ইবিতে ‘ওপর মহলের’ নির্দেশে রাতে ল্যাব ব্যবহারে মানা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ‘ওপর মহল’-এর নির্দেশে শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় ল্যাব রাতে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আগে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিভাগীয় ল্যাবগুলো প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকলেও ইদানীং রাত আটটার পর নিরাপত্তাকর্মীরা গিয়ে ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের বেরিয়ে যেতে বলছেন। এতে একাডেমিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, যা গবেষণার অগ্রগতিকে রুদ্ধ করার শামিল বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, আইসিটি, সিএসইসহ একাধিক বিভাগে বিশেষায়িত গবেষণাগার বা ল্যাব রয়েছে, যেগুলোয় শিক্ষার্থীরা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক গবেষণাভিত্তিক কাজ করে থাকেন। এসব ল্যাবে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জিপিইউ, সেনসিটিভ এক্সপেরিমেন্টাল ইক্যুইপমেন্ট, টেকনিক্যাল সাপোর্ট সিস্টেম ও বিভিন্ন বায়োলজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট রয়েছে, যা গবেষণার জন্য সব সময় সক্রিয় রাখা আবশ্যক। কিন্তু সম্প্রতি বিভাগীয় সভাপতি ও শিক্ষকদের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তাকর্মীরা রাত আটটার পর ওপর মহলের নির্দেশে এসব ল্যাব বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় গবেষণাগার তালাবদ্ধ থাকা, সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হলেও সময়মতো ল্যাবের গেট না খোলা, শিক্ষার্থীদের প্রবেশে অনাহত বাধা দেওয়া, যন্ত্রাংশের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনার পরে ‘শিক্ষার্থীরা চাইলে রাত ১২টা পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষ খোলা রাখা হবে’ শীর্ষক উপাচার্যের বক্তব্য ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গবেষণাকর্ম এভাবে বাধাগ্রস্ত করা হলে ইবি আন্তজার্তিক মানে কীভাবে উন্নীত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু, আসনপ্রতি লড়ছেন ৫১ ভর্তিচ্ছু

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবগুলো শুধুই কোনো কক্ষ নয়, এগুলোই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারখানা। যেখান থেকে রিসার্চ পেপার, প্রজেক্ট, পেটেন্ট আর আন্তর্জাতিক সাফল্যের দেখা পাওয়া যায়। অথচ দাপ্তরিক সময়েও কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে তালা ঝুলতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের আনাগোনা না থাকায় ধুলাবালুতে জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় গবেষণাগার। ল্যাবের এ বেহাল অবস্থা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির দুরবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতার প্রতি প্রশ্ন তুলেছে। সেন্ট্রাল ল্যাবের এ দুরবস্থা দূরের উদ্যোগ না নিয়ে প্রশাসন এখন বিভাগীয় ল্যাবগুলোর গবেষণা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। এতগুলো বছর ল্যাবের কার্যক্রম নিয়ে কোনো প্রশ্ন না উঠলেও এখন হঠাৎ কেন ওপর মহলের নাম ব্যবহার করে ল্যাব বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এর কোনো সদুত্তর পাচ্ছেন না তারা।

২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী আবু রেজা বলেন, ‘ভিসি স্যার দায়িত্ব নেওয়ার পর ইতিবাচক অনেক সিদ্ধান্ত নিলেও প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি নিরাপত্তার অজুহাতে এমন কিছু আচরণ ও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা উপাচার্য মহোদয়ের বক্তব্য ও শিক্ষার্থীবান্ধব অবস্থানের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। অভ্যুত্থানের পর আমরা একটি মুক্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব, গবেষণানির্ভর ক্যাম্পাসের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু কিছু ঘটনা আমাদের সেই স্বপ্নকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অবিলম্বে ল্যাব ব্যবহারে অহেতুক ও অযৌক্তিক বাধা প্রত্যাহার করতে হবে।’

বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আসাদ বলেন, ‘গবেষণাগারে কাজ করতে গেলে একাধিক জটিল ধাপ পার করতে হয়। দরখাস্ত, বর্ষভিত্তিক বিবরণ, কোন স্যারের ছাত্র—এসব যাচাই-বাছাইয়ের পর অনুমতি মেলে। গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হতাশাজনক। কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে মাত্র দু-তিনটি যন্ত্র সচল আছে, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খরচও শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে আসে। শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অর্থ খরচ করেও শিক্ষকরা কোনো অভিযোগ করেন না।’

আরও পড়ুন: শেষ হলো কুবির ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা, প্রশ্নপত্র দেখুন এখানে

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের সভাপতি ইজমাতুল ফেরদৌস ও সাধারণ সম্পাদক জুনাইদুল মোস্তফার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ হতে ওপর মহলের নির্দেশ আছে, মর্মে রাত আটটার পর এসব বিভাগের ল্যাবে শিক্ষার্থীদের কাজ করতে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষকদের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের ল্যাব থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ শুধু নিয়মের অপপ্রয়োগ নয়; বরং এটি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ও গবেষণাকেন্দ্রিক প্রয়াসে সরাসরি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। শিক্ষা ও গবেষণার পথ কখনোই রুদ্ধ হতে পারে না। জ্ঞানভিত্তিক, শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গঠনে সবার সচেষ্ট হোক। গবেষণাকাজে নিরবচ্ছিন্ন ল্যাব-ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

জানতে চাইলে আইসিটি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আমাদের বিভাগের বিশেষায়িত ল্যাবটি চলছে। এ ল্যাবের সক্ষমতা নিয়ে আমরা গর্ব করি, কারণ আমাদের শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে দেশ-বিদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সফলতা নিয়ে আসছে। বিভাগের পক্ষ থেকে ল্যাব বন্ধ করে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এত দিন কখনো আমাদের আলাদা অনুমতি নিতে হয়নি। তবে এর আগের ছুটিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে ক্যাম্পাস ছুটির পরও ল্যাব কর‍তে হলে আলাদা অনুমতি লাগবে। কয়েক দিন আগে শিক্ষার্থীরা আমার সুপারিশসহ একটি আবেদন দিলেও সেটা হয়তো এখনো প্রসেসিংয়ে আছে। যেহেতু প্রশাসন নিরাপত্তার কারণে এ পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাই আমরা সেই মোতাবেকই ল্যাব ব্যাবহারের জন্য আবেদন করব।’

আরও পড়ুন: চার উপজেলার রোগীর চিকিৎসায় একজন চিকিৎসক

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘গবেষণা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার কোনো ইচ্ছা প্রক্টরিয়াল বডির নেই। তবে রাতে ল্যাব করতে গেলে সিকিউরিটি সেল আটকে দিতে পারে, কারণ তারা শিক্ষার্থীদের চেনে না, বহিরাগত কেউ শিক্ষার্থী সেজে ভেতরে যেতে পারে৷ বিভাগের সভাপতির অনুমতি থাকলেও সিকিউরিটি সেল তো কথা শুনবে প্রক্টরের। তাই কোন বিভাগের কোন ল্যাব কতক্ষণ চলবে, কয়জন ল্যাব করবে, কোন শিক্ষক থাকবে—সেসব বিষয়ে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকা প্রয়োজন। আমরাও চাই শিক্ষার্থীরা গবেষণা করুক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বৃদ্ধি হোক।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence