বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়

সেকশন অফিসার পদে নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়
কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অধিকাংশ অস্থায়ী কর্মচারীকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য এই নিয়োগের নামে ‘নাটকের’ আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন অভিযোগকারী পাঁচ জন প্রার্থী। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের সচিবকেও অভিযোগপত্র পাঠান তারা।

অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেন প্রার্থী মো. আশরাফুল মজিদ, তোফায়েল আহমেদ তপু, মো. বাহার উল্লাহ, মো. নুরুজ্জামান। বাকি এক নারী প্রার্থী সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আছেন। যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে।

রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন তারা।

অভিযোগে প্রার্থীরা বলেন, ‘২০২৩ সালের ৯ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার পদে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আমরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সেকশন অফিসার (৯ম গ্রেড, পদসংখ্যা ১) পদে আবেদন করে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিই। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট বা কোনও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় দেওয়া হয়নি। শুধু আমরা যারা লিখিত পরীক্ষায় পাস করি, তাদের ই-মেইলে ফলাফল জানানো হয়। ফলে বাকি লিখিত পরীক্ষার্থীরা সরাসরি ফলাফল পাননি, যা স্পষ্ট নিয়োগবিধির লঙ্ঘন।

আরও পড়ুন: ডুয়েটের চলতি সেমিস্টারের স্থগিত পরীক্ষা শুরু ১৭ সেপ্টেম্বর

‘লিখিত পরীক্ষায় পাস করে আমরা যারা ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মনোনীত হই, তারা ২০২৩ সালে ১ অক্টোবর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিই। এরপর আমরা আবার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। এবারও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট বা কোনও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বা ই-মেইলে মৌখিক পরীক্ষার কোনও ফলাফল পাইনি।

‘কয়েক মাস পর আমরা জানতে পারি সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রার্থী শুধরাক আজিজ নাবিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই চুক্তিভিত্তিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন শুধরাক আজিজ। তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং নিয়োগের নামে নাটকের আয়োজন করে। এ জন্য আমাদের ভাইভা প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই নিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ অস্থায়ী কর্মচারীকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কর্মচারী অসীম কুমার সরকারও একই পদ্ধতিতে নিয়োগ পেয়েছেন।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘এই নিয়োগ পরীক্ষায় কেবল যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারী, শুধু তারা নিয়োগ পান, বাকিরা বাদ যান। এটা অস্বাভাবিক ঘটনা। মৌখিক পরীক্ষার দিন আমাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি, আমাদের সনদগুলোও ভালো করে যাছাই করে দেখা হয়নি।

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সাবেক এমপি মো. রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক ও মো. আবদুল হকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে সেকশন অফিসার শুধরাক আজিজ নাবিলের। আবার সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গেও আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে উল্লিখিত দুজন সিন্ডিকেট সদস্য ও শুধরাক আজিজের। এতেই প্রতীয়মান হয় যে পারিবারিক প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যলয়ের ওই পদে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর সেকশন অফিসার পদে আমরা পাঁচ জন মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়লেও, ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একই পদে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ লিখিত ও ভাইভা প্রার্থীদের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে মেধা অনুসারে নিয়োগ করলে তা ন্যায্য হতো। একই পদের বিপরীতে এবাবে বারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মনোভাব প্রকাশ হয়।

‘এ অবস্থায় এই নিয়োগে আমাদের সঙ্গে বৈষম্য হয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমরা মৌখিক পরীক্ষার্থীরা উক্ত নিয়োগ বাতিল চাই এবং নতুন করে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে খালি পদগুলোয় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়াসহ প্যানেল করার দাবি জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন: একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন শুরু, যেভাবে করবেন

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী মো. আশরাফুল মজিদ ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেও আমদের সঙ্গে প্রতারণা করে এই পদে শুধরাক আজিজহ নাবিলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা আগামী বৃহস্পতিবার ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় লিয়াজোঁ অফিসে যাব অগ্রগতি জানার জন্য। এরপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পারভেজ সাজ্জাদ ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রার্থীদের অভিযোগ আমি মেইলে পেয়েছি। তারা যে বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন, তা সঠিক নয়। নিয়োগবিধি মেনেই এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। তবু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ (ইউজিসি) বিষয়টা তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

প্রার্থীদের অভিযোগ চুক্তিভিত্তিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অস্থায়ী কর্মচারীদের নিয়োগ দিতেই এমন আয়োজন এবং পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের ফলাফল কোথাও বা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করা হয়নি, এর উত্তরে উপাচার্য বলেন, ‘এটা সঠিক তথ্য নয়। আমরা বাংলাদেশ প্রতিদিন ও যেইলি অবজারভার পত্রিকায় ফলাফল প্রকাশ করেছি, যা অফিসে সংরক্ষিত আছে।’


সর্বশেষ সংবাদ