এরা চাকরির পরদিনই ঘুষ-দুর্নীতি করে প্রশ্ন কেনার টাকা ওঠাতে লেগে যাবে 

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন  © সম্পাদিত

যে বিসিএস পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়ে বিভাগের লেখাপড়া বাদ দিয়ে বিসিএস পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্যিকারের লেখাপড়াকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে, সেই বিসিএস পরীক্ষার এখন যে রোমহর্ষক দুর্নীতির কাহিনী শুনে মনে হচ্ছে, ওদের অনেকেরতো আমও গেল ছালাও গেল। কি ভুলের মধ্যে ছিল আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়তে যাওয়ার জন্য ভোর-সকালে লাইন দিতে দেখতাম। পুরো লাইব্রেরি থাকতো বিসিএস চাকরিপ্রত্যাশীদের দখলে। সেখানে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে জায়গা পেত না। আর এখন পিএসসির অধীনে নানা চাকুরীর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের রোমহর্ষক কাহিনী শুনছি। সৎ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কি পরিমান প্রতারণা করা হয়েছে ভাবুনতো। 

কোনও একটি দু’টি পরীক্ষা না। গত এক বছর দু’বছরের ঘটনা না। ৩৩তম বিসিএস থেকে ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষা ধরে এ প্রশ্নপত্র ফাঁস ঘটে চলেছে। ভাবতে পারেন কত শত কর্মকর্তা প্রশ্ন ফাঁস দিয়ে চাকরি পেয়েছে? এরাতো চাকরি পাওয়ার পরদিন থেকেই লেগে যাবে, প্রথমে প্রশ্ন কেনার টাকা ওঠাতে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে। আর একবার শুরু করলে এর মাত্রা কেবল বাড়বেই। দেশে যে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে, তার পেছনে এটিও একটি বড় কারণ। 

তাহলে এ থেকে মুক্তির উপায় কি? কোন সহজ-সরল উপায় নাই। কঠোর সব পদক্ষেপ ছাড়া এ থেকে উত্তরণের কোনও পথ খোলা নেই। এ ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণকে কাজে লাগানো যেতে পারে। সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা তার এক পোস্টে এটি তুলে ধরেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ২০১৮ সালের দিকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার অভিযোগের সত্যতা সামনে আসে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন খুব কঠোর একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা এটা নিশ্চিত করেছিল— যে বা যারা এ প্রক্রিয়ায় ভর্তি হয়েছিল, সেসব শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে তাৎক্ষনিক ৮৭ জনকে বহিস্কার করা হয়েছিল। 

তাদের অনেকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, এমনকি চতুর্থ বর্ষে এসেও বহিস্কৃত হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে জনসাধারণের কাছে যে বার্তাটা গেছে তা হলো, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে ঢাবিতে ভর্তি হতে পারলেও একদিন না একদিন সেটা প্রকাশ পাবে এবং সেদিন বহিস্কৃত হতেই হবে। 

আরো পড়ুন: ফাঁস হয়েছিল ৪৬তম বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন, আশ্বাস ছিল লিখিতের

ঠিক একইভাবে পিএসসির  ফাঁসকৃত প্রশ্ন পেয়ে যারা যারা চাকরি পেয়েছে, তাদেরকেতো চিহ্নিত করে তাদেরকে শুধু চাকুরিচ্যুত না বরং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের তালিকা করে প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত কর্মচারী ও অফিসারকে  চিহ্নিত করে তাদেরকে চাকুরিচ্যুত শুধু না, রাষ্ট্রীয় আইনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। 

এ সিদ্ধান্তের কোনও বিকল্প নেই। পিএসসি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ সবাইকে এ বিচারের আওতায় আনতে হবে। মগের মুল্লুক পেয়ে গেছিল। প্রশ্ন ফাঁসের পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়ে ঘুষ দুর্নীতি আর রাষ্ট্রীয় নানা সুবিধা নিয়ে দেশটাকে হায়েনার মত খামচে ধরেছিল।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)


সর্বশেষ সংবাদ