ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়: অভিযোগ এবার ট্রেজারারের বিরুদ্ধে

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এস এম এহসান কবীর
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এস এম এহসান কবীর  © ফাইল ছবি

দেশের ফাজিল-কামিল মাদ্রাসাগুলোর সার্বিক তত্ত্বাবধান করে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টির। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের পর এবার ট্রেজারারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ নিজ অ্যাকাউন্টে রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি করে কম রেটে ব্যাংকে এফডিআর করা, একইসঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করাসহ ১৫টি অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে জামা পড়েছে। 

জানা গেছে, দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারারের দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এস এম এহসান কবীর। প্রথম মেয়াদে তেমন কোন অভিযোগ না উঠলেও দ্বিতীয় মেয়াদে এসে চলতি মাসের জানুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে। ওই মাসের ১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে মো. সাদ্দাম হোসেন নামে একজন ট্রেজারারের নানা অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এস. এম. এহসান কবীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে অভিযোগ জমা দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। অনেকের অনিয়ম বন্ধ হয়ে গেছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে এগুলো ছড়াচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের পর এবার ট্রেজারারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ নিজ অ্যাকাউন্টে রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি করে কম রেটে ব্যাংকে এফডিআর করা, একইসঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করাসহ ১৫টি অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে জামা পড়েছে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়েছে, ট্রেজারার এস এম এহসান কবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল পরিমাণ অর্থ ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিজ ব্যাংক হিসাবে রেখেছেন। যা চরম অন্যায় ও মারাত্মক পর্যায়ের দুর্নীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি করে কম রেটে ব্যাংকে এফডিআর করার অভিযোগও করা হয়েছে।

২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ কোটি টাকার এফডিআর নিয়ে বড় রকমের দুর্নীতি করেছেন ট্রেজারার। দেশের শীর্ষস্থানীয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সূচকে ভালো একটি ব্যাংক বেশি রেট দিলেও ২ শতাংশ কম রেটে অন্য একটি ব্যাংকে এফডিআর করেন ট্রেজারার এস এম এহসান কবির। ফিক্সড ডিপোজিট থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালে ট্রেজারার হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এস. এম. এহসান কবীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। সেখানে অফিস করে প্রায়ই তিনি দুপুরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ৩৮ জনকে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায় ৪ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। নিয়োগে সহযোগিতার কারণে প্রায় কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন এস এম এহসান কবির।

চার পৃষ্ঠার ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো চেক ও বিলের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কমিশন নেন তিনি। কমিশন না দেওয়া হলে তিনি চেক ও বিলে স্বাক্ষর করেন না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় শতকোটি টাকার কমিশন নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজ অফিসের কম্পিউটার অপারেটরকে সেকশন অফিসারের সমান বেতন দেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জমি নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন এস এম এহসান কবির। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রয়কৃত জমিতে উন্নয়ন কাজের প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করেছেন তিনি। পরবর্তীতে পরিকল্পনা দপ্তরের পরিচালক মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে উন্নয়ন কাজ শুরু করেন।

দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসা ও কেন্দ্র পরিদর্শনে যাওয়ার পর অধ্যক্ষদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও করা হয়েছে ট্রেজারার এস এম এহসান কবীর বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছে, এস এম এহসান কবীর বিভিন্ন মাদ্রাসা ও কেন্দ্রে যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্টিকার যুক্ত গাড়িতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাব দেখিয়ে পরিদর্শনে যাওয়া মাদ্রাসা ও কেন্দ্র থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, কম্পিউটার ভিলেজের জন্য ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য ৩০ লাখ টাকা বাজেট থাকলেও ইউজিসির অনুমতি ছাড়াই কম্পিউটার ভিলেজের ৮০ লাখ টাকার বিল পাস করে দেন। এছাড়া তিনি মাদ্রাসা শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করে থাকেন। মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়েও নানা সময় বাজে মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন: ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

এ বিষয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ট্রেজারারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছি। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অভিযোগের সত্যতা থাকলে সরকারের এ বিষয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত। 

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এস এম এহসান কবিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. হাসিনা খান ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে সংস্থাটির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা সেটি খতিয়ে দেখব।


সর্বশেষ সংবাদ