বাতিল হচ্ছে না শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ১০:০০ AM , আপডেট: ১৫ মে ২০২৫, ০৩:০০ PM

মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের খসড়ায় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের (এমএনএ ও এমপিএ) বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল থাকবে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সংশোধিত খসড়াটি অধ্যাদেশ হিসেবে অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জামুকার ৯৪তম সভায় মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনসহ বিদ্যমান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সংশোধন-সংক্রান্ত কার্যপত্রে অনুমোদন প্রদান করেন।
খসড়া আইন সংশোধন অনুযায়ী, শুধু মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার নয়, আরও চারটি শ্রেণির স্বীকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই চার শ্রেণির মধ্যে রয়েছেন— প্রথমত, বিদেশে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এবং আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী বাংলাদেশি পেশাজীবীরা। দ্বিতীয়ত, মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, কূটনীতিক ও অন্যান্য সহকারীরা। তৃতীয়ত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী, পাশাপাশি দেশ ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করা বাংলাদেশি সাংবাদিকরা। চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।
জানা গেছে, গত ৬ মে খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। তবে পরিষদ ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ সংজ্ঞা সংশোধনের প্রয়োজন মনে করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে তা পুনরায় সংশোধন করে উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রবাসী সরকার তথা মুজিবনগর সরকারের সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বহাল থাকবেন। এ ছাড়া খসড়ার অন্যান্য বিষয় ঠিকই আছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপিত হবে।
খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে বলা হয়েছে, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা অর্থ যাহারা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামেগঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিয়াছেন, এই রূপ সকল বেসামরিক নাগরিক উক্ত সময়ে যাহাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুক্তিবাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্স (ইপিআর), নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স এবং আনসার সদস্য, তাহারা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হইবেন।’
পরিবর্তিত সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘‘‘মুক্তিযুদ্ধ’ অর্থ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’’