কটকা ট্রাজেডি দিবস আজ

১৯ বছর আগে প্রাণ হারায় বুয়েট-খুবির ১১ শিক্ষার্থী

সেই দিন প্রাণ হারানো খুবির স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন শিক্ষার্থী
সেই দিন প্রাণ হারানো খুবির স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

আজ ১৩ মার্চ। ২০০৪ সালের এই দিনে সুন্দরবনের কটকায় সফরে গিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২ জনসহ মোট ১১ জন ছাত্র-ছাত্রী সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সেই থেকে প্রতিবছর দিনটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। 

এবারও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে কটকা ট্রাজেডি স্মরণে পালিত হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) শোক দিবস। এ উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সাজানো হয় শোকাবহে। শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বরে সকাল ৯টায় কালোব্যাজ ধারণসহ ৯টা ১৫ মিনিটে একটি শোকর‌্যালি শুরু হয়ে প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে কটকা স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়। 

শোকর‌্যালিতে উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্ট ও বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন। এর পরপরই কটকা স্মৃতিস্তম্ভে উপাচার্যের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপত্য ডিসিপ্লিনসহ বিভিন্ন ডিসিপ্লিন, সকল হল, শিক্ষক সমিতি ও অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।

এছাড়া সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত শাহাদতবরণকারী শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অতঃপর সেখানে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেনের পক্ষে অভিব্যক্তি পাঠ করে শোনান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস।

আলোচনা অনুষ্ঠানে সেই ঘটনাকে স্মরণ করে উপ-উপাচার্য বলেন, ২০০৪ সালের এ দিনটিকে আমরা প্রতি বছর শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছি। যখন এই কটকা স্মৃতিস্তম্ভে আসি তখন আমরা শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ি। ১৩ মার্চের ঘটনা ও হাদী চত্বরের ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক। এরকম ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুর বা অন্যান্য ভ্রমনের স্থান নির্ধারণ ও সময়ের ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে। 

এসময় আরও বক্তব্য রাখেন ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, কটকায় সেদিন যে ঘটনাটি ঘটেছিলো তা সারা দেশে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। দুর্ঘটনায় পীড়িত এ জনপদের মানুষও সেদিন মেধাবী এই ছাত্র-ছাত্রীদের অকাল মৃত্যুকে কোনোভাবেই মানতে পারেনি। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও সাবধান থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।  

স্থাপত্য ডিসিপ্লিন প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. শেখ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষক গৌরী শংকর রায়, ছাত্র-বিষয়ক পরিচালকের পক্ষে সহকারী ছাত্র-বিষয়ক পরিচালক মোহাম্মদ রাকিবুল হাসান সিদ্দিকী। পরে শাহাদতবরণকারী শিক্ষার্থীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি আব্দুল কুদ্দুস। আলোচনা পর্ব শেষে উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, ডিনবৃন্দ, রেজিস্ট্রারসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ শাহাদাত বরণকারীদের আলোকচিত্র নিয়ে আয়োজিত প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। এছাড়া দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাদ যোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল, এতিমদের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজ, সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে শোকসভা ও স্মৃতিচারণ এবং সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে কটকা স্মৃতিস্তম্ভে আলোকসজ্জা।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন শিক্ষার্থী যারা এ দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন তারা হলেন— আরনাজ রিফাত রূপা, মো. মাহমুদুর রহমান, মাকসুমুল আজিজ মোস্তাজী, আব্দুল্লাহ হেল বাকী, কাজী মুয়ীদ বিন ওয়ালী, মো. কাওসার আহমেদ খান, মুনাদিল রায়হান বিন মাহবুব, মো. আশরাফুজ্জামান, মো. তৌহিদুল এনাম। এ ছাড়া বুয়েটের দুজন ছাত্রের নাম সামিউল ও শাকিল।