বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের শুরুর ক্লাসকে কেন ওরিয়েন্টেশন বলা হয়?

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন   © ফাইল ছবি

আজ বিভাগে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম। অর্থাৎ আজ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ক্লাস করা শুরু করবে। শুরুর এক সপ্তাহের কিছু বেশি দিন ধরে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস হবে। কেন এটাকে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস বলা হয়? এর প্রযোজনীয়তা কী? স্কুল-কলেজে ১২ বছরের আনুষ্ঠানিক দীর্ঘ জার্নি শেষে এখন একটা বড় পরিসরে এসে পড়েছে। 

স্কুল কলেজে পাঠ্য বই থাকে। বইগুলোর একটা আনুষ্ঠানিক সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে এবং এসব সীমানা দেশভেদে পার্থক্য হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক বলতে কিছু নেই। তবে রেফারেন্স বই আছে। যে শিক্ষক যে বিষয়ে পড়ান তার একটা গাইড হিসাবে ছোট একটা লিস্ট রেফারেন্স বই হিসাবে দেয়।

এর অর্থ এই না, শিক্ষার্থী এর বাইরের কোনো বই পড়তে পারবে না। বরং আমরা উৎসাহিত করি এর বাইরেও যেসব বই আছে সেগুলোও দেখুক, পড়ুক এবং ভালো লাগলে ওই বইই পড়ুক। সারা পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম প্রায় একই কিন্তু শিক্ষক আলাদা, বই আলাদা, পড়ানোর ধরন আলাদা, ভাষা আলাদা হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়াই একজন মানুষকে বৈশ্বিক বানিয়ে দেয়।  

এই যে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ট্রানজিশন, এটাকে স্মুথ করার জন্য ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা, পরিবেশ, যে বিষয় পড়তে এসেছে- সে বিষয়কে ভালোবাসতে উৎসাহিত করতে তাদের মননকে ঘুরিয়ে দিতেই ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। আমাদের দেশে একটা মিথ আছে, বিশ্ববিদ্যালয় মানে আঙুলের চিপায় একটা খাতা কিংবা দুইটা কাগজ পকেটে ঢুকিয়ে ক্লাসে আসা বা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে হয় না। কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় মানে সারা বছর চিল করা কেবল পরীক্ষার আগে ১৫ দিন পড়লেই হয়। এ চিন্তাকে ঘুরিয়ে দিতেই ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। 

আরো পড়ুন: মানহীন নিয়োগ দিয়ে ধারণা তৈরি করা হয়েছে, শিক্ষকরা ভালো না

আমার সময় (১৯৮২-৮৩ সালে) দুই মাসব্যাপী ওরিয়েন্টেশন ক্লাস হয়েছিল। আমাদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস নিয়েছিলেন তৎকালীন বিভাগ তথা বাংলাদেশের সেরা সেরা সব শিক্ষক। ৩+১=৪ বছরের ছাত্রকালীন সময়ের পুরোটাজুড়ে যত ক্লাস করেছি, তার অনেক কিছুই আজ মনে নেই। কিন্তু সেই ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের স্মৃতি মুছে যায়নি। স্যারদের কথাগুলো আজও মনে পড়ে। সুতরাং ওরিয়েন্টেশন ক্লাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আজকে সকাল ১০টায় বিভাগের সব শিক্ষক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের একটা প্রোগ্রামের মাধ্যমে ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের শুরু হবে। আমি আশা করব, আগামী ৪ বছর কিংবা অনেকের জন্য ৫ বছর এ বিভাগে আমাদের সাথে তোমাদের অত্যন্ত ভালো একটা সময় কাটবে। তোমাদের এ বয়সটাই হলো তোমাদের জীবনের শ্রেষ্ট সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে আমাদের চরম সৌভাগ্য যে একটা মানুষের তার জীবনের শ্রেষ্ট সময়ের ৫টি বছর আমাদের সঙ্গে কাটায়। 

আজকের তুমি আর ৫ বছর পরের তুমি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি মানুষ হবে। কারণ জ্ঞান আহরণের হার এ সময়েই সবচেয়ে বেশি। এই সময়টাকে যারা সবচেয়ে বেশি কাজে লাগাতে পারে, সেই জীবনে সবচেয়ে বেশি সফল হবে। তোমরা সফল হলে আমরা সফল। তোমরা আর আমরা সফল মানে বাংলাদেশ সফল হবে। এজন্য আজকে নবীন শিক্ষার্থীরা যতটা উদ্দীপিত, আমি নিজেও ততটাই উদ্দীপিত।

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)


সর্বশেষ সংবাদ