বিশ্বের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি গবেষণা ও গবেষণা প্রবন্ধ

লেখক
লেখক  © টিডিসি ফটো

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। অথচ সারা বিশ্বের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি হলো গবেষণা এবং গবেষণা প্রবন্ধ। এই জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন এক বিশাল হৈচৈ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এই সমিতির নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে আর এর মাধ্যমেই বড় দুটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ইঞ্জেক্ট করে। এর প্রভাব পরে শিক্ষক নিয়োগ, প্রমোশনে।

আরও পড়ুন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি ঢাবি শিক্ষক সমিতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন সামনে। গত বেশ কয়েক বছর ধরে নীলদল জয়ী হয়ে আসছে। নীলদল মানে সরকারি দল। প্রশ্ন হলো গত ১ বছর এই শিক্ষক সমিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নে কি সামান্য ভূমিকাও রেখেছে? ছাত্ররা যে হলে মানবেতর জীবন যাপন করে শিক্ষকদের নেতা হয়ে তারা কি সরকারের কাছে কখনো দাবি জানিয়েছে আমাদের ছাত্ররা এইরকম মানবেতর জীবন যাপন করতে পারে না।

পৃথিবীর কোথাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এত নিম্নমানের জীবন যাপন করে না। এত নিম্নমানের পরিবেশে থেকে পড়াশোনা হয় না। এই শিক্ষার্থীদের বাবা-মা তাদের আদরের সন্তানদের আমাদের জিম্মায় দিয়েছে। তাদের উপর আমাদের দায়িত্ব আছে। তারা নেতা। সাধারণ শিক্ষকদের চেয়ে তাদের অনেক বেশি দায়িত্ব।

তারা যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০০ সাধারণ শিক্ষকদের ডাক দিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে দাবি জানাতো যে করেই হোক শিক্ষার্থীদের এই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে এইরকম একটা মানবিক দাবি জানালে বাংলাদেশের কোন সরকারের ক্ষমতা নেই, এই দাবি অবহেলা করে।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন দক্ষিণ এশিয়াতে সর্বনিম্ন। সকল শ্রেণীর শিক্ষকদের বেতন দক্ষিণ এশিয়াতে সর্বনিম্ন। অথচ দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে বাসা ভাড়া সবচেয়ে বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়। গত ১ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা কি শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নে কোন ভূমিকা রেখেছে? জাতীয়ভাবে শিক্ষায় জিডিপির ন্যূনতম ৫.৫% বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ হলো ৮০০ কোটি টাকার মত যা পৃথিবীর যেকোন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের বাজেটের চেয়েও কম। আমাদের শিক্ষক সমিতির নেতারা কি কখনো সরকারের কাছে দাবি করেছে ন্যূনতম যেন ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি অথচ সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে এত অবহেলা। এই শিক্ষক সমিতির নেতারা পারতো সকল শিক্ষকদের নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্পেশাল বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য। এই দাবিকে বাংলাদেশের কোন সরকারের সাধ্য নাই অবজ্ঞা করার।

আমাদের সরকারেরাও অনেক চতুর। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এইজন্যই রাজনীতি ইঞ্জেক্ট করে যেন শিক্ষকরা কোন দাবি না করে। যেন তারা অন্ধের মত কেবল সরকারের গুণগান গায় আর অন্যদের গুণগান করতে উদ্বুদ্ধ করে। যেন শিক্ষার্থীরা কোন দাবি না করে। এই দিক দিয়ে সরকার সফল।

মনে রাখতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান যত খারাপ হবে দেশের সকল ক্ষেত্রে সকল কিছু পরিচালনার দক্ষতার মান তত খারাপ হবে। দেশের নেতৃত্বে মান খারাপ হবে। যার প্রতিফলন সর্বত্র। আমরা এখনো রাস্তায় শৃঙ্খলা আনতে পারলাম না। এখনো স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করতে পারলাম না। একটি জ্যামমুক্ত শহর বানাতে পারলাম না। সর্বত্র চুরি চামারি ঘুষ দুর্নীতি। এইসব সমস্যার মূল কারণ শিক্ষার মানের অভাব।

যেই সরকারেরা শিক্ষা ও গবেষণাকে উৎসাহিত না করে রাজনীতি করতে উৎসাহিত করে তারা কতটা দেশপ্রেমিক আর কতটা স্বার্থপর এইটা বুঝতে খুব বেশি জ্ঞানী হওয়া লাগে? 

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ