শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী পাঠদানের পাশাপাশি সরকারকেও সহযোগিতা করছে ইউআইইউ’র ইইই বিভাগ

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফৈয়াজ খান
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফৈয়াজ খান  © টিডিসি ফটো

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফৈয়াজ খান। উচ্চশিক্ষায় দীর্ঘ ৫ দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গুণী ব্যক্তিত্ব। অধ্যাপনা ও গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষা-প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্তরে অবদান রেখেছেন লম্বা সময়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির (বুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিসহ বিএসসি (স্নাতক, সম্মান) এবং পরবর্তীতে এমএসসি পাস করেন বরেণ্য এই অধ্যাপক। এরপর সেখানেই শিক্ষকতার মাধ্যমে নিজের কর্মজীবন শুরু।

ইউআইইউ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ফৈয়াজের অধ্যাপনা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) উপাচার্য এবং এরও আগে গ্রিন ইউনিভার্সিটির অব বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ফিরেছেন নিজের পুরনো কর্মস্থল ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বর্তমানে এখানেই ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির ইইই বিভাগ ও উচ্চশিক্ষার নানা বিষয় নিয়ে এই অধ্যাপকের মুখোমুখি হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। সেই গল্প-আলাপের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো—

প্রকৌশল বিদ্যায় ইইই’র অবস্থা অনেকটা অন্তরাত্মার মতো। মানুষের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যার সম্পৃক্ততা রয়েছে। উচ্চশিক্ষায় বিষয়টির গুরুত্ব উল্লেখ করে অধ্যাপক ফৈয়াজ খান বলেন, ইলেকট্রনিক এন্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। ইলেকট্রনিক যতগুলো ডিভাইস দেখা যায়; তার সবটাই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই সেক্টরের সাথে সংযুক্ত। ইন্ডাস্ট্রিতে গেলেও দেখা যায় অগণিত ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস ফাংশন করছে। এমনকি বর্তমানে মানবশরীরে যে পেস-মেকার প্রতিস্থাপন হয়; সেটাও ইলেক্ট্রিক্যালি ফাংশন করে। অর্থাৎ কোনোভাবেই এটাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে এসবের ব্যবহার আরো সম্প্রসারিত হবে। ফলে, উচ্চশিক্ষায় যারা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে আগ্রহী, অদূর ভবিষ্যতে এটা তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে আবির্ভূত হবে।

বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যরা আরো অনেক কাজ করার সক্ষমতা থাকলেও স্বাধীনতার অভাবে তারা পুরোপুরি সেটা করতে পারেন না। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন উপাচার্যের উপরে থাকে ট্রাস্টি বোর্ড। উপাচার্যের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকায় অ্যাকাডেমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিশেষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হলে অনুমতির প্রয়োজন হয়। ফলে মস্তিষ্ক প্রসূত জ্ঞানের বিকাশ এখানে বাধাগ্রস্ত হয়।প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফৈয়াজ খান, ইউআইইউ

শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ফৈয়াজ আরো উল্লেখ করেন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাথে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরও একটা নিবিড় যোগসূত্র আছে। কাজেই যারা পাণ্ডিত্য অর্জন করতে চাইবে; তাদের অবশ্যই দুটো বিষয়ে সমানভাবে জ্ঞানার্জন করতে হবে। তবেই একজন পরিপূর্ণ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তারা নিজেদের গড়ে তুলতে পারবেন। যারা বেসিক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ডিগ্রি নেবে, তাদের একইসাথে কম্পিউটার রিলেটেড কিছু কোর্স সম্পন্ন করলে চাকরির বাজারে অন্যদের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। 

জব মার্কেটে ইইই শিক্ষার্থীদের চাহিদা এবং পরিধি উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই সেক্টরে অনেক বড় কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। জেনারেশন, ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশনের মধ্যে অনেক জনবলের প্রয়োজন আছে। এদের সাথে রিলেটেড প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে স্পেশালি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজনীয়তা আছে।  

ইইই বিভাগের এনার্জি কনভার্সন ল্যাব: ছবি ইউআইইউ সৌজন্যে

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইইই শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন যুগোপযোগী শিক্ষা। অধ্যয়ন শেষে কর্মক্ষেত্রেও তারা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন— যোগ করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের এমন কিছু দিতে চাই, যেটা তারা অন্য কোথাও পাবে না। এখানে শিক্ষার্থীদের সব থেকে আপডেট টেকনোলজি দিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়। যারা উন্নত ল্যাব সুবিধা এবং দক্ষ ফ্যাকাল্টিদের সহচার্যে থেকে শেখার সুযোগ পান। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদান ও গবেষণায় নিবিড় তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি দেশ পরিচালনায় সুষ্ঠু উদ্যোগ বাস্তবায়নে ইউআইইউ সরকারকেও সহযোগিতা করছে বলে জানান এই অধ্যাপক।

বাংলাদেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষা অঙ্গনে দীর্ঘ অধ্যাপনা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার কথা জানান অধ্যাপক ফৈয়াজ। তিনি বলেন, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বর্তমানে আমার দ্বিতীয় ইনিংস চলছে। এর আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছি। টিচিং প্রফেশনকে আমি উপভোগ করলেও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা মিশ্র ছিল।

ইউআইইউ শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত গবেষণায় ইউআইইউ প্রতি বছর পেপার আহ্বান করে থাকে। সেখানে গবেষকদের প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি পেপার সাবমিশনের পর গবেষণার আউটপুট কী— সেটাও বিবেচনায় নেয়া হয়। এই কর্মযজ্ঞের সাথে আমরা শিক্ষার্থীদেরও জোরালোভাবে যুক্ত করা হয়। যেটা তাদের পরবর্তী ক্যারিয়ারে ভালো করতে সহায়তা করে। ইইই বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এসব কার্যক্রমের সাথে যুক্ত রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা অন্যদের চেয়ে ভালো করছে।প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফৈয়াজ খান, ইউআইইউ

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যরা আরো অনেক কাজ করার সক্ষমতা থাকলেও স্বাধীনতার অভাবে তারা পুরোপুরি সেটা করতে পারেন না। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন উপাচার্যের উপরে থাকে ট্রাস্টি বোর্ড। উপাচার্যের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকায় অ্যাকাডেমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিশেষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হলে অনুমতির প্রয়োজন হয়। ফলে মস্তিষ্ক প্রসূত জ্ঞানের বিকাশ এখানে বাধাগ্রস্ত হয়৷ তবে ইউজিসি এবং উচ্চশিক্ষার তদারকিতে যারা আছেন, তারা এ বিষয়ে আরো ভালো প্রস্তাবনা কিংবা করণীয় সম্পর্কে জানবেন। উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে আরো বেশি ক্ষমতা দেয়া হলে এটা বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।

ইউআইইউ’র নবায়নযোগ্য শক্তির সেক্টরে পাইনিয়ার উল্লেখ করেন অধ্যাপক ফৈয়াজ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে৷ তিনি বলেন, ইইই বিভাগ থেকে যারা পড়াশোনা করে; কর্মক্ষেত্রে গিয়ে তাদের সবাই ভালো করছে। অনেকে নিজেদের উদ্যোগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন। আবার বাংলাদেশের টপ যে সকল প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইউআইইউ শিক্ষার্থী কর্মরত আছেন। দেশে এবং বিদেশি অসংখ্য শিক্ষার্থী উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।

আরো পড়ুন: বাজার উপযোগী গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে অনন্য ইউআইইউ’র স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনোমিক্স

বিশাল আকৃতির মাঠ নিয়ে নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর ইউআইইউ’র গ্রিন ক্যাম্পাস : সৌজন্যে প্রাপ্ত ছবি

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে লিমিটেড রিসোর্সের সর্বোত্তম ব্যবহারের বিকল্প নেই বলে মনে করেন অধ্যাপক ফৈয়াজ। তিনি বলেন, আমাদের দেখতে হবে প্রাকৃতিক সম্পদের রিসোর্স কতটা রয়েছে। এগুলো শেষ হয়ে গেলে দেশ বিপদের মুখে পড়বে। তাই এখনই রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সকল পরিকল্পনা বৃহৎ এবং অর্থবহ হতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাতাসের পরিমাণ খুব বেশি নয়৷  কিন্তু আমরা যদি সোলার এনার্জিকে বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করি; তাহলে সেটা সাস্ত্রয়ী এবং এটি থেকে বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কাজেই পরিকল্পনা গ্রহণের সময় এটিকে বিবেচনায় নিতে হবে। সোলার এনার্জি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রচুর জায়গা প্রয়োজন হতে পারে। স্থির পানিতে সোলার প্যানেল ভাসিয়ে এটিরও বিকল্প ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করলে এ প্রযুক্তির বহুবিধ সুবিধা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

অভিজ্ঞ এ অধ্যাপক বলেন, ইউআইইউ শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত গবেষণায় ইউআইইউ প্রতি বছরে পেপার আহ্বান করে থাকে। সেখানে গবেষকদের প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি পেপার সাবমিশনের পরে গবেষণার আউটপুট কি সেটাও বিবেচনায় নেয়া হয়। এই কর্মযজ্ঞের সাথে আমরা শিক্ষার্থীদেরও জোরালোভাবে যুক্ত করা হয়। যেটা তাদের পরবর্তী ক্যারিয়ারে ভালো করতে সহায়তা করে। ইইই বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এসব কার্যক্রমের সাথে যুক্ত রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা অন্যদের চেয়ে ভালো করছে।


সর্বশেষ সংবাদ