শিক্ষাছুটিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ আবাসিক শিক্ষক, ব্যহত হচ্ছে কার্যক্রম
- কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:২৩ PM , আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৩ PM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হলের দায়িত্বে থাকা ১১ জন শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন। ফলে হলগুলোতে দেখা দিচ্ছে নানা রকম সমস্যা। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের কার্যক্রম পরিচালনা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, পত্রিকা কক্ষ, লাইব্রেরির দেখাশোনা, খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন, হলের সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, হলের ডাইনিংয়ে খাবারের মান পর্যবেক্ষণ এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব থাকে আবাসিক হলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের।
তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে চিত্র ভিন্ন। কালেভদ্রে তাদের দেখা পাওয়াও দুষ্কর। ফলে আবাসিক শিক্ষকদের চিনেনেই না শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে আবাসিক হলের দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হলের ১১ জন শিক্ষক।
দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে মো. মাছুম বিল্লাহ ও নয়ন বণিক, কাজী নজরুল ইসলাম হলে মো. এনামুল হক ও মো. মুর্শেদ রায়হান, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে চৌধুরী শাহরিয়ার মোজাম্মেল ও মো. মুহিব্বুল্লাহ, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলে রাশেদ আহমেদ, সংগীতা বশাক ও সাদিয়া জাহান, শেখ হাসিনা হলে মো. রাসেল মনি ও নিশাত নিগার শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।
এদিকে দায়িত্বে থাকা আবাসিক শিক্ষকদের শিক্ষা ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সাহেদুর রহমান বলেন, আমাদের দুইজন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। আমাদের কাজে এখনো তেমন প্রতিবন্ধকতা আসেনি। এছাড়া উপাচার্য মহোদয় আমাদের যেকোনো সমস্যায় দ্রুত পদক্ষেপ নেন। খুব বেশি একটা প্রবলেম হচ্ছে না, তাই এখনো উপাচার্য মহোদয়কে বলিনি। আশা করি আমরা যখনই বলব তখনই উনি দিয়ে দিবেন।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের প্রাধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের তিনজন শিক্ষক (হাউজ টিউটর) শিক্ষা ছুটিতে চলে গেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে উনাদের জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিছুদিন আগে আমি ভিসি স্যারকে এ বিষয়ে বলছিলাম, আমার এখানে মেম্বার কম, ইমার্জেন্সি দুই-একজনকে প্রয়োজন। পরে স্যার বিষয়টা দেখবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে আবাসিক শিক্ষকদের শিক্ষাছুটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, যারা শিক্ষাছুটিতে আছেন তাদের পদ আপনা-আপনি খালি হয়ে গেছে। আর এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই কতজন থাকতে হবে। নাম যখন আসবে তখন দিলেই হয়ে যাবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জানেন।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবাসিক শিক্ষকদের তখনই দেখতে পায়, যখন হল প্রাধ্যক্ষ কয়েকজন হাউজ টিউটরদের নিয়ে হল পরিদর্শন করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা আছেন তারাই নিয়মিত হলে আসেন না। তারমধ্যে অনেকেই শিক্ষাছুটিতে থাকা সত্ত্বেও তাদের স্থানে কাউকে না নেওয়া প্রশাসনের উদাসীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আসলে স্যাররা নিয়মিত হলে আসেন না, সেখানে নাম কি করে জানব। কারা কখন দায়িত্বে থাকে তাও জানা হয় না।
এদিকে আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও বিভিন্ন ঘটনা বৃদ্ধিতে আবাসিক শিক্ষকদের নজরদারিহীনতা প্রধান কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। গেল বছর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে কাজী নজরুল ইসলাম হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়।
এর আগে ২০১৬ সালের শোকাবহ আগস্টের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বলনের পর আধিপত্য বিস্তার ও হল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন খালিদ সাইফুল্লাহ। ২০২০ সালে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে সিট নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে সজীব বণিক নামে এক সাংবাদিকের জিনিসপত্র ভাঙচুর ও তাকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পরিচয়ে বঙ্গবন্ধু হলে উঠার চেষ্টা করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রেজা-ই-এলাহি সমর্থিত অছাত্ররা। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গত ২১ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ সাহেদুর রহমানের সাথে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিনের বিরুদ্ধে সিট নিয়ে শাসানোর অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও হলগুলোতে প্রশাসনকে পাশ কাটিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সিট নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক লাঞ্ছনা, নিয়ম অমান্য, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, ডিজে পার্টি করে সিনিয়রকে মারধর, নেত্রীদের হাতাহাতি, রুমে নিয়ে শাসানো, মাদকের আসর বসানো সহ নানা অভিযোগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
এসকল ঘটনায় হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নজরদারী না থাকা এবং শিক্ষাছুটিতে থাকার কারণে হলের যথাযথ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়াকে দায়ী করছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ফলে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন কে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য দপ্তরের সেকশন অফিসার নূর মোহাম্মদ।