ছাত্রলীগ নেতার সনদ নিতে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতা, অতপর...
- গোবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৯ PM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৩১ PM

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) বহুল আলোচিত জুলাই ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ থাকা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা পাভেল সিকদারের সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই বিতর্কিত সহযোগিতার ঘটনাটি প্রকাশ্যে এলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সার্টিফিকেট আটকে দেন। গত ২৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সময় পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পক্ষে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মীরা মিছিল-মিটিংসহ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ নেতা পাভেল শিকদারের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক নিঘাত রৌদ্রের ওপর হামলা করে হাত ভেঙে দেন। জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় নারী শিক্ষার্থী সুবর্ণাকে ধর্ষণের হুমকি দেন। জুলাই আন্দোলনের কর্মসূচি কাভারেজ দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি রাসেল শিকদারের ফোন কেড়ে নেন তিনি। এছাড়াও তিনি বিগত আওয়ামী লীগের আমলে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে।
ফলশ্রুতিতে জুলাই আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীদের বাধায় তার সার্টিফিকেট আটকে যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের সহোযোগিতায় সার্টিফিকেট তুলতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায় এবং শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে সার্টিফিকেট পুনরায় আটকে যায়।
এ বিষয়ে শরীফুল নামে চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীরা জানান, ১৬ জুলাই এর পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশে ছাত্রলীগ হিংস্র হয়ে উঠলেও আওয়ামীলীগের খোদার বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়াতে বিগত ১৫ বছর ধরে এখানের ছাত্রলীগ কর্মীরা হীংস্র এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখিয়েছে। তাদের হীংস্রতার শিকার হয়েছে অসংখ্য সাধারণ শিক্ষার্থী। ৫ আগষ্টের আগেও শফিক ছাত্রলীগের হয়ে হীংস্রতা দেখিয়েছে। হলের সীট দখল, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলাসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তার দ্বারা সংঘটিত হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোবিপ্রবি ছাএদলের কয়েকজন নেতা জানান, ৫ আগষ্টের পর গোবিপ্রবি ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্বের শেল্টারে শফিক সহ ছাত্রলীগের অনেকে ছাত্রদলে নাম লিখিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গোবিপ্রবি ছাত্রদলকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং তাদেরকে পাশে নিয়েই রাজনীতি করতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী পাবেল শিকদার যে কিনা আন্দোলনকারীদের উপর হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল এবং প্রকাশ্যে এক নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি দেয়। এই কুখ্যাত সন্ত্রাসীর সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে শফিক প্রমাণ করে দিয়েছে তারা আওয়ামীলীগের দোসর। আর যারা এদের পুনর্বাসন করেছে তারাও ছাত্রদলের শত্রু এবং সুযোগ সন্ধানী। সুযোগ পেলেই এরা বিষ হয়ে কামড় দিবে।
যদিও ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইনজামাম রাশু বলেন, ছাত্রদলকে আহবান জানাবো এই দোসরদের এবং তাদের শেল্টার দাতাকে চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। অন্যথায় ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গা হারিয়ে ফেলবে।
এই বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনীতির বাইরে সবার বিভাগের বড় ভাইদের সাথে আলাদা সম্পর্ক থাকে। তার বিরুদ্ধে যদি এত অভিযোগ থেকেই থাকে তাহলে কেন এতদিনেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি? প্রশাসন কিভাবে তাকে ছাড়াই এতগুলো সাক্ষর দিল সার্টিফিকেট তোলার কাগজে? আমি তরা বিভাগের ছোট ভাই এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের স্থান থেকে সহযোগিতা করতে চেয়েছি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে শাস্তি দিক কিন্তু এভাবে একজনের সাটিফিকেট আটকে দেওয়া মোটেপ সঠিক নয়।
গোবিপ্রবি ছাত্রদলের সভাপতি দুর্জয় শুভ বলেন, আমরা অভিযোগ শুনছি কিন্তু কোনো প্রমাণ পাইনি। এছাড়াও কোনো ষড়যন্ত্র কিনা সেটাও দেখতে হবে।