নম্বরপত্র-উত্তরপত্রসহ গোপনীয় নথি গায়েব, ৮ দিন পর তদন্ত কমিটি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষিকার ব্যক্তিগত দাপ্তরিক কক্ষ থেকে পরীক্ষার নম্বরপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি গায়েব হয়ে গেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ত্রিশাল থানায় করা এক সাধারণ ডায়েরিতে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এ ঘটনায় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় বৃহস্পতিবারের আগ পর্যন্ত হয়নি তদন্ত কমিটি।

পরে অবশ্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে এদিন রাতেই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমেদুল বারীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিস বিভাগের প্রধান মো. আল জাবির, প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, সিকিউরিটি অফিসার রামিম আল করিম।

ত্রিশাল থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা নাজ স্বর্ণপ্রভা জানান, বিভাগের পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে কলা ভবনের নিচতলার ব্যক্তিগত কক্ষটি তালাবদ্ধ করে বাসায় যান তিনি।

পরদিন সকাল ১০টার সময় তিনি ওই কক্ষে এসে দেখতে পান তার রুমের জানালার কাচ ভাঙা, অফিসিয়াল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও গোপনীয় নথি, একাধিক শিক্ষাবর্ষের গোপনীয় নম্বরপত্র, পরীক্ষার উত্তরপত্র, উপস্থিতি রেজিস্ট্রার খাতা, পেন ড্রাইভ নেই। তবে সেখানে স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে ছিল।

আরও পড়ুন: ওয়েবমেট্রিক্সের র‍্যাংকিংয়ে ৭৭তম নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রক্টর অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, বিষয়টি আমি শোনার পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে কল করি এবং ভবনের পেছনে পাঠাই। আমি ম্যাডামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কি কি ছিল সেখানে। এক পর্যায়ে ম্যাডাম বলেন, ব্যাগে থাকা অধিকাংশ জিনিসই নেই। এটি একটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ঘটনা হতে পারে। কেননা এই অফিস রুমটিকে আমরা সবাই অত্যন্ত নিরাপদ মনে করি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমন অপরাধ সংঘটিত হলেও মামলার পরিবর্তে সাধারণ ডায়েরি করেই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। আর সেখানে উল্লেখ করা হয়, ওই কক্ষের জানালার একটি গ্লাস ভাঙা পাওয়া যায়। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে জানালাটির গ্রিল ছিল অক্ষত। অর্থাৎ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি কেউ। তাহলে কিভাবে গায়েব হলো স্পর্শকাতর এসব নথি? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বর্ণপ্রভার ভাষ্য, তাকে বিপদে ফেলতেই কেউ সরিয়েছে নথি।

ফারজানা নাজ স্বর্ণপ্রভা বলেন, আমি আমার চাকরি জীবনে কখনো আমার অফিস কক্ষে গুরুত্বপূর্ণ নথি, কাগজপত্র রাখতে সিকিউরড ফিল করিনি। সেদিন শিক্ষার্থীদের রিহার্সাল করাতে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় পরদিন সকালেই অফিসে চলে আসব ভেবে আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো সেখানে রেখে যাই। কিন্তু রাতের ৯ ঘণ্টার মধ্যেই তা চুরি হওয়া মানে স্পষ্টই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবির বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাকে জানানো হয়েছিল যে জিনিসগুলো মিসিং ছিল তার বেশিরভাগই তারা উদ্ধার করতে পেরেছে। পরবর্তীতে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম আসলে সেগুলো পায়নি। যেহেতু দুইজনের কথার মধ্যে গড়মিল পাওয়া গেছে সেজন্য আমাদের তদন্ত কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। আমরা দ্রুতই অধিকতর তদন্ত করে মূল ঘটনা বের করার চেষ্টা করব।


সর্বশেষ সংবাদ