পিএসসি চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ

পিএসসি চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রত্যাশীরা
পিএসসি চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রত্যাশীরা  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনসহ কমিশনের সকল সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী এবং চাকুরি প্রত্যাশীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। এসময় বিক্ষোভকারীরা পিএসসির পুনর্গঠনের দাবি জানান। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ দাবি জানানো হয়।

এসময় বিক্ষোভকারীরা ‘দফা এক দাবি এক, সোহরাবের পদত্যাগসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। বক্তব্যে তারা বলেন, আমরা পিএসসির সংস্কার চাই। এটি চাকুরি প্রত্যাশীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। এটি যেন শিক্ষার্থী এবং চাকুরি প্রত্যাশী বান্ধব হয় এমন একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য আমরা কমিশনের পুনর্গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

বিক্ষোভ শেষে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক ঐক্য কমিটির সদস্যসচিব আকতার হোসেন। এছাড়াও এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়করাও বক্তব্য প্রদান করেন।

আরও পড়ুন: বিসিএসে গেজেটবঞ্চিত ১১১ চিকিৎসককে কর্মস্থলে পদায়নের প্রজ্ঞাপন

আকতার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিদায় হওয়ার পরও দেশে তার দোসররা রয়ে গেছে। এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, ফ্যাসিবাদীদের নানা উপাদান ও তাদের দোসররা থেকে গেছে। ফলে পিএসসি’র মতো জায়গায় নানা অনিয়ম এবং অন্যায় চলে আসছে।

পিএসসির অধীন এখনও পরীক্ষা দেওয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকাও ফি দিতে হয়। যা একজন বেকার শিক্ষার্থীর পক্ষে দেয়া সম্ভব হয় না। আমরা সবাই সরকারকে ভ্যাট দিই। সেজন্য আমাদের তরুণদের চাকরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। সকল অযাচিত ফি নেয়ার মাধ্যমে বেকারদেরকে আর চাকরির বাজার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মো. সোহরাব হোসাইন বর্তমানে সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন।

আরও পড়ুন: স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না পিএসসি, পেছাবে সব নিয়োগের ফল

এছাড়াও দেশের প্রথম সারির সরকারি চাকুরি এবং নিয়োগ পরীক্ষার তদারক এ সংস্থার সদস্যদের মধ্যে এস. এম. গোলাম ফারুক বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। এছাড়াও কমিশনের আরেক সদস্য ফয়েজ আহম্মদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ছিলেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব ছিলেন এন সিদ্দিকা খানম। আর নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) জাহিদুর রশিদ, ঢাবির আওয়ামীপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুবিনা খোন্দকার ও অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেনও ছিলেন আওয়ামী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট। এর মধ্যে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন গত বছর আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক–বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হয়েছিলেন। সাংবিধানিক পদে থেকেও দেলোয়ার হোসেনের রাজনৈতিক দলের কমিটির সদস্য হওয়া নিয়ে আলোচনা হলে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে চূড়ান্ত ফল পেছানোর শঙ্কা

এছাড়াও কমিশনের সদস্য কে এম আলী আজম অবসরের পূর্বে সর্বশেষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আরেক সদস্য মো. খলিলুর রহমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে তার কর্মজীবন শেষ করেন। এছাড়াও অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক কমিশনে আসার পূর্বে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে তার কর্মজীবন শেষ করেন।

কমিশনের আরেক সদস্য মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব শেষে পিএসসিতে আসেন হেলালুদ্দিন আহমদ। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পদের দায়িত্ব থেকে ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৪তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে মোহা. শফিকুল ইসলাম নিয়োগ পান পিএসসিতে।

আরও পড়ুন: ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা স্থগিত, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাল পিএসসি

এছাড়াও কমিশনের আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে ছিলেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত মুখ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

এর আগে গত ৭ জুলাই বিসিএসসহ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস শীর্ষক একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার করে একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন। যদিও পিএসসি তাদের তদন্তের মাধ্যমে এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। 

ওই প্রতিবেদনে বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার তথ্য জানানো হয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) ক্যাডার ও নন–ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ