নাসার আমন্ত্রণে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ তরুণের স্বপ্নযাত্রা
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ০৫:০৯ PM , আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫, ০৮:৫২ PM

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ উদ্ভাবক। আজ রবিবার (২৫ মে) যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে ‘টিম ভয়েজার্স’। নাসা আয়োজিত স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩-এ ‘বেস্ট স্টোরি টেলিং’ ক্যাটাগরিতে বিশ্বসেরা নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের এ সুযোগ প্রদান করেছে নাসা।
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের দলটি নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার, মেরিল্যান্ডে ৪ জুন অনুষ্ঠিতব্য ‘গ্লোবাল উইনার্স সেলিব্রেশন’-এ অংশ নেবে। এ উপলক্ষে তারা সম্মাননা গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণাগার পরিদর্শন করবে, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেবে এবং নিজেদের প্রকল্প উপস্থাপন করবে।
টিম ভয়েজার্সের সদস্যরা হলেন মো. খালিদ সাকিব (টিম লিডার), মো. আব্দুল মালেক (অ্যাপ ডেভেলপার), মো. আতিক (লেভেল ডিজাইনার), মোসা. ফাহমিদা আক্তার (রিসার্চার) ও মো. সাখাওয়াত হোসেন (প্রোটোটাইপ ডিজাইনার)।
শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু হওয়া এই দলের যাত্রা আজ পৌঁছেছে বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে। ‘এভরিথিং স্টার্টস উইথ ওয়াটার’ চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়ে তারা তৈরি করে ‘অ্যাকুয়া এক্সপ্লোরার’ নামের একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ টুল, যা শিক্ষার্থীদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তন, পানির গুরুত্ব ও এর বৈজ্ঞানিক প্রভাব সহজভাবে উপস্থাপন করে। প্রকল্পটিতে তুলে ধরা হয়, কীভাবে পৃথিবীর অতি অল্প পরিমাণ নিরাপদ পানি (মাত্র ০.০১ শতাংশ) আমাদের জীববৈচিত্র্য, বায়ুমণ্ডল ও জলবায়ুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ডিজিটাল মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপনার অভিনব কৌশল, চমৎকার গ্রাফিকস এবং প্রাঞ্জল বর্ণনার জন্যই বিচারকদের নজর কাড়ে দলটি।
আরও পড়ুন: বাজেটে ২০ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দসহ যেসব দাবি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩ সবচেয়ে বড় আয়োজন। এতে ১৫২টি দেশের ৮ হাজার ৭১৫টি দল ও প্রায় ৫৮ হাজার প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। জমা পড়ে ৫ হাজার ৫৫৬টি প্রজেক্ট। এই বিশাল প্রতিযোগিতায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ভয়েজার্স তাদের দক্ষতা ও কল্পনাশক্তির অসাধারণ সমন্বয়ে উঠে আসে শীর্ষে।
এটি বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য গৌরব। কারণ এটি দেশের পক্ষে টানা তৃতীয় এবং মোট চতুর্থবারের মতো নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে বিশ্বজয়ের ঘটনা। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সাফল্য দেশের উচ্চশিক্ষা ও প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।
এ বিষয়ে টিম লিডার খালিদ সাকিব বলেন, ‘অক্টোবর ২০২৩-এর ৬ ও ৭ তারিখ ছিল আমাদের জীবনের এক স্মরণীয় মুহূর্ত। বিশ্বের ১৫২টি দেশ থেকে ৮ হাজার ৭১৫টি দল ও ৫৭ হাজার ৯৯৯ শিক্ষার্থী অংশ নেন ৩৬ ঘণ্টার বিশাল হ্যাকাথন নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ অ্যাপসে। আমরা রাজশাহী রিজিওন থেকে লোকাল রাউন্ডে চ্যাম্পিয়ন হই এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি দল Team Error_404 রানার্সআপ হয়।’
আরও পড়ুন: গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের বয়সসীমা উঠে যাচ্ছে
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গ্লোবাল নোমিনেশনের মাধ্যমে ফাইনালিস্ট হয়ে বেস্ট স্টোরি টেলিং অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল উইনার হই। আমাদের প্রজেক্ট অ্যাকুয়া এক্সপ্লোরার ছিল এভরিথিং স্টার্টস উইথ ওয়াটার চ্যালেঞ্জে অংশ নেওয়া একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ গেম ও গল্পনির্ভর টুল, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পানি সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সহজভাবে বোঝানো যায়।’
সিএসই বিভাগের প্রধান সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এ রকম প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্যিই গর্বের। নাসা আমাদের শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা নাসা পরিদর্শন করবে। তারা বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। এটা তাদের আরও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাবে।’