চবিতে স্যানিটারি ন্যাপকিন মিলবে ৫ টাকার কয়েনে 

  © সংগৃহীত

সামাজিক ট্যাবুর কারণে ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গিয়ে সংকোচে ভোগেন নারীরা। শুধু তাই নয়, চাইলেও হাতের নাগালে মেলে না স্যানিটারি ন্যাপকিন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রীদেরও এমন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে দিন কাটাতে হয়। তবে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিনের প্রতিস্থাপনের ফলে পরিবর্তন আসছে এমন অভিজ্ঞতার। যেখানে ৫ টাকার কয়েন ফেললেই মিলবে একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড। ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি অনুষদ ও একটি আবাসিক হল থেকে প্রায় ১০ হাজার ছাত্রী সেবাটি নিতে পারবেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তো বটে, পুরো চট্টগ্রামেই প্রথমবারের মতো নেয়া হচ্ছে এমন উদ্যোগ। চবির মার্কেটিং বিভাগের এমবিএ’র শিক্ষার্থী তৌসিফ আহমেদের চিন্তার ফসল এই উদ্যোগ। ফেসবুকে ভারতের স্কুলগুলোতে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের খবর দেখে তার মাথায়ও আসে এমন চিন্তা। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এটির বাস্তবায়ন নিয়ে ছিল সংশয়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে অংশ নেন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এলজি’র অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রামে। সেখানে আইডিয়া জমা দিলে চারজনের মধ্যে তাঁর আইডিয়াও চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। পুরষ্কার স্বরূপ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এলজি চবিতে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনে সাড়ে চার লাখ টাকা অনুদান দেয়। আর এর মাধ্যমেই প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাটি অনুষদ ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে বসানো হচ্ছে এসব ভেন্ডিং মেশিন।

যেখানে বসানো হবে ভেন্ডিং মেশিন: ছাত্রীরা যাতে সহজেই হাতের নাগালে স্যানিটারি প্যাড পেতে পারেন এজন্য অনুষদ্গুলো ও হলের কমন রুমে ভেন্ডিং মেশিন বসানো হবে। ছাত্রীরা ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউট এবং শেখ হাসিনা হলের ভেন্ডিং মেশিনগুলো থেকে স্যানিটারি প্যাড সংগ্রহ করতে পারবেন।

প্রকল্পটির উদ্যোক্তা তৌসিফ আহমেদ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদ ও হলগুলোর আশপাশে স্যানিটারি ন্যাপকিন চাইলে সহজেই পাওয়া যায় না। ফলে ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে ছাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। যা তাদের জন্য অস্বস্তিদায়কও। তাই কীভাবে এ সমস্যা লাগব করা যায় এমন চিন্তা থেকেই এ উদ্যোগ। যেটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এলজি। যার ফলে আলোর মুখ দেখছে উদ্যোগটি। আশা করছি আগামী সপ্তাহে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হবে।

যেভাবে সংগ্রহ করা যাবে স্যানিটারি প্যাড: তৌসিফ আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রতিটি ভেন্ডিং মেশিনে ১০০টি প্যাড রাখা থাকবে। ভেন্ডিং মেশিনগুলো কয়েন অপারেটেড। প্রতিটি মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে ৫ টাকার কয়েন (ধাতব মুদ্রা) ফেললেই বেরিয়ে আসবে একটি প্যাড। সহজেই ছাত্রীরা এটি ব্যবহার করতে পারবেন। ছাত্রীদের মধ্যে এটি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়াতে উদ্বোধনের প্রথম দুই সপ্তাহ বিনামূল্যে ভেন্ডিং মেশিন থেকে প্যাড সংগ্রহ করা যাবে। এরপর থেকে নির্দিষ্ট মূল্যেই প্যাড সংগ্রহ করতে হবে। আর ভেন্ডিং মেশিনে সরবরাহকৃত প্যাডগুলো অত্যন্ত উন্নতমানের। যা সেনোরা ব্র্যন্ডের আল্ট্রা থিন প্যাড। তবে ছাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী পরবর্তীতে অন্য প্যাডও রাখা হতে পারে বলে জানান তৌসিফ আহমেদ।

তিনি আরও জানান, আমদানিকারকরা জানিয়েছেন সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবহারে দুই বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভেন্ডিং মেশিনগুলো থেকে সেবা পাওয়া যাবে। তবে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে একটি স্বেচ্ছাসেবী দল তৈরি করা করে দেয়া হবে। যারা প্যাড রিফিলের কাজটি করবে এবং কোনো ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি হলে অবহিত করবে।

যা বলছেন ছাত্রীরা: এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ছাত্রীরা। তারা বলছেন, ঋতুস্রাব নিয়ে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিবর্তন হচ্ছে তারই প্রমাণ এমন উদ্যোগ। একজন ছাত্র হয়েও ছাত্রীদের জন্য এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। হলে ও অনুষদে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের ফলে স্যানিটারি ন্যাপকিনের কঠিন বিষয়টি সহজলভ্য হবে। এছাড়াও প্যাডের স্বল্পমূল্যের কারণে অর্থেরও সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি ছাত্রী হল ও অনুষদে উদ্যোগটি ছড়িয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এগিয়ে আসে এমনই প্রত্যাশা ছাত্রীদের।


সর্বশেষ সংবাদ