তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প

এখনো নিখোঁজ ভলিবল দলের শিক্ষকসহ ৩৩ শিক্ষার্থী

ফামাগুস্তা তার্কিশ মারিফ স্কুল ভলিবল বালিকা দলের সদস্যরা
ফামাগুস্তা তার্কিশ মারিফ স্কুল ভলিবল বালিকা দলের সদস্যরা  © সংগৃহীত

গত সোমবারের ভূমিকম্পের সময় আদিয়ামান নগরীর ইসিয়াস হোটেলে অবস্থান করা তুরস্কের ফামাগুস্তা তার্কিশ মারিফ স্কুল ভলিবল দলের সদস্যরা ধসে পড়া হোটেলের নিচে চাপা পড়েছেন। সেখানে ছিলেন ফামাগুস্তা তার্কিশ মারিফ স্কুল ভলিবলের বালক ও বালিকাদের আলাদা দল ও তাদের শিক্ষকসহ মোট ৩৯ জন। এ খবর প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম দ্য সান।

গত সোমবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে সাততলা ওই হোটেলটি ধসে পড়লে হোটেলে অবস্থান করা সবাই তার নিচে চাপা পড়েন। এরই মধ্যে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের দুই শিক্ষক এবং অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর মৃতদেহ। আর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তাদের মধ্যে থাকা চারজন নিজেরাই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছে তাদের মধ্যে থাকা ৩৩ জন।

সেখানে মৃতদের মধ্যে প্রথমে দুই শিক্ষক ও পরে এক শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার হয় গত বুধবার। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বিবিসি তুর্কি। উদ্ধার অভিযান চলছে বাকিদের সন্ধানে।

স্থানীয় একজন নারী জানিয়েছেন, তার ভাতিজি ১২ বছরের নেহির সঙ্গে তার আদিয়ামানের বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু ভূমিকম্পের আগের রাতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে সে হোটেলে গিয়েছিল। নেহির বালিকাদের ভলিবল দলের সবথেকে কনিষ্ঠ সদস্য। এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি তাকে।

সেখানে থাকাদের মধ্যে বেঁচে যাওয়া একজন শিক্ষক জানান, যখন ভূমিকম্প শুরু হয় তারা জেগেই ছিলেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে  তার মেয়েও। 

এদিকে গত সোমবারের ৭ দশমিক ৮ ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৭১৯ জনের। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তুরস্কে মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪২ জনের। একই ঘটনায় সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৩৭৭ জনের। 

যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ঐ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। তীব্র ঠাণ্ডা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি না থাকাসহ নানা কারণে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা। এর মধ্যেই বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা নেমে হিমাঙ্কের কাছাকাছি চলে গিয়েছে। এঘটনায় এখন পর্যন্ত আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে এ ভূমিকম্প হয়। কম্পন অনুভূত হয়েছে প্রতিবেশী সিরিয়া, লেবানন ও সাইপ্রাসেও।

এএফএডির কর্মকর্তা ওরহান তাতার জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ৫৭৭৫টি ভবন ধ্বংস হয়েছে, এ পর্যন্ত ২৮৫টি পরাঘাত হয়েছে এবং সব-মিলিয়ে ৪০ হাজান জন আহত হয়েছেন।

আর তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়েছে ১৩৭৪০ জন উদ্ধারকর্মী এবং ৪১ হাজারেরও বেশি তাঁবু, এক লাখ বিছানা ও তিন লাখ কম্বল পাঠানো হয়েছে দুর্গত এলাকাগুলোতে।

জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) বলছে, স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি শুরু হয়ে প্রায় এক মিনিট স্থায়ী হয়। এর উৎপত্তি গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার (১১ মাইল) গভীরে।

অন্যদিকে জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্স (জিএফজেড) বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তি তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কাহরামানমারাসের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) গভীরে। সুনামির সম্ভাবনা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে বলে ইএমএসসি মনিটরিং সার্ভিস জানিয়েছে।

আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা করছে, মৃতের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সংস্থার কর্মকর্তাদের অনুমান, নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে। এই ভূমিকম্পে মোট দুই কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। বিভিন্ন দেশকে দ্রুত দুর্যোগ অঞ্চলে সাহায্য পাঠানোর আহ্বানও জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। 

ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা ও দেশটির অন্যান্য শহরের পাশাপাশি পুরো অঞ্চল-জুড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলেছে, স্থানীয় বাসিন্দারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তুষারে ঢাকা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছেন ভূমিকম্পের তীব্রতায়। ভূমিকম্পে বহু ভবন ধসে পড়েছে আর এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপে বহু মানুষ আটকা পড়েছে বলেও খবর আসছে।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হতাই, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাটিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস-এই ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভূমিকম্পে আলেপ্পো প্রদেশে বহু ভবন ধসে পড়েছে। আর দেশটির হামা প্রদেশের বেসামরিক পরিষেবার একটি সূত্র রয়টার্সকে বলছে, সেখানেও বেশকিছু ভবন ধসে পড়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ