করোনার ক্ষতিপূরণ

৬ মাসের সেমিস্টার ৪ মাসে শেষ করছে জবির বিভাগগুলো

করোনায় শিখন ঘাটতি পূরণে সোচ্চার জবির বিভাগগুলো
করোনায় শিখন ঘাটতি পূরণে সোচ্চার জবির বিভাগগুলো  © সংগৃহীত

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো এক বছরের বেশি সময় ধরে। এতে একাডেমিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থা পিছিয়ে যায় এক বছর। তবে এই এক বছরের জন্য  শিক্ষার্থীরা যাতে অতিরিক্ত সেশন জটে না পড়ে এইদিকে লক্ষ্য রেখে ছয় মাসের সেমিস্টার চার থেকে সাড়ে চার মাসেই শেষ করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগ। তবে এর  ভিন্ন চিত্রও রয়েছে বেশকিছু বিভাগে।  

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার তৈরি হওয়া এক বছরের গ্যাপ পূরণে বিভাগগুলো চার থেকে সাড়ে চার মাসেই সেমিস্টার ফাইনালের আয়োজন করছে। 

এ বিষয়ে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুবর্না সাহা বলেন, ২০২০ সাল থেকে শুরু হয় আমাদের প্রথম বর্ষের ক্লাস।  শুরুটা অনেক আনন্দের সাথে গেলেও দুই মাস অতিক্রম হওয়ার পরে শুরু হয় করোনা প্রাদুর্ভাব।  অল্প সময়ের মধ্যে দেশের সার্বিক অবস্থা বিঘ্ন হয়ে যায় যাতে করে আমাদের ক্যারিয়ারে অনেকটা ব্যাঘাত ঘটে। স্বাভাবিক পরিবেশে আমাদের ২০২৩ সালে স্নাতক শেষ করার কথা ছিল, কিন্তু করোনার কারণে এখন তৃতীয় বর্ষ অধ্যয়ন করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অন্যান্য সব বিভাগগুলো সবে মাত্র তৃতীয় বর্ষের কার্যক্রম শুরু করেছে। সেই তুলনায় আমাদের একাউন্টিং বিভাগ কিছুটা এগিয়ে আছে, আমাদের স্যাররা চেষ্টা করছে আমাদের ২০২৪ এর মাঝামাঝিতে স্নাতক শেষ করার। করোনার দীর্ঘ এক বছর পড়াশোনার যে ব্যাঘাত ঘটেছে সেইটা অতিরিক্ত ছয় মাসে শেষ করবে বলে মনে হয়। 

নৃবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফি বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম থেমে থাকার কারণে আমরা এক বছর পিছিয়ে যাই। যার কারণে আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে আমাদের চলতি সেমিস্টার পূর্বের ন্যায় ছয় মাসের পরিবর্তে চার মাসে শেষ করা হচ্ছে। ফলে, আমাদের পিছিয়ে পরা এক বছর কাভার করা না হলেও মোটামুটি ভাবে ৬ মাস সময়ের গ্যাপ কাভার করা যাবে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সৈকত সাহা বলেন, করোনার কারণে প্রথমে আমরা খুব চাপে ছিলাম এটা ভেবে যে আমাদের এক থেকে দেড় বছর গ্যাপ চলে যাবে কিন্তু একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে ৬ মাসের সেমিস্টার প্রায় ৪ মাসে শেষ হচ্ছে। প্রতি বছর যেখানে আমাদের দুইটা সেমিস্টার শেষ করার কথা সেখানে আমরা প্রায় তিন সেমিস্টার শেষ করতে পারছি। এতে ইয়ার গ্যাপের চাপ অনেকটা কমেছে। যদিও পড়ালেখার প্রেশার আগে থেকে বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের জন্য ভালো কিছু হবে।

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহামুদুর রহমান নাজিদ বলেন, করোনার কারণে আমাদের ১ বছর পিছিয়ে গেছি, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনার ক্ষতি পূরণের জন্য নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, সেমিস্টারে গ্যাপ এবং শিক্ষা কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের আগে শুরু করেছে৷ আমাদের বিভাগ ও সেমিস্টার ব্রেক কম দিয়েছে, তাড়াতাড়ি ক্লাস শুরু করেছে। বিভাগের আন্তরিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়।

অন্যদিকে মুষ্টিমেয় কিছু বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলছে তাদের বিভাগে আগে থাকেই সেশনজট ছিলো। করোনার একবছর তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই গ্যাপ পূরণে  শিক্ষকগণ কোন উদ্যোগ ও নিচ্ছেন না। এতে করে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে পড়ছে তারা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ১ জানুয়ারি ২০২০ পরিসংখ্যান বিভাগে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করি। নতুন ক্যাম্পাস, নতুন মানুষজন সবকিছু মিলিয়ে ভালো যাচ্ছিল সবকিছু। কিছুদিন পরেই দেখা দেয় করোনার প্রাদুর্ভাব। তারপর দেড় বছর ক্যাম্পাস বন্ধ। ২০২১ এর শেষে এসে ১ম বর্ষের ফাইনাল দিয়েছিলাম। ২০২২ এর মার্চে শুরু হয় আমাদের ২য় বর্ষের ক্লাস।

করোনার প্রভাব ঠিক মতো কাটিয়ে উঠতে পারেনি আমাদের বিভাগ। সবকিছু রয়ে-সয়ে চলতে থাকে। এখন ২০২৩ সালে এসে ২য় বর্ষ ফাইনাল দিচ্ছি। আসলে করোনাভাইরাসের কারণে জীবন থেকে যে সময় গুলো হারিয়ে গেছে, পড়ালেখার যে গ্যাপ সেটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না। ২০২৩ সালে যেখানে ৪র্থ বর্ষের ক্লাস করার কথা, সেখানে এসে ২য় বর্ষ ফাইনাল দেওয়ার চেয়ে দুঃখজনক কিছু হতে পারে না। আশা করছি এই গ্যাপটা দিনশেষে কিছুটা হলেও পুষিয়ে দেবে পরিসংখ্যান বিভাগ।

পরিসংখ্যান বিভাগের আরেক এক শিক্ষার্থী বলেন, একাডেমিক পরীক্ষা গুলোর মাঝে দীর্ঘ বন্ধ থাকে, যার ফলে অন্যান্য অনুষদের বিভাগের চেয়ে আমাদের পরীক্ষা গুলো শেষ হতে অনেক সময় লাগে। বিভিন্ন বিভাগে ৪ থেকে ৫ মাসে সেমিস্টার শেষ হয়ে যায়,সেখানে আমাদের বিভাগে এর থেকে বেশি সময় লেগে যায়। সে হিসাবে আমরা অন্যান্য বিভাগ থেকে ২-৩ মাস পিছিয়ে থাকি। তাছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের কে ২০২১ সালে পরীক্ষা ২০২৩ সালে এসে দিতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, ২০২২ সালে আমরা পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যেতাম। কিন্তু এখনও আমরা ৪র্থ বর্ষের ১ মাস ক্লাস করছি, আশা করা যায় ৪র্থ বর্ষ শেষ করতে আরও ১বছর লেগে যাবে।  যে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়েছিলাম তা এখনও অনিশ্চিত রয়ে গেল। কবে যে আমাদের অনার্স ফাইনাল শেষ হবে তা নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। বিভাগ থেকেও আশানুরূপ কোন অগ্রগতি দেখছি না। একপ্রকার অনিশ্চিত জীবনের দিকে পা বাড়াচ্ছি আমরা।

পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ শেখ গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি ফোনে কথা বলতে পারবো না। তুমি রবিবারে আমার ডিপার্টমেন্ট আসো। 

মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনাই যেহেতু ১ বছর পিছিয়ে দিয়েছে সেটাতো পূরণ করা সম্ভব না। আমাদের বিভাগের ক্লাস, পরীক্ষা যথারীতিই  চলছে।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক বলেন,  আমরা মৌখিকভাবে প্রত্যেক বিভাগকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি।  এরপরেও যদি কোন বিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে থাকে, তাহলে তোমরা সে বিভাগগুলোর নাম আমাদের জানাও, আমরা ব্যবস্থা নেব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence