ঢাবির অঙ্কের ছাত্র সিরাজুল আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েছিলেন

সিরাজুল আলম খান
সিরাজুল আলম খান  © সংগৃহীত

সিরাজুল আলম খান ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনীতিবিদ। তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে গোপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেন। নিউক্লিয়াস ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের রাজনীতিতিতে সিরাজুল আলম ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। প্রথিতযশা এ রাজনীতিবিদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার (৯ জুন) দুপুরে মারা যান।

সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন, গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। স্থানীয় স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করে চলে যান বাবার কর্মস্থল খুলনায়। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন।

তারপর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার পর ‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণ করার কারণে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রতিদিন রাত করে হলে ফিরতেন। ফলে হল থেকেও একবার বহিষ্কৃত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় তার পক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি নেয়া সম্ভব হয়নি। সিরাজুল আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও ১৯৯৬-’৯৭ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের ওশকোশ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন।

এটিই আমেরিকার বিশেষত্ব যা বাংলাদেশে কল্পনাও করা যায় না। দীর্ঘ জেল জীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তার অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা। এই দক্ষতার স্বীকৃতি দিতে পেরেছে আমেরিকা। বাংলাদেশে পদার্থবিজ্ঞানে আন্ডারগ্রাজুয়েট করে তত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স করলেই পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা হারান। 

এই মানুষটিই ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতির নীতিনির্ধানীর অন্যতম নিয়ামক ব্যক্তিত্ব। জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করে বাংলাদেশীদের স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ’৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যে নিউক্লিয়াস গড়ে উঠে তিনিই ছিলেন তার মূল উদ্যোক্তা। 

স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে ‘জয় বাংলা’ সহ সকল স্লোগান নির্ধারণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে “...এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” বাক্যসমূহের সংযোজনের কৃতিত্ব ‘নিউক্লিয়াসে’র। এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিরাজুল আলম খানের ভুমিকা ছিল মুখ্য। অথচ এই মানুষটির জীবনের শেষ সময়টা কাটে অবহেলায়। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সংবাদ মাধ্যম কেউ তেমন খোঁজ খবর রাখেনি। 

আরও পড়ুন: তেজস্বী ছাত্রনেতা থেকে যেভাবে রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হয়ে উঠেন দাদা ভাই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা দেশের অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় পারতো তাকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিতে। শেষ বয়সের দিকে তাকে অধ্যাপক এমেরিটাস অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারতো। তাহলে হয়ত তার অনেক অব্যক্ত কথা নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে যেতে পারতো। কি সুযোগ আমরা হেলায় হারিয়েছি।

সিরাজুল আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও দীর্ঘ জেল জীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তার অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের ওশকোশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬-’৯৭ সনে। 

আর্থ-সামাজিক বিশেষনে সিরাজুল আলম খানের তাত্ত্বিক উদ্ভাবন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়। মার্কসীয় ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’র আলোকে বাংলাদেশের জনগণকে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী হিসাবে বিভক্ত করে ‘রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক’ মডেল হাজির করেছেন সিরাজুল আলম খান।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence