বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার ঘটনা যেভাবে প্রকাশ করল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৯ AM , আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৪ AM

কলকাতা-সহ ভারতের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলা সংবাদপত্র 'আনন্দবাজার পত্রিকা', 'এই সময়', 'বর্তমান' থেকে শুরু করে ইংরেজি সংবাদপত্র, 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এ বাংলাদেশের বুধবার রাতের ঘটনাবলীর বিষয়ে প্রতিবেদন রয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তত্ত্বাবধানে 'ভেঙেপড়া' আইন পরিস্থিতির বিষয়ে যেমন বলা হয়েছে, তেমনই উল্লেখ করা হয়েছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ওই ভবনটির স্মৃতি-বিজড়িত ঐতিহ্যের কথাও।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় ধানমন্ডির ঘটনা সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তার শিরোনাম- মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে 'শিক্ষা' হাসিনাকে। প্রথম দুই অনুচ্ছেদে ঘটনার বিবরণের পর ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে-"গোটা দেশ সেই ধ্বংসযজ্ঞের টাটকা সম্প্রচার যখন অবাক চোখে দেখছে, ইউনূস সরকারের কোনও পুলিশ বা সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের কোনও সেনা জওয়ানকে দেখা যায়নি এসে সেই কাজে বাধা দিতে।"
"এই ধ্বংসযজ্ঞ চলার সময়ে, দেশছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগের কর্মীদের উদ্দেশে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় বলছেন, ধানমন্দির এই ছোট্ট বাড়িটি আমার মা তিলে তিলে অর্থ সঞ্চয় করে গড়েছিলেন। এই বাড়ি থেকেই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।"
"রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পরেও বাবা এই বাড়িতেই থেকে গিয়েছিলেন। কত রাষ্ট্রপ্রধান এই বাড়িতে পদার্পণ করেছেন। বিশ্বাসঘাতকেরা এই বাড়িতেই বাবা-মা-সহ গোটা পরিবারকে হত্যা করেছে।"
"আজ এই বাড়ি গুঁড়িয়ে শুধু আমাদের দুই বোনের স্মৃতিকে ধ্বংস করা হলো না, বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি প্রামাণ্য দলিলকে নষ্ট করল ইউনূসের বাহিনী।"
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঘটনা নিয়ে বাংলা সংবাদপত্র বর্তমানের প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তার শিরোনাম, 'নতুন বাংলাদেশ! গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বঙ্গবন্ধুর বাড়ি'। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- "জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে...', মধ্যরাতে স্লোগান তুলল 'নতুন' বাংলাদেশ। 'বুলডোজার মিছিল' করে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ৩২, ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন। শেখ হাসিনা তখন দিল্লিতে বসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বার্তা দিচ্ছেন সমর্থকদের।"
"বাংলাদেশে হাসিনা সরকার পতনের ছ'মাস পূর্তির দিনেই ঢাকায় মৌলবাদী নিশানায় শেখ মুজিবুর রহমান। তার দেশত্যাগের পরই বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়েছিল 'বিপ্লবী ছাত্র-জনতা।' বুধবার, ফের তাদের আক্রোশ আছড়ে পড়ল ওই বাড়িতে।" একইসঙ্গে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে কীভাবে আরও একবার 'অশান্ত' হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
বাংলা সংবাদপত্র 'এই সময়'-এর প্রথম পাতার অ্যাঙ্কর পোজিশনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে,- "ফের নিশানায় ৩২ নম্বর ধানমন্ডি! বাংলাদেশে আবারও প্রবল জনরোষ আছড়ে পড়ল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-বিজড়িত বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুরের পর উত্তেজিত জনতার একাংশ আগুনও লাগিয়ে দিল বাড়ির দ্বিতীয় তলার একাংশে। গভীর রাতে অ্যাকশনে নামল বুলডোজারও।পরপর দেওয়াল-পিলার গুঁড়িয়ে গেল নিমেষে।"
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,- "স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, উপস্থিত থাকলেও 'নীরব দর্শক'-এর ভূমিকা নেয় সেনা-পুলিশ। তার মধ্যেই উত্তাল স্লোগান- 'জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে'। একইসঙ্গে ওঠে 'জুলাই বিপ্লবে গণহত্যার দায়ে' ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিও!"
ইংরেজি সংবাদপত্র 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর ১২ পাতায়, 'প্রোটেস্টার্স টর্চ হোম অফ মুজিবুর ডিউরিং হাসিনাস অনলাইন স্পিচ' প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে- "বিক্ষোভকারীদের একটি বড় দল বুধবার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকাস্থিত বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং আগুল ধরিয়ে দেয় যে সময় তার কন্যা, পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনলাইনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।"
"প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানীর ধানমন্ডি যা স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, সেই অঞ্চলে সন্ধ্যা থেকে জড়ো হতে শুরু করেন। এর নেপথ্যে ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহ্বান জানানো 'বুলডোজার প্রসেশন' যার আয়োজন করা হয়েছিল রাত নটার সময় শেখ হাসিনার বক্তৃতার বিরুদ্ধে।"
"আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন, যা এখন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেই ছাত্র লীগের আয়োজনে হাসিনা ভাষণ দেন এবং সেখানে জাতিকে বর্তমান শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তলার আহ্বান জানান।"
শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের সময়ই ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ।
তার ভাষণের একটি অংশ উল্লেখ করে 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- "হাসিনা বলেছেন- জাতীয় পতাকা, সংবিধান এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হওয়ার মূল্য দিয়ে অর্জন করা স্বাধীনতাকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সাহস জোটাতে ওদের দম লাগবে।"
সূত্র: বিবিসি