‘অলাভজনক’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর আরোপ, দ্বিধাদ্বন্দ্বে এপিইউবি

এপিইউবি
এপিইউবি  © লোগো

দেশের ‘অলাভজনক’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে বলে রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ। এ সংক্রান্ত একটি আপিল নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) বলছে, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর আরোপ কতটুকু গ্রহণযোগ্য রায়ের পরও সেই প্রশ্ন রয়েই গেছে। বিষয়টি নিয়ে তারা এখনও কনফিউজড (দ্বিধাদ্বন্দ্বে)। তবে পূর্ণাঙ্গ আদেশের জন্য অপেক্ষা করবে এবং সেই আদেশ রিভিউ করা যায় কিনা সে বিষয়টিও ভাববেন এপিইউবির নীতিনির্ধারকরা। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণও করবে এপিইউবি।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিচারপতি বোরহানউদ্দিনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশের পর রাতে সভায় বসে এপিইউবি। সভায় এপিইউবির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন ও সেক্রেটারি জেনারেল ড. আনিস আহমেদসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয়ে থাকে।

এদিকে বিদ্যমান ট্রাস্ট আইন-১৮৮২ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান করযোগ্য নয়।

তাহলে সরকার কেন এই কর দিতে হবে বলে রায় প্রকাশ? জানতে চাইলে সভায় উপস্থিত একজন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সভায় দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমরা বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করছি। এটাতো দীর্ঘ দিনের আলোচনা। তাই পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি এবং এটা রিভিউ করা যায় কিনা তা দেখবো।

সভা সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ট্রাস্ট আইনে এসব প্রতিষ্ঠান অলাভজনক। তবে এখন সেখানে কর আরোপ করা হয় সেটা চলে যায় লাভজনক প্রতিষ্ঠানে। যেটা ভারতসহ অন্যান্য দেশে আছে— লাভজনক এবং অলাভজনক দুটোই। যারা লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজের ঘোষণা করবে তারা সরকারকে কর দেবে আর যারা ট্রাস্ট আইনের অধীনে নিজেদের রাখবে তারা কর দেবে না। এরকম সারা বিশ্বে প্রচলন আছে। তাই আমরা এখন কনফিউশনে।

আমরা কি এখন তাহলে ট্রাস্ট আইনের অধীনে অলাভজনক নাকি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে যাবো? এগুলো আরও আলোচনার দরকার আছে।

তবে আমাদের কনসার্ন হচ্ছে, আমরাতো ট্রাস্ট আইনের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করি, সেক্ষেত্রে যদি কর দিতে হয় তাহলে অন্যান্য দেশে যেভাবে চলে সেভাবে চলতে হবে। সব ধরনের আইন তো আছে। সোসাইটি আইনও আছে, অন্য আইনও থাকতে পারে। এরই সঙ্গে ট্রাস্ট আইনও আছে।

“অন্যদেশে ক্লাসিফাই করে সেই অনুযায়ী চলে। ট্রাস্ট আইনে বলায় আছে যে, সেখান থেকে কোনো রিটার্ন বা ট্যাক্স হবে না। তাই একই সময়ে দুটো একসঙ্গে কিভাবে মেনটেইন করে চলা যাবে কিনা কিংবা আসলেই সেটা সম্ভব কিনা। এ নিয়ে আমাদের করণীয় কি। সরকারকে কিভাবে বুঝাবে সেগুলো আমাদের সভার আলোচ্য বিষয় ছিল।”

এদিকে, রায়ের বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস কে মো. মোরশেদ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ডেন্টাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে ট্যাক্স দিতে হবে। তবে কীভাবে এবং কখন থেকে ট্যাক্স দিতে হবে তা আদেশের পূর্ণাঙ্গ পাঠ প্রকাশের পর জানা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর সাদাত বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের তাৎপর্য এখনও প্রকাশ করা না হওয়ায় এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তাই এখনই বলা যাবে না যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোকে ট্যাক্স দিতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ