কুবির আনসারদের মানবেতর জীবনযাপন
বর্ষা এলেই মিলে আশ্বাস, সমাধানের দেখা নেই
চার কক্ষে থাকেন ২৯ জন
- শাহাদাত বিপ্লব, কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২১, ০৯:৫৬ PM , আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২১, ১১:৫১ PM
নানামুখী সমস্যা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আনসার সদস্যদের। আবাসনের জন্য নির্ধারিত টিনশেডের ৩টি রুমে বর্ষা এলেই যেন ভোগান্তি চরমে উঠে। বৃষ্টি এলে টিনের অসংখ্য ছিদ্র দিয়ে অনবরত পানি পড়ে। এতে কাদায় মাখামাখি হয়ে যায় মেঝে। ফাটল ধরেছে দেয়ালেও। রয়েছে পাহাড়ী সাপ ও নানা ধরনের পোকামাকড়ের আতঙ্ক।
এসব সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েকবার অভিযোগ জানানো হলেও আশ্বাসেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে আনসার সদস্যদের। তাদের অভিযোগ, প্রতিবারই বর্ষা এলে ভোগান্তির কথা জানানো হয়, তবে এর কোন সমাধান আজ পর্যন্ত হয়নি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম হলের পূর্ব পাশে টিনশেডের ৩টি রুম। ইটের গাঁথুনি দেয়া দেয়ালগুলোতে পলেস্তারা নেই। এরই মধ্যে কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ৩টি রুমে গাদাগাদি করে থাকেন ১৯ জন। রুমগুলোতে মাথার উপরে থাকা টিনে প্রায় দেড় ডজন ছিদ্র। বর্ষায় বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচতে ছিদ্রের মুখে বোতল কিংবা পলিথিন বেঁধে দিয়েছেন আনসার সদস্যরা।
মেঝেতে ইট-বালি-কাদায় মাখামাখি হয়ে সার্বক্ষণিক স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। দায়সারাভাবে করা অনিরাপদ বিদ্যুতের লাইনেও যেকোন মুহুর্তে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর কক্ষগুলোর দেয়াল ঘেঁষে পাহাড়ি টিলা হওয়ায় পাহাড়ী সাপ নামার ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা। বসবাস অনুপযোগী এসব কক্ষেই দিনের পর দিন বসবাস করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসাররা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ২৯ জন আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠানেই আনসারদের থাকার ব্যবস্থার কথা থাকলেও তাদের জন্য ক্যাফেটেরিয়ার পাশে মাত্র একটি কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। সেখানে গাদাগাদি করে থাকেন ১০ জন। আর নজরুল হলের পাশের ৩ কক্ষের ঘরটিতে থাকেন বাকীরা। এ ঘরটি মূলত অন্য একটি প্রকল্পের শ্রমিক শেড ছিল। প্রকল্প শেষে বসবাস অনুপযোগী এ ঘরেই আনসারদের থাকার ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এসব সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে আবেদন জানানো হয়। তবে এর বিপরীতে গতবছর শুধুমাত্র টিনে পুডিং দিয়েই দায় সারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপরে আবারও আবেদন জানালে আশ্বাস ছাড়া কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এসব বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আনসার সদস্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য জানান, এখানে আমাদেরকে অমানুষের মতো বসবাস করতে হচ্ছে। এটা কোনভাবেই থাকার উপযোগী নয়। আমরা একাধিকবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু এর কোন সমাধান আমরা পাইনি। আমরা অসহায়। অন্য কোথাও আনসার সদস্যদের এতা কষ্টে থাকতে হয়না।
আনসারদের সহকারী প্লাটুন কমান্ডার মো. বাচ্চু বলেন, আমাদের জন্য এখানের স্থানগুলো একেবারেই থাকার অনুপযোগী। প্রশাসনকে আমরা অবহিত করেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, প্রায় ৩ মাস আগের আমাদের একটা আবেদন দেয়া আছে টিন শেডটাকে পরিবর্তন করার জন্য। গতবছর টিনে পুডিং দিয়ে ছিদ্রগুলো বন্ধ করা হয়েছিল। আনসারদের জন্য আলাদা আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় তাদের এ লেবার শেডে থাকতে হচ্ছে। নতুন ক্যাম্পাসে আনসারদের জন্য আলাদা শেড ধরা আছে। প্রশাসন থেকে আমাদেরকে আশাস দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান বলেন, প্রশাসন থেকে আনসারদের শেডটি সংস্কারের জন্য কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি। তবে আমি সেটি ঘুরে দেখেছি। এটা অনেক আগের করা। দেয়ালগুলো ড্যামেজ হয়ে গেছে। এটা সংস্কার করা যাবেনা। হয় আনসারদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে নতুবা এটি ভেঙে নতুন করে করতে হবে। সাময়িক টিন ঠিক করে থাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, আনসারদের থাকার এতো দূরাবস্থা এটা তো আমাদের জানাতে হবে। আমি বিষয়টি লিখে রাখলাম। এটা নিয়ে ভিসি স্যারের সাথে আমি আলোচনা করবো।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘‘যদি এটা সংস্কার করা না যায় তাহলে নতুন করে করার বাজেট আছে কি না আমি দেখছি। বিষয়টা নিয়ে আমি আলাপ করবো।”