চীন-বাংলাদেশ যৌথ বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৬ PM , আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩২ PM

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে অটল থাকবে চীন। দুই দেশই পারস্পরিক স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান বজায় রাখার বিষয়ে একমত হয়েছে।
আজ শুক্রবার (২৮ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যৌথ বিবৃতির এই তথ্য জানান।
বিবৃতিতে জানানো হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনের বোয়াও ফোরামের মহাসচিবের আমন্ত্রণে ২৬ ও ২৭ মার্চ হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে ২০২৫-এ যোগ দেন। এরপর চীনা সরকারের আমন্ত্রণে ২৭ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত বেইজিং সফর করেন তিনি।
সফরকালে বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া বোয়াও ফোরামের ফাঁকে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং এবং উপরাষ্ট্রপতি হান ঝেং-এর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
এই বৈঠকগুলোতে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয় এবং বিস্তৃত ঐকমত্য গড়ে ওঠে। চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানানো হয় এবং সরকারের নেওয়া সংস্কার ও অগ্রগতির প্রশংসা করা হয়। এসময় উভয় পক্ষই কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব আরও সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক স্থিতিশীল ও ইতিবাচক ছিল বলে দুই দেশ একমত হয়েছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি মেনে চলার অঙ্গীকার করে দুই পক্ষ পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করবে বলে জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ‘এক চীন নীতি’ সমর্থন করে এবং তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানায় বাংলাদেশ।
দুই পক্ষই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রশংসা করে বাংলাদেশ চীনের অর্থায়নে নির্মিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর ইতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে। চীনও বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্পায়নে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেয়।
চীনা বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে মংলা বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্প ও চট্টগ্রামের চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চলে (সিইআইজেড) বিনিয়োগের পথ আরও প্রশস্ত করা হবে। দ্রুতই চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা শুরু হবে বলে যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চীনে আমসহ কৃষিপণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছে। চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য আরও অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
বন্যা পূর্বাভাস, নদী খনন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহযোগিতা বাড়াতে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে। বিশেষভাবে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের অংশ হিসেবে সংস্কৃতি, পর্যটন, গণমাধ্যম, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও যুব বিনিময় কার্যক্রম আরও জোরদার করার পরিকল্পনা নিয়েছে দুই দেশ।
বাংলাদেশ চীনের ইউনান প্রদেশে চিকিৎসা সেবার সুবিধার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।
‘সমান ভবিষ্যতের জন্য যৌথ সম্প্রদায় গঠনের’ ধারণার প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই), গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) ও গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ (জিসিআই)-এর গুরুত্বও স্বীকার করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ও জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ২০২৫ সালে উভয় পক্ষ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও বহুপাক্ষিকতার নীতিগুলোকে সমর্থন করবে বলে জানিয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে এবং পুনর্বাসন প্রচেষ্টায় সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সফরকালে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতাসহ সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্যসেবা এবং ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থ অনুবাদ ও প্রকাশনা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও চীনের জনগণের উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি চীনের নেতৃত্বকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।