খুবির চাকরিচ্যূত সেই তিন শিক্ষককে পুনর্বহালের নির্দেশ হাইকোর্টের

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী না করে তাদের অপসারণ ও এক শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে ওই তিন শিক্ষককে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন আদালত।

তিন শিক্ষক হলেন বাংলা বিভাগের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল ফজল (বরখাস্ত) এবং ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী (অপসারিত) ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলম (অপসারিত)।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি কমানো, আবাসনসংকট নিরসনসহ ৫ দফা দাবিতে ২০২০ সালের ১ ও ২ জানুয়ারি আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনে ১৩ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানান। সংহতি জানানো ১৩ শিক্ষকের মধ্যে এই তিন শিক্ষককে বরখাস্ত ও অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত বছরের ২৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই তিন শিক্ষককে বরখাস্ত ও অপসারণের চিঠি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: পরীক্ষার আগে ছাত্রীকে প্রশ্ন দেওয়ার অভিযোগ যবিপ্রবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে

এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তারা হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে বরখাস্ত ও অপসারণের সিদ্ধান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। একজন শিক্ষককে বরখাস্ত ও দুই শিক্ষককে স্থায়ী না করে অপসারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের (ভারপ্রাপ্ত) সই করা ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারির সিদ্ধান্ত কেন বেআইনী হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রায় দেন আদালত।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ফুয়াদ হাসান ও রিপন কুমার বড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জুয়েল আজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, তিন শিক্ষককে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন থাকলেও শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিতে কোনো সংবিধি হয়নি। সংবিধি ছাড়া এভাবে কোনো শিক্ষককে বরখাস্ত ও অপসারণ করা যায় না। ২০২০ সালের ১ ও ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানানোর কারণে তিন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে। সংহতি জানানো ১৩ শিক্ষকের মধ্যে বাকিদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা বৈষম্যমূলক। ওই ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এসব কারণে বরখাস্ত ও অপসারণের ওই সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী জুয়েল আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিপ্রায় সাপেক্ষে আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 


সর্বশেষ সংবাদ