সুযোগ খুঁজছেন বেরোবির আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা, সতর্ক অবস্থানে শিক্ষার্থীরা

  © সংগৃহীত

জুলাই বিপ্লবের পর কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা। তবে এবার তারা একত্রিত হতে নতুন পথে হাঁটছেন। কৌশল হিসেবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নিয়ে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। এরই মধ্যে সমিতির গঠণতন্ত্র লঙ্ঘন করে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়েছে।

তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের নির্বাচন হলে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আগামীকাল রোববারের (৫ জানুয়ারি) মধ্যে ছাত্র সংসদের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে প্রশাসনকে সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা। এরমধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগানোর হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, জুলাই বিপ্লবের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশার জায়গায় রয়েছে। দেশজুড়ে যে সংস্কার চলছে, তা যেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো- কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করে তা প্রকাশ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় হামলাকারী ৭২ শিক্ষার্থীসহ জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। ৫ জানুয়ারির মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ ছাড়া ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ ঘোষণার পরও রাজনীতি চালুর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। লেজুড়বৃত্তিক কোনো ছাত্র রাজনীতির কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলে শাস্তি প্রণয়নে নীতিমালা সিন্ডিকেট সভায় পাস করতে হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে অন্য কোনো সংগঠনের নির্বাচন হলে তা প্রতিহতের ঘোষণাও দেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা।

এদিকে আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে থাকার সুযোগে নিজেদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একাংশ। তড়িঘড়ি করে সমিতির নির্বাচন দিতে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক আমির শরীফকে। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষকে পরবর্তী নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার করার নিয়ম। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের বর্তমান কার্যকরী সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানজিদ ইসলাম ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক বিপুল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ আমলে শুরু হওয়া বেশিরভাগ শিক্ষক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ২০৬ জন শিক্ষকের মধ্য প্রায় ১৮০ জনই আওয়ামীপন্থি বলে জানা গেছে। আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা ৩টি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে নীল দলের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯০ জন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের মধ্যে দুটি ভাগে আরও ৯০ জন শিক্ষক রয়েছেন। নীল দল ও প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একটি অংশ বিগত প্রশাসনের সঙ্গে থাকায় এই দুই অংশের নেতারা অনেকটাই অস্বস্তিতে আছেন। তবে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আরেকটি অংশ আওয়ামীপন্থি শিক্ষক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানের নেতৃত্বে নির্বাচনী অনুষ্ঠানের জন্য তোড়জোড় করে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য শিক্ষকদের চাপ দেওয়া ও শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন সদস্যকে ফোন করেছেন বলে জানা যায়। এ অংশে তাবিউর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আরও অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মার্কেটিং বিভাগের মাসুদ হাসান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ইলিয়াস সাব্বির, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের আবু কালাম মো. ফরিদুল ইসলাম, ইতিহাস বিভাগের সোহাগ আলী, দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের আব্দুর রাকিব ও ইমদাদুল হকসহ অনেকে। তবে শিক্ষকদের আশঙ্কা এবারের নির্বাচনে বিনা ভোটেই নির্বাচিত হবেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের এ অংশ। নির্বাচিত হয়েই বর্তমান প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলবেন।

এ বিষয়ে তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, আমি তো ঢাকায় ছিলাম। এ বিষয়ে জানি না। আর শিক্ষক সমিতি তো একটা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। রাজনীতির সঙ্গে তো এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এক্সিকিউটিভ মেম্বাররা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। আর সংস্কারের সঙ্গে তো শিক্ষক সমিতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবি সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষক সমিতির প্রহসনমূলক ভূমিকা আমরা দেখেছি। শিক্ষক সমিতির নামে আওয়ামী দোসরদের পূনর্বাসন এ ক্যাম্পাসে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো নির্বাচনের পূর্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তা নাহলে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নামক যে প্রহসন সেটিকে প্রতিহত করবে শিক্ষার্থীরা।

আরেক সমন্বয়ক আরমান হোসেন বলেন, এসব সমিতি নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা ছাড়া শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো কার্যক্রমে অংশ নেয়নি। তাই আমরা চাই অতি দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন বাস্তবায়িত হোক। অন্য কোনো নির্বাচন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনোভাবে মেনে নেবে না।

বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক ফেরদৌস রহমান বলেন, সংস্কারের আগ পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি গঠন করা হয়নি। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শিক্ষক সমিতি কী ভূমিকা পালন করেছিল সেটা সবারই জানা। শিক্ষক সমিতির শেষ মিটিংয়ে সরকার পতনের এক দাবি উঠলে সভাপতি সেখান থেকে পালিয়ে যান এবং সরকার পতনের পর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ হত্যার আসামি হওয়ায় পলাতক রয়েছেন। তারপরেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত তারা কীসের ভিত্তিতে নিল তারাই ভালো জানেন। আমরা চাই আগে ছাত্র সংসদ গঠনের মাধ্যমে প্রশাসনের সংস্কার আনতে হবে পরবর্তীতে শিক্ষক সমিতি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, আমার চাওয়া ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এজন্য সিন্ডিকেট সভা করে কমিটি করে দিয়েছি। কালকে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। গত চারমাসে তো শিক্ষক সমিতির কোনো কর্মসূচি দেখলাম না। জুলাই বিপ্লবের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কর্মসূচিতে আসেনি। আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে নির্বাচন হচ্ছে বলে প্রশ্ন করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence