অল্প বৃষ্টিতেই তীব্র জলাবদ্ধতা: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ চরমে
- ববি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৩:১৭ PM , আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৭ PM
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাসে অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। যার ফলে বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের চলাফেরায়, বিনষ্ট হচ্ছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ। তীব্র জলাবদ্ধতায় অনেক শিক্ষার্থীদের মাছ ধরতেও দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের মাঝের খালি জায়গা, খেলার মাঠ এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোতে নিয়মিত পানি জমে থাকে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনাই জলাবদ্ধতার মূল কারণ। পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইটের সলিং করা রাস্তাগুলোয় বহু স্থানে গর্ত হয়ে রয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন যাবৎ পানি জমে থাকে। সম্প্রতি কয়েক দিন টানা বৃষ্টিপাতের ফলে পুরো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমেছে। আশেপাশের এলাকার পানি নামলেও ক্যাম্পাসে পানি দীর্ঘসময় ধরে জমে থাকে। জলাবদ্ধতার কারণে অনেককেই দেখা যায় জুতা হাতে, প্যান্ট গুটিয়ে নোংরা পানির ভেতর দিয়ে ক্লাসে যেতে।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাচল যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকায় জন্ম নিচ্ছে মশা। যার ফলে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু, টাইফয়েডসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষাকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জলাবদ্ধতা আমাদের শিক্ষাজীবনকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ক্যাম্পাসের মূল সড়কগুলো, হলসংলগ্ন এলাকায় পানি জমে যায়। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে দেখি, ক্যাম্পাসে কোনো কার্যকর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল, আর অবকাঠামোগুলোও অপরিকল্পিত। প্রতিবছর একই সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান হয়নি।’
.jpg)
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জুবায়ের হোসেন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘জ্ঞানচর্চার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পানি ডিঙ্গিয়ে এভাবে ক্লাসে যাওয়ার পর অনুভব হয়, যেন আমরা জলাশয়ে এসে পৌঁছেছি। পানির মধ্য দিয়ে জুতা খুলে বা ভিজিয়ে ক্লাসে যাওয়ার দৃশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জার। এ যেন আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে গেছে। এটা কি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র হতে পারে?’
জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো.হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের এই মুহূর্তে এটি নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই, এটি প্রকৌশল শাখা দেখবে। তবে ২য় পর্যায়ের কাজ আসলে সেখানে আমরা ড্রেনেজের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছি। তখন এটি বাস্তবায়ন হবে।’
প্রকৌশল দপ্তরের উপ প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদিন বলেন, ‘পরিকল্পনা দপ্তরে এই বিষয়ে অনেক আগেই আমরা প্রস্তাব জমা দিয়েছি। তারা অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে পারলে এই কাজটা করতে পারব এবং সমস্যা সমাধান হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (অন্তর্বর্তীকালীন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার শীঘ্রই ব্যবস্থা নিব। আমরা গত অর্থবছরে চেষ্টা করেছি, কিন্তু বিভিন্ন কারণে পারিনি ,সমস্যা হয়েছিল। এ বছরেই আমরা চেষ্টা করব। আমরা এস্টিমেটও করে রেখেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় জলাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন বৃষ্টির মধ্যে কাজ করা যায় না। বৃষ্টি কমলে সেই দিনই কাজ করবে।’