ফেসবুকে চাকরি পেলেন খুবি শিক্ষার্থী সালেহীন

খুবি শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লগো
খুবি শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লগো

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) সাবেক শিক্ষার্থী আশফাক সালেহীন ফেসবুকের পার্টনার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) নিজের ফেসবুক আইডিতে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। তিনি ফেসবুকের প্রধান অফিস লন্ডনে পার্টনার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এন্ড্রয়েড (এল-৪) রোলে অফার পেয়েছেন। আগামী পহেলা আগস্ট থেকে তিনি চাকরিতে যোগদান করবেন বলে জানিয়েছেন।

আশফাক সালেহীন জানান, ক্যারিয়ারের একটা পর্যায়ে আমি বুঝতে পারি- আমি যে রকম চাই আমার কাজের এক্সপোজার সেভাবে হচ্ছে না। সামাজিক অবস্থানগত দিক দিয়েও একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে FAANG (ফেসবুক, অ্যামাজন, অ্যাপল, নেটফ্লিক্স, গুগল) এ ঢোকা আমার জন্য অতি জরুরি। আমার লক্ষ্য ছিল ফেসবুক, গুগল এবং অ্যামাজন এই তিনটি কোম্পানির যেকোনো একটি থেকে অফার পাওয়া। কিন্তু আমার পথে বাধা ছিল আমার সিএসই’র একাডেমিক জ্ঞানের অভাব ও কখনো কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং না করা। চাকরি করা অবস্থায় এইগুলো পড়াশুনা করে ঠিক করা সম্ভব ছিল না। তাই আমি আমার তৎকালীন চাকরি ছেড়ে দেই।

আরও পড়ুন : বাবা রিকশাচালক জেনেই তালাক, বাধা পেরিয়ে মেডিকেলে ভর্তির অপেক্ষায় মেয়ে

তিনি আরও বলেন, FAANG’র চাকরিগুলোতে প্রোগ্রামিং জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। ইন্টারভিউতে আমাকে কিছু এলগোরিদমিক সমস্যা সমাধান করতে দেওয়া হয়। মূলত সেগুলো সঠিকভাবে সমাধান করার উপরই ইন্টারভিউয়ের ভাগ্য নির্ধারণ করে। আমি দীর্ঘ দেড় বছর ডাটা স্ট্রাকচার অ্যান্ড এলগোরিদম, কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এবং কম্পিউটার সায়েন্সের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনা করি। পড়াশুনার মাঝে প্রত্যেক ৩-৪ বার পরপরই আমি চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি এবং প্রত্যাখ্যান হয়েছি।

সালেহীন জানান, প্রথমবার ফেসবুক থেকে, তারপর ২ মাসের ব্যবধানে অ্যামাজনে ২ বার, তারপর গুগল থেকে একবার এবং শেষে অ্যামাজন থেকে আরও একবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছি। বারবার প্রত্যাখ্যান হওয়ার পরও আমি হাল ছেড়ে দেইনি। কিছুদিন আগে আমি আবার ফেসবুক এবং অ্যামাজনে আবেদন করি। এইবার সব ইন্টারভিউ অসাধারণ হয় এবং ফেসবুক থেকে আমি খুব তাড়াতাড়ি অভিনন্দন ই-মেইল পেয়ে যাই।

তিনি জানান, আগামী ১লা আগস্ট থেকে আমি ফেসবুকের লন্ডন অফিসে পার্টনার ইঞ্জিনিয়ার, এন্ড্রয়েড রোলে লেভেল-৪ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। এই সাফল্যের পিছনে আমার স্ত্রীর অবদান অনস্বীকার্য। কারণ তার সমর্থন এবং অনুপ্রেরণা না থাকলে দীর্ঘ সময় লেগে থেকে আমার পক্ষে এই প্রাপ্তি অর্জন করা কখনোই সম্ভব ছিল না।

আরও পড়ুন : নববর্ষে চারশত শিক্ষার্থীর ১৫ কিলোমিটার সাইকেল র‌্যালি

তিনি বলেন, আমার অনেক দিনের স্বপ্ন সত্যি হলো। আমার সাফল্যে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই খুব উৎফুল্ল, এটা দেখে খুব ভাল লাগছে। আমি আশা করি খুব তাড়াতাড়ি গুগল, ফেসবুক অথবা অ্যামাজনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী তরুণ ঢুকতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, ফেসবুক, গুগল অথবা অ্যামাজনে চাকরি পাওয়ার জন্য উচ্চ একাডেমিক ডিগ্রির কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু কম্পিউটার সায়েন্সের মৌলিক, জনপ্রিয় সকল এলগোরিদম এবং এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে। সুতরাং কেউ যদি এইসব বিষয়ে পড়াশুনা করে নিজে ভালোমতো আয়ত্ব করতে পারে তাহলে তার জন্য কোনো উচ্চ ডিগ্রির প্রয়োজন নেই।

উল্লেখ্য, আশফাক সালেহীন ২০১৩ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন থেকে স্নাতক শেষ করেন। এরপর অল্প কিছুদিন নেটওয়ার্কিং রিলেটেড চাকরি করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং করার।

দুই বছর আমেরিকা ভিত্তিক কিছু ছোট কোম্পানির সঙ্গে ব্যাক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করে। এরপর থাইল্যান্ডের একটা কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। এরপর আরও বেশ কিছু বড় কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ