নিউমার্কেট এলাকায় দেখা গেছে, বেচাকেনা টুকটাক চলছে। ক্রেতারা মার্কেটসহ ফুটপাতগুলো থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনছেন। এছাড়া নীলক্ষেত থেকে সায়েন্সল্যাব ও সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত উভয় রাস্তার যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়েছে।

২ মৃত্যু, আহত অন্তত ৩শ

নিউমার্কেট এলাকায় গত সোমবার ও মঙ্গলবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে অন্তত ৪০ জন আহত হয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলায় আহত হন অন্তত ১২ জন সাংবাদিক। এছাড়া এ দুই দিনের সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ টি এম মঈনুল হোসেন।

আরও পড়ুন: নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: মামলার এক নম্বর আসামি বিএনপি নেতা

এছাড়া ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিপণিবিতানের দোকানমালিক ও কর্মচারীদের এ সংঘর্ষে আহত হয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে এক বিক্রয়কর্মী মারা গেছেন। ওই বিক্রয়কর্মীর নাম মুরসালিন (২৫)। তিনি নিউ সুপার মার্কেটে রেডিমেড কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যান নাহিদ। তিনি ডি-লিংক নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ‘ডেলিভারিম্যান’ ছিলেন। নাহিদের বাসাও রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেটের মেম্বার গলিতে। ওই দিন সকাল ১০টায় কর্মস্থলের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। দুপুরে নিউমার্কেট এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে মাথায় আঘাত পান নাহিদ। রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

দোকান মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন

ঈদকে সামনে রেখে বেচাকেনায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরাতে বুধবার ২০ এপ্রিল দুপুরে নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন ব্যবসায়ীরা। এসময় তারা সবার সহযোগিতা নিয়ে দোকানপাট খুলে দেয়ার কথা জানান। এরপর থেকেই মূলত নিউমার্কেটে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরতে শুরু করেছে।

শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন

নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ডিসি, ডিএমপির রমনা জোনের এডিসি হারুন-অর-রশিদ ও নিউমার্কেট থানার ওসি স. ম. কাইয়ুমের প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবি জনিয়েছেন তারা।

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের পৃথক সংবাদ সম্মেলন ছাড়াও বুধবার রাতে উভয়ের মধ্যে আয়োজিত সভায় এক সভায় সার্বিক বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এর ভিত্তিতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে নিউমার্কেটের দোকানগুলো খুলতে শুরু করেছে।

মামলা

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ ছাত্রদের সহিংস সংঘর্ষের ঘটনায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ১০০ জনকে। তারা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। দুটি মামলা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে, অন্যটি করেছে সংঘর্ষে নিহত যুবক নাহিদ হোসেনের পরিবার।

ডিএমপির নিউ মার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জমান গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মামলা তিনটি করা হয়। নিহত নাহিদ হোসেনের চাচা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। আর পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

এরমধ্যে এ ঘটনায় পুলিশের করা দুই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শুভ্রা চক্রবর্তী মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ দিন ধার্য করেন।