অধিভুক্ত সাত কলেজ

দ্বিগুণ জরিমানায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের, ক্ষোভ 

অধিভুক্ত সাত কলেজ
অধিভুক্ত সাত কলেজ  © লোগো

জরিমানার টাকা দ্বিগুণ করে পুনঃভর্তি হয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষাবর্ষের মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ৩০ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও ফরমপূরণের ফি দিয়ে ২০২৩ সালের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রতি বছরের জন্য পুনঃভর্তির জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। যা আগে ৫ হাজার টাকা ছিল বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সাতটি কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। 

সোমবার (৭ অক্টোবর) জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জরিমানার টাকা দ্বিগুন করে পুনঃভর্তি হয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়ার তথ্য তথ্য জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের অনার্স প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষ নিয়মিত, অনিময়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষাবর্ষের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় পুনঃভর্তি হয়ে অনিয়মিত হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক তাদের ফরম পূরণের অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। গত ১ অক্টোবর ডিনস্ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 

আরও পড়ুন : সাত কলেজ নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে

ঢাবি জানিয়েছে, সাত কলেজের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ পরীক্ষা দিতে ৩০ হাজার, দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষা দিতে ২০ হাজার ও প্রথম বর্ষ পরীক্ষা দিতে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। 

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ পরীক্ষা দিতে ২০ হাজার ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। আর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ পরীক্ষা দিতে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। ২০১৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষে পুনঃভর্তি হয়ে কোন শিক্ষার্থী যদি পরীক্ষায় অংশ নিতে চায় তাদের ফরম পূরণের ফিয়ের অতিরিক্ত জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে। 

একইসঙ্গে অধিভুক্ত সাত কলেজের ২০২৩ সালের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বাড়িয়েছে। আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত এসব পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। ১৫ অক্টোবর কলেজ থেকে ভেরিফাই করার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ব্যাংক ড্রাফটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। 

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ তারিখের পর বিলম্বে ফরম পূরণের সুযোগ থাকবে না।  

আরও পড়ুন : সাত কলেজের চূড়ান্ত ভর্তির তালিকা প্রকাশ

ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী জুবায়ের হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এটাকে বলে প্রহসন। যাদের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে তারা বেশিরভাগই পড়ালেখায় একটু কম মেধাবী। তারা চেষ্টা করেনি এমন না। তবে এখন যদি প্রতিবছরের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয় সেটা তাদের প্রতি অবিচার হবে। আপনারা কলেজ থেকে কলেজিয়েট, ডিসকলেজিয়েট ফি যেটা নেন সেটাও আপনাদের অধিকার নেই। ইম্প্রুভমেন্টের নামে যে টাকাটা নেন সেটাও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকগুণ বেশি। এই প্রহসন বন্ধ করেন।

মিম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এটা অনুচিত। একটা শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা আর্থিক বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য রেজাল্ট খারাপ হতেই পারে। আবার কোনো বিষয়ে সে কম বোঝে, সে জন্য সে ফেল করতেই পারে। তাই বলে এতো টাকা জরিমানা নেওয়া ঠিক না। আর সাত কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদের কাছে এই টাকার পরিমাণটা অনেক। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কোনো বিষয় সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানা। আর নিজের বিবেক, বুদ্ধি, যোগ্যতা বৃদ্ধি করা।আর শিক্ষকের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের এই বিষয়গুলো অর্জন সহায়তা করা। সেখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা নয়। আপনারা এই বিষয়টি অনুগ্রহপূর্বক বিবেচনা করে দেখুন।

আরও পড়ুন : ‘সবার সাথে আলোচনা করে সাত কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দিতে হবে’

সোহরাওয়ার্দী কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লিখন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঢাবির বাণিজ্যিক শাখা সাত কলেজে ব্যবসায়িক পণ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের নন-কলেজিয়েট ও ডিস-লেজিয়েট পদ্ধতি। ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের এই ফাঁদে ফেলে জরিমানা আদায় করে নিচ্ছে ঢাবি। নন-কলেজিয়েট ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা! ডিস কলেজিয়েট ফরম পূরণ করতে পারবে না। অনিয়মিত তো এখান থেকে তৈরি হয়!! ফলাফল মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ম- কানুন ও জরিমানা পদ্ধতি। সঠিক সময়ে পরীক্ষা না নিলে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিমানা, জবাবদিহিতা কেন নাই?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মো. ইব্রাহিম মুরাদ নামের একজন শিক্ষার্থী লিখেছেন, মানি ইজ বিজনেস, বিজনেস ইস সেভেন কলেজ, ইম্প্রুভমেন্ট ইজ মানি, মানি ইজ নম্বর।

আকবর নামে চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া জন্য আর কোন সময় পাননি। এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি ফরম বিলাপ শুরু করার আগে দেওয়া দরকার ছিলো। প্রতি বছর নতুন নিয়ম বানিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া একটা বৈষম্য ছাড়া আর কিছু না। একজন শিক্ষার্থী ইমপ্রুভমেন্ট দেবে তার জন্য ২২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তার পরে আবার দ্বিতীয় মেয়াদ বাড়িয়ে আবার নতুন নিয়ম করে চাপিয়ে দেওয়া হল। সত্যি এখন ভাবনার বিষয় দাঁড়িয়েছে। ১০ হাজার টাকা জরিমানা তাই বলে?

জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহারুল হক চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ ৬ বছর। গতবছরও ৫০০০ টাকা জরিমানার বিধান রেখে সাত কলেজের অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।


সর্বশেষ সংবাদ