পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধা বঞ্চিত ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী

আবাসিক হলের গণরুমে এভাবে গাদাগাদি করে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের
আবাসিক হলের গণরুমে এভাবে গাদাগাদি করে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের  © ফাইল ফটো

দেশের স্বায়ত্তশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট আরও চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসা কম শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধা পেয়ে থাকে। ফলে হল জীবনের স্বাদ না পেয়েই অনেককেই শেষ করতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।

দেশের সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগরে সব শিক্ষার্থীও আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোন আবাসনের ব্যবস্থা। তাছাড়া আরও ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা শূন্যের কোটায়।

এসবের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম চালু না হওয়া, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। রয়েছে তিন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আররি বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলোর মাধ্যমে। ফলে প্রশাসন অছাত্র ও বহিরাগতদের বের করতে পারেনা। এতে বৈধ শিক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে দিন দিন প্রকট হচ্ছে আবাসন সংকট।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ (২০২০) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫ হাজার ৭৮৭ জন শিক্ষার্থীর। প্রতিবেদন অনুযায়ী শতকরা ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ সংখ্যা বেড়েছে। এর আগের বছর ৬৬ ভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল।

ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩টি আবাসিক হল ও ছাত্রাবাস রয়েছে। ১৬ হাজার ৮৯৯ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা হলেও অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থীর জন্য কোনো আবাসনের ব্যবস্থা নেই। ৩৯ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৭ শতাংশের নেই কোন আবাসনের ব্যবস্থা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ হাজার ৩৮ শিক্ষার্থী থাকলেও আবাসন সুবিধা নেই। প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন আবাসনের কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮টি হল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৮ হাজার ২৯১ জন শিক্ষার্থী মধ্যে মাত্র ৯ হাজার ৭২ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৭ শতাংশের নেই কোন আবাসনের ব্যবস্থা।

তবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ হাজার ২৯১ জন শিক্ষার্থীদের জন্য ১৪টি হল রয়েছে। আর পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হাজর ৪২১ শিক্ষার্থীদের জন্য ৮টি হল রয়েছে।

ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ হাজার ৮৫১ শিক্ষার্থীর জন্য ৩ হাজার ৪৮৪টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার ৪৮৩ শিক্ষার্থীর জন্য ৫ হাজার ৯৮টি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ৩৩৮ শিক্ষার্থীর জন্য ২ হাজার ২৭২টি, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ হাজার ৫৪৭ শিক্ষার্থীর জন্য ৩ হাজার ২৯০টি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৫০২ শিক্ষার্থীর জন্য ১ হাজার ৪৭১টি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ৩৪২ শিক্ষার্থীর জন্য ১ হাজার ৯০৪টি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ হাজার ৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৭৩৮ জন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ হাজার ২৫৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৪২৮ জন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ হাজার ৩৭৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৭৩৮ জনের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ হাজার ৫৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ হাজার ৬১ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন সুবিধা রয়েছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ হাজার ৫৯ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসনের সুযোগ রয়েছে। ৮টি হলে ২ হাজার ৪৩৭ শিক্ষার্থীর আবাসনের সুযোগ রয়েছে। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ৯৯৭ শিক্ষার্থীর জন্য ৮টি আবাসিক হল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৫৯৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনের সুযোগ রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৩৬৭ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৪৮ জনের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৮৮০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৭৮০ জনের, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ হাজার ১৮৮ জনের মধ্যে ১ হাজার ৫৬২ জনের, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ হাজার ৭৭০ জনের মধ্যে ৪ হাজার ৫০০ জনের, চুয়েটে ৫ হাজার ৯৫৪ জনের মধ্যে ৩ হাজার ৪৯৩ জনের, রুয়েটে ৫ হাজার ৮০৯ জনের মধ্যে ২ হাজার ৫৭ জনের, কুয়েটে ৫ হাজার ৯৫০ জনের মধ্যে ৪ হাজার ৪৯৭ জনের, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫৪৭ জনের মধ্যে ১ হাজার ১৩০ জনের, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ১৬৫ জনের মধ্যে ১ হাজার ৯৬৮ জনের, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ১৩৭ জনের মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জনের, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার ৯৯ জনের মধ্যে ৮৩৭ জনের, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ৮ হাজার ১৯৮ জনের মধ্যে ৩৭০ জনের, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৯৪৮ জনের মধ্যে ৬৮০ জনের, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ৯৯০ জনের মধ্যে ১ হাজার ৪৬৩ জনের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৮২ জনের মধ্যে ১৬৪ জনের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ১৯৮ জনের মধ্যে ৪৯ জন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৯৭ জনের মধ্যে ১৪১ জনের রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৮৩ জনের মধ্যে ১৪৩ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের সুযোগ রয়েছে।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা শূন্যের কোটায়

চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আররি বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে এদের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের কলেজগুলো ও ইসলামি আররি বিশ্ববিদ্যালয় ফাযিল-কামিল মাদ্রাসাগুলো এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে সকল স্তরের জনগনের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ