আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেকেন্ড লেডি’ উষা, কে এই নারী?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৪২ AM , আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৪২ AM

আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে সঙ্গী হিসেবে জে ডি ভ্যান্সের নাম ঘোষণা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওহাইও রাজ্যের সেনেটর ৩৯ বছর বয়সী ভ্যান্স রিপাবলিকান দলের তৃণমূল সমর্থকদের কাছে পরিচিত নাম হলেও অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেন তার স্ত্রী। গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় ৩৮ বছর বয়সী উষা চিলুকুরি ভ্যান্স হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘সেকেন্ড লেডি।’
সোমবার (২০ জানুয়ারি) জেডি ভ্যান্স ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর উষা ভ্যান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সেকেন্ড লেডি’ হিসেবে তার স্থান গ্রহণ করলেন।
কে এই উষা ভ্যান্স?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মার সন্তান উষা চিলুকুরির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৮৬ সালের ৬ জানুয়ারি। ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সান ডিয়েগো শহরে জন্ম হয় তার। তার তেলুগু-ভাষী বাবা এবং মা ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের চিলাকালুরিপেতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
উষা চিলুকুরির বাবা ক্রিশ সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে একজন শিক্ষক এবং তার মা লাক্সমি, যিনি একজন মেরিন মোলকিউলার বায়োলজিস্ট, বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়েগোর সিক্সথ কলেজের প্রভোস্ট।
উষা ভ্যান্সের একাডেমিক সাফল্য তার বাবা-মার চেয়ে কম না, কিন্তু তিনি তাদের পথ অনুসরণ করে বিজ্ঞানের দিকে ঝোঁকেননি। বরং তার আগ্রহ ছিল হিউম্যানিটিএস-এর দিকে।
ইয়েল আর কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী
স্থানীয় পত্রিকা দ্য সান ডিয়েগো টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উষা ভ্যান্স ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম ইয়েল ইউনিভারসিটি থেকে ইতিহাসে ব্যাচেলর’স ডিগ্রি লাভ করেন।
এরপরউষা ব্রিটেনের শীর্ষ স্থানীয় বিদ্যাপীঠ কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে আধুনিক যুগের শুরুর দিকের ইতিহাসে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বিদ্যা অন্বেষণ সেখানেই থেমে যায়নি। পরে নজর দেন আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলার দিকে।
তিনি ফিরে যান ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে, যার ল’ স্কুল থেকে তিনি ২০১৩ সালে ডক্টর অফ ল’ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবিসি’র এক রিপোর্ট অনুযায়ী, একই সময় তিনি চীনের গুয়াংজুর সান ইয়াত সেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়েল-চীন টিচিং ফেল হিসেবে আমেরিকান ইতিহাস পড়ান।
ইয়েল ল’ স্কুলে পড়াশোনার সময়ই উষার পরিচয় হয় জে ডি ভ্যান্সের সঙ্গে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে।
টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জে ডি ভ্যান্স ২০১৯ সালে ক্যাথলিক ক্রিস্টিয়ান ধর্ম গ্রহণ করেন। তবে উষা ভ্যান্স তার পারিবারিক সূত্রে পাওয়া হিন্দু ধর্ম পালন অব্যাহত রাখেন।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জে ডি ভ্যান্স বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যেখানে তিনি তার স্ত্রীকে এক ‘শক্তিশালী কণ্ঠ’ এবং ‘অসাধারণ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
উষা ভ্যান্স ল’ স্কুল থেকে পাস করার পর ২০১৫ সালে একটি ল’ চেম্বারে কাজ শুরু করেন যাদের লস অ্যাঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিস্কো এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে অফিস আছে। চেম্বারের কাজের ফাঁকে তিনি প্রধান বিচারপতির দফতরে লিগাল ক্লার্কের কাজ করেছেন। সোমবার (১৫ জুলাই) ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তার সঙ্গী হিসেবে জে ডি ভ্যান্সের নাম ঘোষণার পর উষা ভ্যান্স চেম্বার থেকে ইস্তফা দেন।
ডেমোক্র্যাট থেকে রিপাবলিকান
যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যমতে, উষা চিলুকুরি ভ্যান্স ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট দলের সমর্থক হিসেবে রেজিস্টার করা ছিলেন। তবে ২০২২ সালে তাকে রিপাবলিকান দলের রেজিস্ট্রেশনে দেখা যায়, যে বছর তার স্বামী রিপাবলিকান টিকেটে ট্রাম্পের সমর্থনপুষ্ট হয়ে ওহাইও থেকে সেনেট নির্বাচনে জয়ী হন।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, জে ডি ভ্যান্স বিভিন্ন বিষয়ে তার মত প্রকাশ করেছেন, যেমন তিনি ইউক্রেনকে সাহায্য দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন, অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লিঙ্গ পরিবর্তনের ওপর নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেন, তিনি বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী নেতাদের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু উষা ভ্যান্স তার রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নিয়ে খুব একটা কিছু বলেন না।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে