ইসরায়েলের নৃশংসতাকে সমর্থন দিয়েছেন যেসব মার্কিন প্রেসিডেন্ট

কয়েকজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
কয়েকজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট  © সংগৃহিত

গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলছে। দশম দিনে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ২১৯ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন নারী ও শিশু। হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার ফিলিস্তিনি।

তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভূমিকার বিরুদ্ধে বাড়ছে ক্ষোভ। বাইডেন যেদিন ইসরায়েলের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের ঘোষণা দেন, সেদিনই আকাশ থেকে ফেলা ইসরায়েলের বোমায় নিহত হন একই পরিবারের ১০ জন, মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয় আল-জাজিরা ও যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এপির কার্যালয়ের ১১ তলার একটি ভবন। ধ্বংস করা হয় বেশ কিছু আবাসিক ভবনও।

তবে শুধু বাইডেনই নন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সময় অন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টদেরও শর্তহীনভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তা তুলে ধরেছে আল-জাজিরা।

জো বাইডেন

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবার হোয়াইট হাউস জানায়, নতুন করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সংঘাত শুরুর পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো কথা বলেছেন। হামাসের রকেট হামলা থেকে নিজেদের রক্ষার অধিকার প্রশ্নে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল ও দেশটির প্রধানমন্ত্রীর একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। ২০১৮ সালের মে মাসে গাজায় ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের হত্যার জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সমালোচনা নাকচ করে দেন তিনি। তাঁর সরকারের আমলেই যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হয়।

বারাক ওবামা

২০১৪ সালের জুলাইয়ে ১০ দিন ধরে গাজায় বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই হামলায় দেড় হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক শিশু। এরপরও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসরায়লের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেছিলেন, আত্মরক্ষার অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে রকেট হামলা কোনো দেশই মেনে নেবে না।

এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে শতাধিক নিহত হন। তখনো ওবামা বলেন, সীমান্তের ওপার থেকে নিজেদের জনগণের ওপর বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়া বিশ্বের কোনো দেশই সহ্য করবে না।

জর্জ ডব্লিউ বুশ

২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বরে গাজায় ‘অপারেশন কাস্ট লিড’ নামের সেনা অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, অভিযান শুরুর ২২ দিনে ইসরায়েল প্রায় ১ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ বেসামরিক নাগরিক। তখন ক্ষমতার শেষ সময়ে থাকা তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এ হত্যাযজ্ঞের জন্য ইসরায়েলকে নয়, উল্টো হামাসের ওপর দোষ চাপান।

এর আগে ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের রাজনীতিবিদ অ্যারিয়েল শ্যারনের জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ সফর ঘিরে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এতে সাত ফিলিস্তিনি নিহত হন। ওই ঘটনার পর ‘দ্বিতীয় ইন্তিফাদা’ আন্দোলন শুরু করেন ফিলিস্তিনিরা। সেই আন্দোলন রুখতে পরবর্তী সময়ে গাজা ও পশ্চিম তীরে বিমান হামলা ও স্থল আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলের বাহিনী। এতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৩ হাজার ফিলিস্তিনি ও এক হাজার ইসরায়েলি প্রাণ হারান। তৎকালীন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ ইসরায়েলের ওই অভিযানের সমর্থন না জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন এবং তৎকালীন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে শ্যারনের অস্বীকৃতিকেও সমর্থন করেন।

বিল ক্লিনটন

১৯৯৬ সালে লেবাননের কোনা শহরে জাতিসংঘের একটি ভবনে ইসরায়েল হামলা চালায়। এতে শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। আহত হন কয়েক শ মানুষ। যদিও ইসরায়েল জানায়, ভুল করে হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলার ১০ দিন পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ইসরায়েল-সমর্থিত লবি গোষ্ঠী আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটিকে (এআইপিএসি) দেওয়া বক্তব্যে ওই হামলার সমর্থন করেন।

রোনাল্ড রিগ্যান

১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ সময়কালে প্রথম ইন্তিফাদার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ, ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করেন। ওই আন্দোলন দমাতে নৃশংস হয়ে ওঠে ইসরায়েলি বাহিনী। তখনকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ইসরায়েলকে শক্তিশালী করতে বিশেষ কৌশল নেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তিসহ নানা বিশেষ সহায়তা দেওয়া হয় ইসরায়েলকে। তবে অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ ও তাজা গোলা ব্যবহারের জন্য চারদিকের সমালোচনার মুখে ১৯৮৮ সালে রিগ্যান প্রশাসন ইসরায়েলি বাহিনীকে নিন্দা জানায়।

এর আগে ১৯৮২ সালে আন্তসীমান্ত সংঘাতের সময় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে যে আগ্রাসন চালায়, তাতে কোনো ধরনের বাধা ও বিরোধিতা করেননি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান। এটা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তবে হামলার জন্য সবুজসংকেত দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।

রিচার্ড নিক্সন

১৯৬৭ সালে যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও মিসরের সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নেয় ইসরায়েল। সেই ভূমি পুনর্দখলে ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে মিসর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে কিছু আরব দেশ সামরিক অভিযান শুরু করে। অভিযানের মুখে ইসরায়েল যখন কোণঠাসা, তখন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ইসরায়েলকে অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র প্রদান শুরু করেন।

লিনডন বি জনসন

১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে মিসরে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এ সংঘাতে জর্ডান ও সিরিয়াও জড়িয়ে পড়ে। ইসরায়েল সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও মিসরের সিনাই উপদ্বীপের বেশির ভাগ এলাকা দখল করে নেয়। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিনডন বি জনসন ওই হামলার ঘটনার স্মৃতিচারণা করে ১৯৭১ সালে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর একটি নিবন্ধে ইসরায়েলের হামলার বিষয়টি আঁচ করতে পারার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

হ্যারি এস ট্রুম্যান

১৯৪৮ সালের ১৪ মে জিউশ এজেন্সির প্রধান ব্রিটিশ কলোনি ফিলিস্তিনে একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেন।


সর্বশেষ সংবাদ