অনুমতি ছাড়াই জবির মাইক্রোবাস নিয়ে দাওয়াতে অধ্যাপক, ঘটল দুর্ঘটনা

দুর্ঘটনা কবলিত জবির মাইক্রোবাস
দুর্ঘটনা কবলিত জবির মাইক্রোবাস

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে উপাচার্যের অনুমতি ছাড়াই একটি মাইক্রোবাস ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের মেঘনা সেতু থেকে নামার সময় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের মাইক্রোবাসটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পরবর্তীতে দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাস নিয়েই পারিবারিক একটি দাওয়াতে যোগদান শেষে ঢাকায় ফিরে আসেন অধ্যাপক ড. গোলাম মোস্তফা। গত ২০ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দু’টি বাস ও দু’টি মাইক্রোবাস দেওয়া হয়। তার মধ্যে একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ ৫৬-১৬১২) তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিনের জন্য বরাদ্দ দেন। এরপর থেকে অনুষদের দাপ্তরিক কার্যক্রমের জন্য সেটি ব্যবহার হচ্ছিল। চালকের বেতন বাদে মাইক্রোবাসটির খরচ বহন করে আসছে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ।

শর্ত রয়েছে, মাইক্রোবাসটি ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমতি নিতে হবে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করলে তেল খরচ ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে। কিন্তু গত ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের মাইক্রোবাসটি নিয়েই মেঘনা ব্রিজ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটি দাওয়াতে যোগদান করেন অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মোস্তফা।

ব্রিজ থেকে নামার সময় একটি বাইসাইকেল রাস্তা ক্রস করতে গিয়ে মাইক্রোবাসটির সামনে উঠে যায়। ফলে সামনের অংশটি বেকে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঢাকার বাইরে মাইক্রোবাস নিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমি দুর্ঘটনার পরে বিষয়টি জেনেছি। কীভাবে এমন হয়েছে, গাড়ির কি অবস্থা, এসব বিষয়ে একটি রিপোর্ট রেজিস্ট্রার দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি পরিবহন প্রশাসককে।’ 

দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসটি নিয়ে শুক্রবার রাতেই ঢাকায় ফেরেন অধ্যাপক ড. গোলাম মোস্তফা। তবে প্রায় এক সপ্তাহেও মেরামত করা হয়নি। এ ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অনুষদের জন্য বরাদ্দ হলেও নিয়মানুযায়ী উপাচার্যের অনুমতি ছাড়াই ঢাকার বাইরে মাইক্রোবাসটি পারিবারিক কাজে নিয়ে যাওয়া এবং দুর্ঘটনা কবলিত হবার পরও মেরামত না করা এক প্রকার অবহেলা বলে অভিযোগ তাদের। 

চালক জুয়েল রানা বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে রওনা দিই ঢাকা থেকে। মেঘনা ব্রিজ থেকে নামার সময় বাইসাইকেল হঠাৎ করে সামনে উঠে যায়। সেই চালকই সবার সামনে বলেছে, আমার কোনো দোষ ছিল না। স্যার ও স্যারের স্ত্রী গাড়িতে ছিলেন।’

আরো পড়ুন: একক ভর্তি পরীক্ষা: অধ্যাদেশের খসড়া মন্ত্রণালয়ে যাবে আগামী সপ্তাহে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি এখন কাজে ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, ‘মাইক্রোবাসটি বিজনেস ফ্যাকাল্টির। কেবল চালক পরিবহন পুলের। তবে মাইক্রোবাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ। ইতিমধ্যে বিস্তারিত ট্রেজারার স্যারকে জানিয়েছি৷’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাকে এক ছাত্র ফোন দিয়ে জানিয়েছিল যে মেঘনা ব্রিজ থেকে নামার সময় আমাদের একটি মাইক্রোবাস দুর্ঘটনাকবলিত হয়। পরের দিন জানতে পারি, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন গাড়িটি নিয়ে একটি দাওয়াতে গিয়েছিলেন।’


সর্বশেষ সংবাদ