বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১১৪ আবেদন, ধুঁকছে পুরোনোরা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়   © সংগৃহীত

বর্তমানে দেশে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। তবে নানা জটিলতায় ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি। এছাড়া মামলাজটে আরও প্রায় ৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের উপক্রম। এর মধ্যে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী সংকটে ধুঁকছে।

এদিকে আর্থিক সংকট, অনিয়মে আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও করুণ। গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। 

করোনাকালীন তহবিল সংকট দেখিয়ে এর মধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আংশিক বেতন দিচ্ছে। ভাড়ায় নেওয়া ভবন ছেড়ে দিচ্ছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা পরিবর্তনের মতো ঘটনাও রয়েছে। তবুও থামছে না নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের আবেদন! 

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কমপক্ষে ১১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এর মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করেছে। এ উপলক্ষে ১৯ মে একটি প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে ইউজিসির কর্মকর্তারা। 

ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রক্রিয়া জানতে প্রতিনিয়তই খোঁজখবর নিচ্ছেন। এর মধ্যে আবেদন জমা দিয়েছেন একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তারা জোর তদবির চালাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে ভালো চলছে না, নতুন প্রতিষ্ঠান সেখানে কিভাবে চলবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশিত হচ্ছে।   

এ ব্যাপারে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান জানান, বর্তমানে আমরা তথাকথিত শিক্ষিত বেকার তৈরি করছি। উচ্চশিক্ষা ও সনদ আছে, কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না। পাড়া-মহল্লায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার নেই। মুড়িমুড়কির মতো এভাবে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো গুরুত্ব নেই। কারোর টাকা থাকলে ও তিনি দেশের শিক্ষার জন্য কিছু করতে চাইলে ভালো স্কুল বা কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়তে মনোনিবেশ করতে পারেন।   

ইউজিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবসহ ফাইল পাঠিয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, খাগড়াছড়ি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তিস্তা ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি ও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। 

এর মধ্যে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ-এর নেতৃত্বে গত ১৯ মে চট্টগ্রামে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি-এর পরিদর্শন করা হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি চট্টগ্রাম বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। ঢাকায় বিজিএমইএ’র একই নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেটির সুনাম রয়েছে। এজন্য চট্টগ্রামে বিজিএমইএ’র বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদন পেতে পারে বলে জানা গেছে। 

এদিকে খাগড়াছড়ি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর নাম সংশোধনের জন্য জানিয়েছে ইউজিসি। কারণ সরকার জেলার নাম অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে, এজন্য এই নামটি সংরক্ষণে রাখতে চাচ্ছে ইউজিসি। এছাড়া যেসব স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সেখানে নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব আসছে। 

সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচবিএম ইকবাল কিশোরগঞ্জে শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সংসদ-সদস্য আ স ম ফিরোজ পটুয়াখালীতে সাউথ রিজন ইউনিভার্সিটি, সাবেক সংসদ-সদস্য শামসুল আলম ভূঁইয়া চাঁদপুরে অ্যাপোলো ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফের স্ত্রী ফৌজিয়া আলম ‘লালন বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন করেছেন। 

এদিকে দেশের ৩৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈধ কোনো উপাচার্য নেই। এছাড়া ৭৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপউপাচার্য এবং ৪৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ নেই। এছাড়া অননুমোদিত ক্যাম্পাস-ভবন-এ শিক্ষা কার্যক্রম ও অননুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনার অভিযোগ তো রয়েছেই। এছাড়া বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিওটি দ্বন্দ, ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তো আছেই।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদনে ইউজিসি কোনোভাবে জড়িত নয়। ইউজিসি শুধুমাত্র প্রস্তাব ধরে আইন অনুযায়ী বাস্তবে পরিদর্শন করে এবং তা নিয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। ঢাকার বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।


সর্বশেষ সংবাদ