রাজনীতি নিষিদ্ধের পরেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে বুয়েটের ২ শিক্ষার্থী

বুয়েট-ছাত্রলীগ
বুয়েট-ছাত্রলীগ  © লোগো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। এরপর ১১ অক্টোবর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পরও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েছেন বুয়েটের দুই শিক্ষার্থী।

জানা যায়, পদ পাওয়া বুয়েটের দুই শিক্ষার্থী হলেন- হাসিন আজফার পান্থ ও ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম। পান্থ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ১৭তম ব্যাচের আহসান উল্লাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও রাহিম বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২১তম ব্যাচের তিতুমীর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। পান্থকে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও ইমতিয়াজকে সদস্য হিসেবে পদায়ন করেছে আওয়ামীলীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনটি।

আরও পড়ুন: ৩০১ সদস্যের কমিটিতে ৭১ জনই সহ-সভাপতি

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কাউকে যুক্ত করাকে নিয়ে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এটাকে ভালো চোখে দেখলেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এটাকে দেখছেন ভিন্ন চোখে। এই পদায়নকে বুয়েটে রাজনীতি নতুন করে প্রবেশ করানোর মাধ্যম হিসেবেও দেখছেন অনেকেই। এই পদায়নের মাধ্যমে নবীন শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে জড়াবে এবং পদের আশায় অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উদ্ভুদ্ধ করবেন। ফলে আগের মত রাজনীতির মহড়া শুরু হবে যার ফল আবরারের মৃত্যু মতই বলেও মন্তব্য অনেকের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বুয়েট শিক্ষার্থী বলেন, বুয়েটে যেখানে রাজনীতি নিষিদ্ধ সেখানে ছাত্রলীগ পদ দিয়ে এটা বুঝাতে চাচ্ছে যে তারা আবারও প্রথম সুযোগেই ক্যাম্পাস তাদের নিয়ন্ত্রণে নিবে। ক্যাম্পাসে রাজনীতি আসলে আবারও শুরু হবে র‍্যাগিং, শোডাউন, সিনিয়র ভাইদের অন্ধভাবে অনুসরণ- অনুকরণ করা, তাদের কথায় উঠবস করা, পড়াশোনা- ক্লাস বা দিয়ে রাস্তায় মিছিল করা। যেই ছাত্র রাজনীতির করুণ ফল আমরা ২০১৯ সালে আবরার ভাইয়ের মৃত্যুতে দেখেছি। সেই রাজনীতি আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে চাই না।

রাজনীতি নিষিদ্ধের পরেও বুয়েট শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগে কেন পদায়ন করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা সবাই জানি বুয়েট ক্যাম্পাসে সকল ধরণের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে এটা কোথাও বলা নাই যে বুয়েটের কোন শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতি করতে পারবে না। যেকেউ চাইলে ক্যাম্পাসের বাইরে রাজনীতি করতে পারবে।

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের নতুন পদে দায়িত্ব পেলেন যারা

তিনি আরও বলেন, আমরা যাদের পদায়ন করেছি তারা কেউ বুয়েটের ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছে এজন্য পদায়ন করিনি। এমনকি একজন তার উপজেলায় ছাত্রলীগের পোস্টেড ছিলো। দুজনই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে রাজনীতি করেছে। সে হিসেবে আমরা তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদে রেখেছি। তারা কেন্দ্রের হয়েই কাজ করবে বুয়েট ছাত্রলীগের হয়ে নয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদারকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর শিবির সন্দেহে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে আদালত বুয়েট ছাত্রলীগের ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। সে প্রেক্ষাপটে ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ