টুইনটাওয়ার হামলা: আগাম বার্তা পেয়েছিলেন বুশ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৩০ AM , আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৩০ AM
২০০১ সালের গ্রীষ্মে অর্থাৎ ১১ই সেপ্টেম্বরের ঠিক আগে আগেই দেশের ভেতর বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি নিয়ে তৎকালীন মার্কিন সরকারকে বার বার হুঁশিয়ারি করা হয়েছিল। এতদিন পর সেকথা প্রকাশ করেছেন সাবেক ডেমোক্র্যাট সেনেটর গ্যারি হার্ট যিনি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন। সেনেটর হার্ট বলেন, নাইন-ইলেভেনের আগের মাসগুলোতে দেওয়া সেসব হুঁশিয়ারি জর্জ বুশ সরকার অবজ্ঞা করেছিল।
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর কজন কট্টর ইসলামপন্থী দুটো যাত্রী বিমান অপহরণ করে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে গিয়ে আছড়ে পড়েছিল- সে কথা হয়তো কারোরই অজানা নয়। ওই হামলার ৫০ মিনিট না যেতেই আরেকটি বিমান বিধ্বস্ত হয় ওয়াশিংটনে প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সদর দপ্তরের ওপর। অপহৃত চতুর্থ বিমানটি বিধ্বস্ত হয় ওয়াশিংটনের কাছে একটি মাঠের ভেতর।
আমেরিকায় ওই সন্ত্রাসী হামলা ছিল নজিরবিহীন। প্রায় ৩,০০০ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল সেদিন। হতভম্ব হয়ে পড়েছিল সারা বিশ্ব।
কিন্তু এ ধরনের হামলা হতে পারে, সে ব্যাপারে আগে থেকেই হুঁশিয়ারি ছিল। যে মানুষগুলো সেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তাদের একজন ছিলেন তৎকালীন ডেমোক্র্যাট সেনেটর গ্যারি হার্ট। যিনি জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক-ভিত্তিক এক তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি সম্পর্কে তাদের হুঁশিয়ারি অবজ্ঞা করেছিলেন জর্জ বুশের সরকার।
তিনি আরও বলেন, "আমি বা অন্যরা ঠিক জানতে পারিনি যে কোথা থেকে এই হামলা আসতে পারে, কিন্তু আমরা প্রায় নিশ্চিত ছিলাম যে খুব শীঘ্রি একটা হামলা হতে চলেছে।"
নাইন-ইলেভেন হামলার মাত্র আট মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকির ওপর একটি তদন্ত রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে ব্যাপক তদন্তের পর রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়। যে সরকারি কমিশন ঐ তদন্ত করেছিল তার যৌথ নেতৃত্বে ছিলেন সেনেটর গ্যারি হার্ট এবং রিপাবলিকান দলের ওয়ারেন রাডম্যান। ঐ কমিশন ২০টি দেশের একশ'র মত লোকের কাছ থেকে সাক্ষ্য প্রমাণ জোগাড় করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে এত বড় তদন্ত-পর্যালোচনা কখনো হয়নি। ঐ কমিশনে যুক্ত ছিলেন পররাষ্ট্র নীতি এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ে আমেরিকার সবচেয়ে খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞবৃন্দ।
যে উপসংহার তারা টেনেছিলেন তা ছিল খুবই ভীতিপ্রদ। গ্যারি হার্ট বলেন, "কমিশনের ১১ জন সদস্য তাদের তদন্তের বিশ্লেষণ করে মতামত দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র বিপদের মুখে রয়েছে। আমরা ঐ রিপোর্টে বলেছিলাম - এমন ঝুঁকি রয়েছে যার পরিণতিতে বিপুল সংখ্যক মার্কিন নাগরিক মারা যেত পারে।"
কিন্তু ঐ হুঁশিয়ারিকে সরকার কতটা গুরুত্ব দিয়েছিল? গ্যারি হার্ট বলেন, এমনকী সংবাদ মাধ্যমও ঐ তদন্ত রিপোর্টকে গুরুত্ব দেয়নি। সন্ত্রাসী হামলার আগাম হুঁশিয়ারিকে প্রেসিডেন্ট বুশ পাত্তা দেননি বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। "রিপোর্টটি চূড়ান্ত করার পর আমরা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। আমাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাঝেই একজন সাংবাদিক চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ান। তাকে প্রশ্ন করি- কেন তিনি আগেভাগে চলে যাচ্ছেন। তিনি উত্তর দেন 'এসব কিছুই ঘটবে না '।' ঐ সাংবাদিক নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার একজন সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন। "সুতরাং বলতে পারেন, মিডিয়া আমাদের ঐ রিপোর্টকে তখন পাত্তাই দেয়নি।"
ঐ কমিশন গঠন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন, কিন্তু ২০০১ সালে জানুয়ারিতে যখন ঐ কমিশন তাদের রিপোর্ট চূড়ান্ত করে প্রকাশ করে তখন হোয়াইট হাউজে নতুন সরকার। মাত্র ১১দিন আগে রিপাবলিকান জর্জ ডব্লিউ বুশ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন। কমিশন সিদ্ধান্তই নিয়েছিল নতুন প্রেসিডেন্ট যিনি হবেন, তার হাতে তারা তাদের রিপোর্ট এবং সুপারিশ তুলে দেবে। কিন্তু তা হয়নি।
সেনেটর গ্যারি হার্ট বলেন, "প্রেসিডেন্ট (বুশ) আমাদের সাথে দেখা করতেই রাজী হলেন না। আমরা ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড চেনির সাথে দেখা করার চেষ্টা করলাম। তাতেও আমরা ব্যর্থ হই।" তবে কমিশন নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের সাথে দেখা করেন। একইসাথে তারা প্রেসিডেন্ট বুশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কনডোলিজ্জা রাইসের সাথেও দেখা করেন।
ঐ রিপোর্টকে ঐ তিনজন কতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন? "দুই মন্ত্রী আমাদের কথা গুরুত্ব সহকারে শুনেছিলেন। তারা আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নও করেছিলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রামসফেল্ড নিজে তার নোটবুকে কিছু নোটও নিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর কোনো ব্যবস্থা তারা নিলেন না।"
বুশ প্রশাসন পরে বলে - সুনির্দিষ্ট নয় এমন কোনো হুঁশিয়ারিকে বিবেচনায় নেওয়া কঠিন। তারা বলেন, বিমান অপহরণ করে তা দিয়ে হামলা চালানো হবে এমন কোনো ইঙ্গিতই কমিশন দেয়নি।
কিন্তু ঐ গ্রীষ্মেই অন্য সূত্র থেকেও সন্ত্রাসী হামলায় বিমানের ব্যবহার সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছিল। ২০০১ সালের জুলাইতে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সে এফবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা মধ্যপ্রাচ্যের কজন নাগরিক, যারা তখন সেখানে বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, তাদের ব্যাপারে তদন্তের সুপারিশ করেছিলেন। পরের মাসেই ফিনিক্স থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে মিনেসোটায় এফবিআই জাকারিয়া মুসাভি নামে একজন ফরাসী নাগরিককে গ্রেপ্তার করে।
বিমান চালানোর কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ঐ ব্যক্তি বোয়িং ৭৪৭ চালানোর প্রশিক্ষণের আশায় স্থানীয় একটি ফ্লাইং স্কুলে হাজির হলে, এফবিআইয়ের সন্দেহ হয়। এফবিআইয়ের আইনজীবী কলিন রাউলিকে গভীর রাতে ফোন করে ঐ গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়। মুসাভির ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং কম্পিউটার পরীক্ষা করার অনুমতি জোগাড় করে দেওয়ার জন্য ঐ আইনজীবীকে ফোন করেছিল এফবিআই এজেন্টরা। কিন্তু পরে এফবিআইয়ের কর্তাব্যক্তিরাই এ নিয়ে অগ্রসর না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আইনজীবী কলিন রাউলি ঐ ঘটনা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেছিলেন। "আমাদের একজন সুপারভাইজার সদর দপ্তরে একজন কর্মকর্তাকে বলেছিলেন - তুমি কী বুঝতে পারছ না যে এই লোক (মুসাভি) এমন এক মানুষ যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিমান নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে। কিন্তু ঐ কর্মকর্তা জবাব দিয়েছিলেন- এমন কোনা ঘটনা কখনই হবে না।"
আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন। ১১ই সেপ্টম্বরের সন্ত্রাসী হামলার প্রধান হোতা বলে তাকে সন্দেহ করে আমেরিকা। জাকারিয়া মুসাভি পরে ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছিলেন।
কলিন রাউলি মনে করেন, এসব হুঁশিয়ারি সরকার তখন অগ্রাহ্য করেছিল কারণ সরকারের কেউই বিশ্বাসই করতে পারেনি এমন কোনো ঘটনা সত্যিই কখনো ঘটতে পারে।
কী বলেছিলেন সিআইএ প্রধান
তবে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর ভেতরে সন্দেহ দানা বাঁধছিল। ২০০১ সালে সিআইএর প্রধান ছিলেন জর্জ টেনেট। নাইন-ইলেভেন হামলার ১৪ বছর পর মার্কিন টিভি চ্যানেল সিবিএস-এ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ঐ বছর গ্রীষ্মে তাদের কাছে তথ্য প্রমাণ আসে যে আল কায়দা আমেরিকায় বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে। সিআইএর যে ইউনিট আল কায়দার ওপর নজরদারী করতো তার প্রধান রিচ প্লি ঐ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
"জুলই মাসের শেষ দিকে একদিন আমরা আমার কনফারেন্স রুমে বসে কথা বলছিলাম । কীভাবে এই হামলা হতে পারে, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল। তখন রিচ ব্লি বলেছিল - তারা (আল কায়দা) আমেরিকাতেই আসছে।" "তার ঐ কথা শুনে সবাই যেন স্থবির হয়ে পড়েছিল। সবাই হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল," সিবিএসকে বলেছিলেন জর্জ টেনেট।
তিনি জানান, প্রায় পরপরই তিনি কনডোলিজ্জা রাইসকে ফোন করেন। "আমি তাকে বলি- কনডি আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।। আমরা এখনই আসছি।" "তাকে বলি একাধিক হামলা হতে পারে । হামলার ধরন নাটকীয় হতে পারে। আল কায়দার উদ্দেশ্যই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করা। আমেরিকাকে এখনই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।"
কনডোলিজ্জা রাইস পরে বলেন, সন্ত্রাসী হামলার জন্য বিমান ব্যবহার হতে পারে, সে ব্যাপারে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট হুঁশিয়ারি পাননি। তিনি বলেন, হোয়াইট হাউজের কাছে প্রতিদিনই নানা বিষয়ে নানারকম হুঁশিয়ারি এবং পরামর্শ আসে। প্রেসিডেন্ট বুশও বলেন, তিনি এমন কোনো গোয়েন্দা রিপোর্ট দেখেননি যাতে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছিল।
তবে হোয়াইট হাউজ স্বীকার করেছিল যে ২০০১ সালের ৬ই আগস্ট প্রেসিডেন্টের কাছে দেওয়া এক ব্রিফে বলা হয়েছিল আমেরিকার ভেতরে হামলা চালাতে বিন লাদেন বদ্ধপরিকর।
গ্যারি হার্ট বলেন, যে কোনো সময় হামলা হতে পারে এই আশঙ্কায় জানুয়ারি মাসে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।
কিন্তু তার এই উদ্বেগের কথা তিনি কাকে জানিয়েছিলেন? "বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আমি আমার আশঙ্কার কথা বলেছি। সাক্ষাৎকারও দিয়েছি।"
বিশ্বাস করেনি হোয়াইট হাউজ
কিন্তু বুশ প্রশাসনের যুক্তি ছিল কখন, কোথায় এবং কীভাবে হামলা হবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো কথা কমিশনের রিপোর্টে ছিল না, এবং এ ধরনের নানা হুঁশিয়ারি হোয়াইট হাউজে প্রতিদিনই আসে।
সরকারের এই যুক্তি কি ফেলে দেওয়া যায়? এই প্রশ্নে গ্যারি হার্ট বলেন, "সুনির্দিষ্ট করে বলার কোনো উপায় তখন ছিল না। আমি কানাডার মন্ট্রিয়েলে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছিলাম । পরদিন সেখানকার পত্রপত্রিকায় খবরের শিরোনাম হয়েছিল - হার্ট আমেরিকাতে সন্ত্রাসী হামলা সন্দেহ করছেন।" সেটা সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকের কথা। পরপরই কনডোলিজ্জা রাইসের সাথে তার বৈঠক হয়। "আমি তাকে বলি অনুগ্রহ করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে প্রস্তুত করেন। আমাদের ওপর হামলা হতে চলেছে। সেটা ৬ই সেপ্টেম্বরের কথা।"
"কনডোলিজ্জা রাইস আমাকে বলেন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলবেন। ...পাঁচদিন পর তিন হাজার আমেরিকান মারা গেল।"
নাইন-ইলেভেন হামলার ওপর দ্বি-দলীয় যে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়, তারা ২০০৪ সালে বলেছিল - "নীতি, ব্যবস্থাপনা এবং দক্ষতায় বড় ধরনের ঘাটতি ছিল প্রশাসনে। গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ম পদ্ধতিতে ব্যাপক রদ-বদলের সুপারিশ করা হয়।"
যেভাবে টুইন টাওয়ারে হামলা
দিনটি ছিল মঙ্গলবার। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল ভর্তি আমেরিকান এয়ারলাইনসের বোয়িং-৭৬৭ উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর দিকের টাওয়ারে।
উড়োজাহাজটি ১১০ তলা ভবনটির ৮০তম তলায় ঢুকে পড়ে। হামলার সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন শত শত মানুষ, ভবনের ভেতরে আটকে পড়েন অসংখ্য মানুষ। ১৮ মিনিট পর সকাল ৯টা ০৩ মিনিটে দ্বিতীয় বিমানটি হামলা চালায়। ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ফ্লাইট ১৭৫-এর আরেকটি বোয়িং-৭৬৭ উড়োজাহাজ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ দিকের টাওয়ারের ৬০তম তলায় আঘাত হানে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টুইন টাওয়ারের উত্তর দিকের ভবনটি ভেঙে পড়ে। ভবনটি ধসে পড়ার সময় ভেতরে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে মাত্র ছয়জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়। প্রায় ১০ হাজার মানুষকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামলায় আল-কায়েদা
ধারণা করা হয়, হামলাকারীদের আর্থিক মদদ দিয়েছিল ওসামা বিন লাদেনের সংগঠন আল-কায়েদা। হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ এক বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে উড়োজাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। বাকিরাও নাইন-ইলেভেনের আগে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।
১৯ হামলাকারী সহজেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবেষ্টনী ফাঁকি দিয়ে ধারালো অস্ত্র নিয়ে উড়োজাহাজে ওঠেন। উড্ডয়নের পরপরই যাত্রীদের জিম্মি করে পাইলটদের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন হামলাকারীরা।
অর্থনৈতিক প্রভাব
হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। হামলার পর প্রথম দিনেই নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে বড় ধস নামে। এক মাসেই চাকরি হারান ১ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ। ধারণা করা হয়, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলায় আনুমানিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ক্ষতি হয়।
হামলার উদ্দেশ্য
১৯ জন হামলাকারীর সবাই ছিলেন সৌদি আরব এবং অন্য কয়েকটি আরব দেশের নাগরিক। বলা হয় সে সময়ের পলাতক ওসামা বিন লাদেন এ হামলার জন্য অর্থায়ন করেছিলেন। ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন, পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সামরিক উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে সংশ্লিষ্টরা এ হামলা চালিয়েছিলেন বলে বলা হয়।
হামলার পরিকল্পনা এবং পূর্ব উপকূল থেকে যাত্রা
হামলাকারীদের কয়েকজন এক বছরের বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছেন এবং কয়েকটি বাণিজ্যিক ফ্লাইং একাডেমি থেকে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। বাকি কয়েকজন হামলার কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। তাদের কাজ ছিল হামলাকারীদের শক্তিবৃদ্ধি করা। তারা সহজেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বক্স কাটার এবং ছুরি নিয়ে বিমানে উঠতে সক্ষম হন। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় তিনটি বিমানবন্দর থেকে ক্যালিফোর্নিয়াগামী চারটি বিমানে চেপে বসেন তারা। গন্তব্য হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়াকে বেছে নেয়ার কারণ একটাই, দীর্ঘ যাত্রার জন্য জ্বালানিপূর্ণ থাকে এসব বিমান।
প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ যোষণা
এ হামলা প্রচন্ড উদ্বেগ তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রে। নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশকে সারা দিনই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়। সন্ধ্যা সাতটায় হোয়াইট হাউজে ফেরেন তিনি। রাত নয়টায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা আমাদের সর্বোচ্চ ভবনগুলোর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিত কাঁপাতে পারে নি। এসব কর্মকান্ড ইস্পাত গলিয়ে দিতে পারে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ়তার যে ইস্পাত রয়েছে তাকে নয়”। সামরিক পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত তারা এবং যারা সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের মধ্যে কোন তফাত নেই”। যুক্তরাষ্ট্র তার ভাষায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী এক যুদ্ধ শুরু করে।