বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের অজানা ইতিহাস

বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ
বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ  © টিডিসি ফটো

হযরত খান ই জাহানের (র:) পুণ্য ভূমি খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলা। এখানে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের দুইটি নিদর্শন, ষাট গম্বুজ ও সুন্দরবন। আরও রয়েছে বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। বাগেরহাট জেলার সব থেকে পুরাতন ঐতিহ্যবাহী কলেজ। পূর্বে যার নাম ছিল বাগেরহাট কলেজ অতঃপর প্রফুল্ল চন্দ্র মহাবিদ্যালয়। এই প্রফুল্ল চন্দ্র মহাবিদ্যালয়ই আজকের বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ। 

এ কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস শত বছরের অধিক পুরাতন। ১৯১৫ সালে বাগেরহাট শিক্ষানুরাগী জনগণের উদ্যোগে কাড়াপাড়া গ্রামে এক শিক্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আচর্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।এরপর ১৯১৭ সালে কাড়াপাড়া শরৎচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে আসেন তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ জে ভাস। সেখানে জনগণের পক্ষ হতে সৈয়দ সুলতান আলী কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি তুলে ধরেন। ১৯১৭ সালে ২৮ অক্টোবর কলেজ প্রতিষ্ঠার বাস্তব পদক্ষেপ গৃহীত হয়।

আরও পড়ুন: ‘বিশ্ববিদ্যালয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে সেটি আর বিশ্ববিদ্যালয় থাকে না’

এই কলেজ প্রতিষ্ঠায় জমিদারদের ও ছিলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান। দশানীর জমিদার গোপালচন্দ্র বিশ্বাসের বাড়ীতে হাবেলী খলিফাবাদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে অংশগ্রহণ করেন জমিদার বংশের প্রবীণ সদস্য অশ্বিনী কুমার রায় চৌধুরী, হেমান্তচন্দ্র রায় চৌধুরী, নিশিকান্ত দাস, মহেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শুকলাল নাগ, সৈয়দ সুলতান আলী, এবায়েদুল হক, রাজেন্দ্রকুমার নাগ, চন্দ্রকান্ত দাস, সুরেশচন্দ্র গুহ, পূর্ণচন্দ্র রায় চৌধুরী, ভারত চন্দ্র রায়, প্রসন্ন কুমার রায়। উক্ত সভায় অর্থ সংগ্রহ ও স্থান নির্বাচন করা হয়। আর এই কলেজের জন্য যারা জমি প্রদান করছিলেন তারা হলেন সমাজ সেবক শেখ মোঃ কাসেম আলী ও তার সহোদর শেখ মোঃ সাবেদ আলী।

এসকল কাজ শেষে কলেজ স্থাপনের বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় বিজ্ঞানী আচর্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সাথে। সাথে সাথে সবধরনের সাহায্যের আশ্বাস প্রদান করেন তিনি। এরপর ১৯১৮ সালের ৮ই আগস্ট কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান কামাখ্যাচরণ নাগ। তিনি এই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিষ্ঠার সাথে ২২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী। ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃতি, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, অর্থনীতি, ইতিহাস, দর্শন প্রবৃত্তি বিষয়ে তিনি পাঠদান করাতে পারতেন। তিনি পরিচালনা পর্ষদ বোর্ডের সাথে নিজে দ্বারে দ্বারে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। ১৯১৮ সালের ৯ই আগস্ট কলা বিভাগের প্রথম পাঠদানের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী কলেজের যাত্রা শুরু হয়।

১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৯২২ সালে ১৪ই ফেব্রুয়ারি এক ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় পুকুর খননের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯২৪ সালের পর থেকে কেবলমাত্র বাংলায় অনার্স কোর্স চালু ছিল।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই কলেজের নাম ছিল বাগেরহাট কলেজ। ১৯৩৩ সালে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নাম পরিবর্তন করে প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ (পিসি কলেজ) নামকরণ করা হয়। আর্চয্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এই কলেজে তার বেঙ্গল কেমিক্যাল থেকে বিনামূল্যে বিজ্ঞানাগরের জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেন। তখন বাগেরহাটে বিদ্যুতের সুবিধা না থাকায় কলেজে ডায়নামো দিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয় ।

এরপর ১৯৩৫ সালে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মঘিয়ার জমিদার রামনারায়ণ কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অর্থ প্রদান করেন এবং সেই অর্থ দিয়ে মনোরম পার্ক নির্মাণ করা হয়। এই পার্কের নাম হয় রামনারায়ণ পার্ক।

 ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর সাময়িকভাবে এ কলেজের অগ্রগতি কিছুটা ব্যাহত হয়। ১৯৬০ সাল হতে পুনরায় বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখায় ডিগ্রী কোর্স চালু হয়। এ সময় কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় ৩,০০০ এবং হোস্টেলে প্রায় ৫০০ ছাত্রের আবাসনের ব্যবস্থা ছিল। ১৯৭৯ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘোষণা মোতাবেক ৭ই মে থেকে কলেজ জাতীয়করণ হয়।

বর্তমানে এই কলেজের ৮ হাজার শিক্ষার্থী ও ৬৫ জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। বর্তমানে এ কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর মোঃ আসাদুল আলম খান।

বাগেরহাট শহরের পশ্চিম পাশে হরিণটানায় অত্যন্ত নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে এই কলেজটির অবস্থান।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!