ডিসি-এডিসি-ওসির প্রত্যাহারসহ ১০ দাবি ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের
- ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২২, ১১:৪১ PM , আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২২, ১২:৩০ AM
নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের আচরণের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘট যাওয়া ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ডিসি, ডিএমপির রমনা জোনের এডিসি হারুন-অর-রশিদ ও নিউমার্কেট থানার ওসি স. ম. কাইয়ুমের প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবি জনিয়েছেন তারা।
বুধবার (২০ এপ্রিল) ঢাকা কলেজের শহীদ আ. ন. ম. নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেন ঢাকা কলেজের স্নাতকোত্তরের শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুজয় বালা ও মাসুম বিল্লাহ।
তাদের দাবিগুলো হলো- এই ন্যক্কারজনক হামলার উস্কানিদাতা, ইন্ধনদাতা ও হামলাকারীদের তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; আহত সকল শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সকল দায়ভার নিউমার্কেট ব্যবসায়ি সমিতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিতে হবে; হকারদের হামলায় নিহত পথচারি নাহিদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে; দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডিসি, এডিসি ও নিউ মার্কেট থানার ওসিকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং পুলিশ প্রশাসনকে কলেজ প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে; প্রতিটি মার্কেট ও দোকানে সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে।
প্রতিটি মার্কেটে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জন্য আচরণ বিধি প্রণয়ন ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে; ফুটপাত দখলমুক্ত, অবৈধ কার পার্কিং উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; ক্রেতা হয়রানি, নারীদের যৌন হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে ক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নিউ সুপার মাকের্টে ঢাকা কলেজের সম্পদ লিজ বাতিল করে ফিরিয়ে দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনায় শিক্ষার্থীরা বলেন, গত সোমবার দিবাগত রাতে বারোটার দিকে নিউমার্কেটের ওয়েলকাম এবং ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করা হয়। এই খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ঢাকা কলেজের সামনের সড়কে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানায়।
সেখান থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার সময় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারি ও হকাররা ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের নামে গুজব ছড়িয়ে একযোগে হামলা চালায়। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। এসময় ডিএমপির রমনা জোনের এডিসি হারুন-অর-রশিদ ও নিউমার্কেট
থানার ওসি স.ম. কাইয়ুম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
এসময় উত্তেজিত ব্যবসায়ী, কর্মচারি ও হকাররা ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে হামলা চালায়। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা হামলা প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করলে পুলিশ বিনা উস্কানীতে নির্বিচারে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণ করে। এতে ঢাকা কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তারা বলেন, এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় ঘটনার তদন্ত ও বিচার চেয়ে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে প্রতিবাদ জানায়। এসময় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, হকার ও কর্মচারিরা বহিরাগত সন্ত্রাসিদের সাথে নিয়ে ফের ঐক্যবদ্ধভাবে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
আরও পড়ুন: নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা, অভিশাপ দিচ্ছি আপনাদের
ঘটনা জেনে কলেজের শিক্ষকরা কলেজের প্রধান ফটকে গেলে তাদেরকেও লাঞ্ছিত ও হামলা করে আহত করা হয়। পরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এরপর আবারও পুলিশ নির্বিচারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও গুলি চালায়। শিক্ষার্থীরা এসময় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়।
তখনও ব্যবসায়ীরা কলেজের মূল ফটকের সামনে এসে ভেতরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। পরে বেশ কয়েকবার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কলেজের
তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এসব হামলার প্রধান ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে এডভোকেট মকবুল হোসেন, ফরমান মোল্যা, জাহাঙ্গির হোসেন, আমির হোসেন আলমগীর, মিজান ও টিপুসহ আরও অনেকেই দায়ী বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর এসব হামলার ঘটনায় জড়িত বাকিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার দাবি করেছেন তারা।