কুবিতে ট্যুরের জন্য বাস বরাদ্দকে ঘিরে সমালোচনা, নেপথ্যে যা জানা যাচ্ছে
- কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৭:১৫ PM , আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৪ AM

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন উইকের অংশ হিসেবে নতুন ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বরাদ্দ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসের সংকট থাকলেও একটি নির্দিষ্ট ব্যাচকে বাস সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কারণ, ওই ব্যাচে উপাচার্যের মেয়ে অধ্যয়নরত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিএসই বিভাগ তাদের ওরিয়েন্টেশন উইকের পালনের জন্য ৩ জুলাই নতুন ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার পরিবহন পুল থেকে ১ জুলাই চাহিদাপত্র দিয়ে ফ্রি শিডিউলে বেলা ১১টা থেকে অল্প সময়ের জন্য শিক্ষার্থীদের বাসের জন্য আবেদন করা হয়। শিক্ষার্থীদের অন্য লোকাল পরিবহনে যাতায়াতে নিরাপত্তার শঙ্কা থাকে বলে তারা আবেদনে উল্লেখ করেন। পরিবহন পুল স্বল্প সময়ে ছেড়ে দেব শর্তে বিভাগকে একটি বাস ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা নতুন ক্যাম্পাসে যাওয়া নিষিদ্ধ হলেও কীভাবে পরিবহন নিয়ে সেখানে ঘুরতে যায়, এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফরহাদ কাউসার ফেসবুকে লিখেন, ‘সিএসই-১৯ ব্যাচ বাসে করে নতুন ক্যাম্পাস ট্যুর দিয়েছে। এই হ্যাডম কইত্তে আইলো? ওহ আচ্ছা উপাচার্য মহোদয়ের মেয়ে নাকি এই ব্যাচে ভর্তি হইসে! স্পেশালিটি তো থাকবেই...। কিন্তু কথা হচ্ছে নিউজ করা শুরু হইলে মহোদয়ের চেয়ার নিয়ে যেনো টান না পড়ে...।’
আরও পড়ুন: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘মিড ডে মিল’ চালু হচ্ছে সেপ্টেম্বরে
অর্থনীতি বিভাগের ১৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মামুন বলেন, ‘শহর থেকে ভার্সিটির দূরত্ব অনেক। বাস সংকটের কারণে সেই পথটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসতে হয়। যারা নিয়মিত এই পথে যাতায়াত করেন, তারা জানেন কী পরিমাণ কষ্ট হয়।’
এ বিষয়ে ফার্মেসি বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নাঈম হোসেন বলেন, ‘শুনলাম, আমাদের মহোদয়ের সুযোগ্য কন্যা নাকি উক্ত বিভাগে এবং উক্ত ব্যাচে ভর্তি হয়েছেন। এই দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিতরে প্রবেশ করারই অনুমোদন নাই। আর মহোদয়ের কন্যা বাস নিয়ে প্রবেশ বাহ। মহোদয় বাহ।’
বাংলা বিভাগের ১৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘নতুন ক্যাম্পাস হলো রেস্ট্রিকটেড এরিয়া। সেখানে কীভাবে বাস নিয়ে প্রবেশ করা হয়? আর নতুন ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের জন্য রেসট্রিকটেডই বা থাকবে কেন?’
এ বিষয়ে পরিবহন পুল জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান কর্তৃক স্বাক্ষরিত চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত শিডিউল চালনায় ব্যাঘাত না হলে ক্যাম্পাসের কাছাকাছি (শহর পর্যন্ত) পরিবহন পুল থেকে গাড়ি প্রদান করা হয়ে থাকে। এর বাইরে বা দূরত্বে হলে রেজিস্ট্রার মহোদয়ের অনুমতি সাপেক্ষে গাড়ি প্রদান করা হয়। সিএসই বিভাগের প্রধানের স্বাক্ষরিত চাহিদা কাছাকাছি দূরত্বে হওয়ায় পরিবহন পুল থেকে স্বাভাবিক নিয়মে গাড়ি প্রদান করা হয়েছে। তাই রেজিস্ট্রার বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গাড়ি বরাদ্দের বিষয়টি অবগত করা প্রয়োজন হয়নি।
আরও পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট কমল ১৩ কোটি, গবেষণা খাতে বাড়ল বরাদ্দ
পরিবহন পুলের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মোসারফ হোসেন ভুইয়া বলেন, ‘সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান আমাকে রেজল্যুশন লেটার পাঠিয়েছেন। তাই আমি বাসের অনুমোদন দিই। কুমিল্লা অঞ্চলের মধ্যে যদি বাসের শিডিউল থাকে, তাহলে আমরা বাস দিয়ে থাকি।’
সিএসই বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমি কালকে জানতাম না। আজকে আমি খবর নিয়েছি, ভিসি স্যারের মেয়ে যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো বিভাগ নতুন ক্যাম্পাসে যেতে চেয়েছে কি না, জানি না। তারা চেয়েছে কিন্তু পায়নি, এমন হলে হয়তো বুঝতাম প্রশাসন আমাদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একাডেমিক আলোচনার মাধ্যমে উইকটায় শিক্ষার্থীরা যেন র্যাগিং থেকে দূরে থাকে, সে উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করে ভালো একটা উদ্যোগ নিয়েছি। সেটি প্রশংসিত হওয়ার পরিবর্তে এখন বিতর্ক হচ্ছে, যা আশ্চর্যের।’
ঘুরে দেখানোর বিষয়ে ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা নিয়ে গেছেন। তিনজন শিক্ষককে আমি দায়িত্ব দিয়েছি, ছাত্র উপদেষ্টাসহ তাদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গেছেন। উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পাস ঘুরে দেখানো। তবে আমরা পরিদর্শন করতে পারিনি। পরিবহন পুল অনুমতি দিয়েছে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য। এখানে আমাদের বিভাগ কী অন্যায় করেছে, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।’
আরও পড়ুন: জুলাইয়ের স্মৃতি সংরক্ষণে ও সাহস সঞ্চারণে ১০ প্ল্যাটফর্ম
তবে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘কোনো বিভাগকে বাস দেওয়ার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে ট্যুরে যাওয়ার জন্য কোনো বিভাগের শিক্ষার্থীদের এভাবে বাস দেওয়া যায় না।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, ‘বাস নিয়ে ঘুরতে যাওয়া সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে এই দিন অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোথাও যায়নি।’