মাস্টার্সে আগ্রহ কমছে স্নাতকদের

মাস্টার্সে আগ্রহ কমছে স্নাতকদের
মাস্টার্সে আগ্রহ কমছে স্নাতকদের  © সংগৃহীত

উন্নত জীবন ও উচ্চতর ডিগ্রি লাভের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিদেশমুখী হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। এছাড়া স্নাতক শেষ করে অনেকেই চাকরি জীবনে প্রবেশ করছেন। ফলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষ করার পর স্নাতকোত্তর করছেন না প্রায় এক চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারক সংস্থা ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চিত্র।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে মানসম্মত শিক্ষার অভাব ও চাকরির সুযোগ সীমিত হওয়ায় বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। এছাড়া সব সরকারি এবং অনেক বেসরকারি চাকরির জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রির প্রয়োজন না থাকার কারণেও অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করেই চাকরির দিকে ঝুঁকছেন বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

২০২২ সালে গ্রাজুয়েটদের মধ্যে ১ লাখ ১১ হাজার ৮২৯ জন শিক্ষার্থী দেশে মাস্টার্স ডিগ্রিতে ভর্তি হননি। যার ফলে স্নাতক শেষ করা মোট শিক্ষার্থীর এক চতুর্থাংশই দেশে উচ্চতর ডিগ্রির বাইরে থেকে যাচ্ছেনইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে ১৫৭টিতে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৮৮৩ জন শিক্ষার্থী স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তাদের মধ্যে থেকে মাত্র ৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৪জন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) প্রোগ্রামে ভর্তি হন। অর্থাৎ ১ লাখ ১১ হাজার ৮২৯ জন শিক্ষার্থী এই প্রোগ্রামে নথিভুক্ত হয়নি, যার ফলে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ বা এক চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী দেশে উচ্চতর ডিগ্রির বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

তবে শিক্ষাবিদদের মতে, সকল শিক্ষার্থীর জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অপরিহার্য নয়। শিক্ষার্থীদের চাকরির ক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করে তারা উচ্চতর ডিগ্রি বেছে নিতে পারে। তাই অনেকে চাকরি শুরু করার পরেও ক্যারিয়ারে অগ্রগতি ও পদোন্নতির জন্য উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে।

এদিকে ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের ৫৫টি দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৫১ জন এবং ২০২০ সালে ছিল ৪৪ হাজার ৩৩৮ জন। অর্থাৎ প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।

Community College Initiative Program (CCI)ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য পাড়ি দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা 

দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত না হওয়াকে এর কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলো উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে। ফলে বিদেশে ডিগ্রি নিতে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আগ্রহী হচ্ছেন তারা। আর এ কারণে দেশ হারাচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক মূলধন।

ইউজিসির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেসরকারিভাবে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর না করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা সব থেকে বেশি। দেশের ১০৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে আসন রয়েছে ৭৮ হাজার ৭৪৩টি। কিন্তু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন মাত্র ২৩ হাজার ৬০১ জন। অথচ বছরটিতে বেসরকারিভাবে পরিচালিত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৮ জন শিক্ষার্থী।

সারাবিশ্বে এখন উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা চলছে। তাই সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা টিকে থাকছে বলেই পড়তে যাচ্ছে। তারা যদি বাইরে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে তবে সেটি কল্যাণকর এবং আমাদের জন্য ভালো সংবাদ অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আবদুল ফায়েজ, সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, সব শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। যারা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হতে ইচ্ছুক তাদের অবশ্যই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের শিক্ষার্থীদের স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে চাকরির বাজারে প্রবেশ করা উচিত।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর করেন না অনেক শিক্ষার্থী। ইউজিসির প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালে দেশের ৫০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেখানে ছিল ৫৩ হাজার ২৪২ জন, সেখানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া শিক্ষার্থী ছিল মাত্র ৩০ হাজার ৫৫৩ জন।

New Project - 2024-02-23T142309-486 স্নাতকোত্তরের জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন গ্রাজুয়েটরা

অন্যদিকে কলেজ ও অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩ তদারক বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়) বছরটিতে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরে ভর্তি ছিল। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে স্নাতকের তুলনায় স্নাতকোত্তরে আসন সংখ্যা প্রায় অর্ধেক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আবদুল ফায়েজ বলেন, আমি এ বিষয়টিকে নেতিবাচক মনে করছি না। কেউ যদি দেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চায়, তবে তারও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এখন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান আগের থেকে ভালো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আগ্রহের বিষয়টি তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর সবাইকে যে মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে হবে সেই ব্যবস্থা থেকে পুরো পৃথিবী সরে আসছে। অনেক কর্পোরেট চাকরিতেও উচ্চতর ডিগ্রি প্রয়োজন হয় না। তাই সবার এই ডিগ্রি নেয়ার প্রয়োজন নেই।

শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে সুযোগের ঘাটতি নেই। সারাবিশ্বে এখন উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা চলছে। তাই সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা টিকে থাকছে বলেই পড়তে যাচ্ছে। তারা যদি বাইরে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে, তবে সেটি কল্যাণকর এবং আমাদের জন্য ভালো সংবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ